চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

পৌষপার্বণের উৎসবে মুখর চট্টগ্রাম কলেজ

আশরাফুন নুর

২৫ জানুয়ারি, ২০২০ | ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

পৌষ মাস এলেই ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের কবিতার কথাই মনে পড়ে। তিনি তার ‘পৌষ পার্বণে’ কবিতায় পৌষ পার্বণের এই উৎসবের যে বর্ণনা পাই তা শুনলেই পিঠার লোভ সামলানো দায়। তিনি লিখেছেনÑ “আলু তিল গুড় ক্ষীর নারিকেল আর/ গড়িতেছে পিঠেপুলি অশেষ প্রকার/ বাড়ি বাড়ি নিমন্ত্রণ, কুটুম্বের মেলা/হায় হায় দেশাচার, ধন্য তোর খেলা।”

গ্রাম বাংলার পিঠা বানানোর আয়োজন ঠিক তেমনই। খুব উৎসবমুখর পরিবেশে পিঠা তৈরি হয়। বছরব্যাপী তৈরি হলেও পিঠা বানানোর মৌসুম আছে। গ্রাম বাংলায় পৌষ মাসে নতুন চালের গুঁড়ায় পিঠা তৈরি হয়, এই উৎসবকে বলে ‘পৌষপার্বণ’।

কথায় বলে পৌষপার্বণের পিঠা উৎসব। এ উৎসব একান্তভাবেই বাঙালির উৎসব। শীত-গ্রীষ্মের সকালগুলো মুখর ও আনন্দময় হয়ে ওঠে নানা রকম পিঠার অনন্য স্বাদে। কিন্তু বর্তমানে নানা ধরণের ফাস্ট ফুডের জোয়ারে আমরা গ্রাম বাংলার পিঠার কথা ভুলতেই বসেছি।
আবহমান বাংলার এ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ‘শীতের হাওয়ায় লাগল নাচন আমলকিরই ডালে ডালে, পাতাগুলি শিরশিরিয়ে ঝরিয়ে দিল তালে তালে’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম কলেজ বাংলা বিভাগের উদ্যোগে ‘পৌষপার্বণ ও পিঠা উৎসব ১৪২৬’ উদ্যাপন হয়েছে।
পৌষের শেষে নেমে এসেছে কনকনে শীত। এই শীত উপেক্ষা করে ছাত্রীরা বর্ণিল শাড়ি ও শাল আর ছাত্ররা পাঞ্জাবি পরে হাজির হয়েছে কলেজ ক্যাম্পাসে। কলেজের মুক্তমঞ্চের পৌষপার্বণ উৎসবে শিক্ষক শিক্ষার্থীর ঢল নেমেছিল। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে না হতেই পৌষপার্বণ উৎসবে যেন রূপ নিল মেলায়। যার যার রুচিমতো পিঠ-পুলি ও মুড়িমুড়কি খাচ্ছে ঘুরে ঘুরে দল বেঁধে।
গত সোমবার (১৩ জানুয়ারি) কলেজের মুক্তমঞ্চে বাহারি শীতের পিঠা ও বারোয়ারি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের এই ব্যতিক্রমী আয়োজনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয় কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।

কলেজ বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. নূরুজ্জামান বলেন, এই পৌষপার্বণ উৎসবের মধ্য দিয়ে আমাদের কর্ম ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার চাপের মাঝখানে আমরা তাদের (শিক্ষার্থী) আনন্দ দিতে চেয়েছি। সে আনন্দটি দিতে গিয়ে আমাদের গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে আমরা তাদের সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং আনন্দ দিতে চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, আমরা এ বছর থেকে এই উৎসবের যাত্রা শুরু করেছি এবং আশা করি প্রতি বছর এ উৎসব করব। উৎসবে গরম গরম ভাপা পিঠা খাওয়ার আনন্দ প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. নূরুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী ও বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো. কাবির উল হাসান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাহারি পিঠা দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করা হয়। কলেজের মুক্তমঞ্চের পাশে বাংলা বিভাগের অনার্সের চার বর্ষের তত্ত্বাবধানে চারটি পিঠা স্টল তৈরি করা হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দ মতো পিঠ খাচ্ছে এ স্টলগুলো থেকে এমনকি শিক্ষকরাও স্টল ঘুরে ঘুরে পছন্দ মতো পিঠা খাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। পিঠার মধ্যে ছিল দুধপুলি, দুধ চিতই, ক্ষীর পুলি, পাটিসাপটা, ভাঁপা পিঠা ম্যারা পিঠা, নকশী পিঠা, শীম ফুল, কুলি পিঠা, ঝাল পিঠা, পাতা পিঠা, বল পিঠা, ছোট পান পিঠা, জাল পিঠা, সুজি পিঠা, নারিকেল পুলি পিঠা, সাজ পিঠা।
উৎসবে প্রায় এক ঘন্টার সময়ের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছিল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে প্রথমে কবিতা ও গানের আসর অনুষ্ঠিত হয়। পরে মুখাভিনয়, ম্যাজিক প্রদর্শন এবং সর্বশেষ ছিল পৌষপার্বণের নৃত্যনাট্য।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট