চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

তারেক মাসুদ আমার চলচ্চিত্র অভিজ্ঞতা

ড. মহীবুল আজিজ

৩ জানুয়ারি, ২০২০ | ৩:১০ পূর্বাহ্ণ

১৯৬৬ সালে আমি প্রথম সিনেমা দেখি। বাবা’র চাকুরিসূত্রে আমরা তখন কুমিল্লানিবাসী। দীপিকা সিনেমাহলে দেখতে গিয়েছিলাম ‘মালা’Ñ সম্ভবত উর্দুতে ছিল সেই ছবি। চার বয়েসি আমার বহুকাল মনের মধ্যে ভিড় করে ছিল অনেক-অনেক সাপ, অন্ধকার আর কেউ যেন সুরেলা বাঁশি বাজিয়েই চলেছে। আর চোখের সামনে এবং চোখ মুঁদলেও দেখি যে বাঁশি বাজায় সে এক নারী। পরে, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে চট্টগ্রামের আলমাস সিনেমাহলে আমার জীবনের দ্বিতীয় পর্বের চলচ্চিত্র-অভিজ্ঞতার শুরু। একসময় সিনেমাটা এমন নেশা-ধরানো হয়ে পড়ে, আমরা স্কুলের বন্ধুরা স্কুল পালিয়ে কিংবা স্কুল থেকে ফেরার পথে হলে ঢুকে পড়তে থাকি। লালদীঘির পাড় পেরিয়ে আমাদের সেই স্কুলের কাছাকাছি কয়েকটা হল ছিলÑ রঙ্গম, খুরশিদমহল এবং সিনেমাপ্যালেস। আরও খানিকটা হেঁটে গেল জলসা কিংবা নূপুর। মনে পড়ে সিনেমাপ্যালেসে ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’ শুরু হয়ে যাওয়ার পাঁচ মিনিট পরে হলে ঢুকে সিটে বসতে গিয়ে লোকজনের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি। রাজ্জাক-কবরীর ‘স্বরলিপি’ দেখেছিলাম খুরশিদমহলে। সিনেমা’র আরেকটা আকর্ষণ ছিল পরবর্তী ছবির ট্রেলার। দেখেছি, বাড়ি ফিরে আসবার অনেককাল পরেও মনের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে থাকে চিত্রÑ চলমান এবং টুকরো-টুকরো ভেসে বেড়ানো। কেমন যেন এক ঘোরের জগতে নিয়ে যেতে থাকে। ‘স্বরলিপি’তে নায়ক রাজ্জাকের বন্ধু কৌতুকাভিনেতা রঙ্গিলা হেসে-হেসে বলছে, “দোস্ত হামাকে কিন্তু একটা গান লিখে দিতে হোবে।” সম্ভবত ১৯৬৯/৭০ সালে ঢাকা’র বলাকা’য় দেখি রাজ্জাক-কবরী অভিনীত ছায়াছবি ‘অধিকার’। সেখানে হয়তো কৌতুকাভিনেতা রানু এবং খান জয়নুলও ছিল। এখনও এই এতটা কাল পরেও যেন দেখতে পাই টুকরো-টুকরো চিত্রÑ ‘অধিকারে’র। কে যেন তাজা মাছ হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর একটা রোগা-পটকা লোক সোৎসাহে ব্যায়াম করেই চলেছে স্বাস্থ্যবান হওয়ার সুপরিকল্পনা নিয়ে। সেই সঙ্গে গানের সমান্তরাল উদ্দীপনাÑ ছোলা খাও আর ব্যায়াম করোÑ এরকম কোন পঙ্ক্তি সেখানে ছিল যেখানে সাফল্যের সঙ্গে শারীরিক কসরতের যোগাযোগের বিষয়টা গুরুত্ব পেয়েছিল। শৈশব থেকে শুরু করে সমগ্র স্কুল জীবনটাকে হিসেবে ধরলে উর্দু-বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে ডজন-দুয়েক সিনেমা আমি সম্ভবত হলে দেখেছি। হয়তো দুয়েকখানা হিন্দি সিনেমাও দেখি। প্রকৃতপক্ষে হিন্দি সিনেমা বিস্তর দেখতে শুরু করি অনেক পরে এসে, বিশেষত ভিসিআর-ভিসিপি’র কল্যাণে। সেটা আশি’র দশকের কথা।
পিতা’র উৎসাহ না থাকলে হয়তো সেই শৈশবেই আমরা ভাইবোনেরা সিনেমাহলের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হতে পারতাম না। একসময়কার সরকারি চাকুরে এবং পরে আইনব্যবসায়ে স্থিত আমার পিতা ছিলেন মনে-প্রাণে ধার্মিক একজন মানুষ কিন্তু ধর্ম সম্পর্কে কখনই তাঁকে উচ্চকিত হতে দেখি নি। তিনি ছিলেন আরবি, ফারসি এবং ইংরেজিতে পারদর্শি। ড্রইংরুমের আলমারিতে পুরু সব আইনগ্রন্থের মাঝখানে জালালুদ্দিন রুমি’র ‘মসনবি’Ñ বাবা ফারসি ভাষায় পড়তেন রুমি’র কাব্য। আমরা দু’ভাই ঘরে মওলানা সাহেবের কাছে আরবি-ফারসি পড়তাম এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত আমি আরবি-ফারসি শিখি সমান্তরালে। আরবি তো পারিবারিক-সামাজিক প্রথার নিয়মেই প্রাসঙ্গিকতা পায় কিন্তু ফারসি’র গুরুত্ব কেবল পিতা’র ব্যক্তিগত রুচি-মর্জির সূত্রেই যেমনটা তাঁর সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে হলে গিয়ে সিনেমা দেখা। আমি টিভি দেখি প্রথম ১৯৬৮ সালে ঢাকায় নানাবাড়িতে। চট্টগ্রামে আমাদের ঘরে টিভি কেনা হয় ১৯৭৫-এ। তখন বিটিভিতে এ-সপ্তাহের নাটক এবং ছায়াছবি দেখানো হতো। ভাবা যায়, গোটা পরিবার এবং আশেপাশের লোকজন এক অবিভাজ্য দর্শকগোষ্ঠি হয়ে পলকহীন চোখে তাকিয়ে রয়েছে টিভি-পর্দার দিকে। কোন এক ফাঁকে হয়তো বাবা এশা’র নামাজও পড়ে এসেছেনÑ মাথায় তখনও টুপি তাঁর। একদিন বাবা-মা’র সঙ্গে হলে দিয়ে সিনেমা দেখার ফলেই হয়তো আমার মধ্যে পরে বিদ্যালয়দিনেও সিনেমাহলের প্রতি অদম্য আকর্ষণ বজায় থেকে যায়। মাঝে-মাঝে ভাবি (এখানে তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ ছবি’র পিতাটির মুখ মনে করতে পারি।) জীবনে বিচিত্র উপাদানের একত্র সম্মিলনই শুধু নয়, সমন্বয়টাও কতটা জরুরিÑ আমার বাবা এত বিচিত্র উপাদানকে গ্রহণ করবার অধ্যবসায়ে লিপ্ত ছিলেন কোনরকম উত্তেজনা ছাড়াই। সবকিছুকে তিনি নিয়েছিলেন চলার পথের স্বাভাবিকতা রূপেই। একদিকে, পড়ছি মওলানা সাহেবের কাছে আরবি-ফারসি এবং অন্যদিকে বাংলা-ইংরেজি। তখন আমরা সিক্সে পড়ি। একদিন দু’টো বই এনে দিলেন বাবাÑ একটি নেসফিল্ডের গ্রামার এবং আরেকটা রেন এ্যান্ড মার্টিনের ইংরেজি। গৃহশিক্ষককে দিয়ে বললেন, এখান থেকে ওদের ‘প্যাসেজ-ন্যারেশন’ করাবেন। ঐসব বইয়ের বাড়তি আকর্ষণ ছিল ইংরেজিতে লেখা বিভিন্ন অনুচ্ছেদে প্রতিফলিত বিদেশি জীবনের নানা অনুষঙ্গ। তারপর যখন টিভিতে ‘লিটল হাউজ অন দ্য প্রেইরি’ কিংবা ‘পেপারচেজ’ দেখি, ভাবি আমাদের এই দেশ, এই জাতির মানুষ ছাড়াও পৃথিবীটা অনেক ধরনের বৈচিত্র্যে ভরা। আমার এই জগতটাই সব নয়Ñ আরও আরও জীবন ছড়িয়ে আছে বিশ^ময়। তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ দেখতে-দেখতে ভেবেছি, পিতারা কত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেন। কেবল পিতৃত্ব নয় তারও অতিরেক নানা বিষয় থাকা সম্ভব যা পিতারা দিতে পারেন এবং পারেন না তাঁদের সন্তানদের।
আশির দশকটাতে আমরা ফুটছি টগবগ তারুণ্যে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বৈরাচার, রাজনীতি, মৌলবাদ এইসব বিষয় নিয়ে আমরা মেতে উঠি যারপরনাই। বিশ^জুড়ে তখন ঠা-া লড়াইয়ের উত্তেজনা। বিরুদ্ধ ¯্রােতে সামনে এগোবার পথের সন্ধান করে যাচ্ছে তারুণ্য। তার সেই অন্বেষণের একটা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায় তার সাংস্কৃতিক চেতনা। সেই সময়কার তরুণ মন তাই সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতি সবকিছুর মধ্যেই রাজনীতি-সচেতনতার একটা দিক ঠিক রাখে। আশির দশকের সাহিত্যের একটা বড় রকমের উদ্ভাসন তাই লিটল ম্যাগাজিননির্ভর তৎপরতা। একই সঙ্গে তারুণ্যের দর্পিত প্রকাশ ঘটে ফিল্ম সোসাইটি কি সুস্থ চলচ্চিত্র বিষয়ক কর্মকা-ে। চলচ্চিত্র মানে ছবি তৈরি নয়, ছবি দেখা, ছবি বোঝা বা উপলব্ধির চেষ্টা করা, ভাল ছবির সঙ্গে নিজের জীবনান্বেষাকে মিলিয়ে নেওয়া কি সবকিছু ছাপিয়ে যদি বলি সময়টাকে নিরর্থকতার গর্ভে হারিয়ে যেতে না দিয়ে এর একটা অর্থপূর্ণ আভাস নির্ণয়ের সক্রিয়তায় নিজেকে সংশ্লিষ্ট করে রাখা। আমার নিজের কথাই বলতে পারি। সাহিত্য পাঠের যে-অভ্যেস আমার গড়ে ওঠে পারিবারিক বলয়ের বিবর্তমানতার মধ্য দিয়ে তারই পরিণতিতে আমি সেই সাহিত্য পাঠের চেষ্টা করতে থাকি যে-সাহিত্য আমাকে সাহায্য করবে জীবনের নানান বিষয়কে অনুভব করতে এবং নানান বিষয় সম্পর্কে ভাবতে। শহরের গণ-পাঠাগারগুলিতে দিনমান আমার ব্যস্ততায় কাটে সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের গ্রন্থ পাঠ করবার মধ্য দিয়ে। একই ভাবে বলা যায়, তখনকার ফিল্ম সোসাইটির কার্যক্রম কি জায়মান চলচ্চিত্র সংস্কৃতির আবর্তনের মধ্যে আমরা খুঁজতে থাকি জীবনের সেই ভাষাকে যা আমাকে কেবলই চোখের সামনে দিয়ে একটি গল্প বয়ে নিয়ে যাবে না বরং একটি সম্ভাব্য বহমানতার আশ্রয়ে এমন সব জীবনের ও বাস্তবতার উদ্ঘাটন ঘটাবে যা হয়তো আমার জীবনাভিজ্ঞতার অংশ নয় কিন্তু ভবিষ্যতের দিকে ক্রমাগত এগোতে থাকা আমার জীবনটার মধ্যে ঢুকে পড়তে থাকবে মূল্যবান উপাদানের মতন।
যে-চলচ্চিত্র আমার শহর আমাকে উপহার দেয় সে-চলচ্চিত্র আমার ঘটতে থাকা বাস্তবের উপলব্ধিতে কোন কাজেই লাগে না। প্রেক্ষাগৃহগুলোতে অদ্ভুত এক প্রদর্শনের হিড়িক চলে যাকে বলা যায় সর্বনাশের মারণযজ্ঞ। যে-আমি একদা টিভিতে প্রেইরির প্রশান্ত জীবন দেখে, এমা’র বেড়ে ওঠার বিচিত্র গল্প শুনে কিংবা যে-আমি সিনেমাতেই পারিবারিক-সামাজিক জীবনের কাহিনি উপভোগ করেছি সে-আমার চোখের সামনে এ কেমন ¯্রােতের জলভ্রমি! বলতে দ্বিধা নেই কি করে কি করে যেন আমি এবং আমার মত আরও অনেকেই তখন সেই নৈরাজ্যের মধ্যেই সুস্থ বিনোদনের সন্ধানে নির্মল ও সমাজসচেতন চলচ্চিত্রের উপভোগের দিকে আকৃষ্ট হই। চট্টগ্রামে সোভিয়েত কনস্যুলেট আমাদের জন্যে ছিল এক অদম্য উৎসাহের জায়গা। অসাধারণ সব মহৎ চলচ্চিত্র উপভোগ করবার সুযোগ ঘটে এখানেই। গ্রেগরি চুখরাই, তারকোভস্কি কি ব্যাটলশিপ পটেমকিন কিংবা যুদ্ধের সব ছবি একের পর এক আমাদের চৈতন্যে ঢুকে যেতে থাকে আর আমাদের পিপাসার্ত হৃদয়ে বইয়ে দিতে থাকে প্রশান্ত হাওয়া। ফিল্ম সোসাইটির কল্যাণে চলচ্চিত্র দেখা কি চলচ্চিত্রের পঠন-পাঠন কিংবা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জীবনের মহত্বকে অনুভব করবার আমাদের সেইসব তৎপরতা আসলে চলমান সামাজিক-রাষ্ট্রিক বাস্তবতার বিপরীতে এক ধরনের শুশ্রƒষাই ছিল। আমরা যখন পিটার লিলিয়েনথাল, কস্তা গাভরাস, মিগুয়েল লিত্তিন, পার্সি এ্যাডলোন এইসব চলচ্চিত্রকারের সিনেমা দেখি আমরা আসলে দূর থেকে আরও নিকটে আসি এবং আমাদের চোখের মধ্যে গজিয়ে উঠতে থাকে আরও-আরও চোখ। সেইসব চোখ দিয়ে আমরা বোঝার চেষ্টা করি আমাদের সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া চলমান জীবনকে। নব্বইয়ের উৎক্রান্তির প্রেক্ষাপটে এসে পেছনে তাকিয়ে দেখি আশির আগুনের আঁচ তখনও টের পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আশির মোকাবেলায় সুস্থ ও নির্মল চলচ্চিত্রের অভিজ্ঞতা আমার নিজের জন্যে ছিল একটা বড় সঞ্চয়। পরে, নব্বইয়ের মাঝামাঝি বেশ কয়েক বছরের জন্যে ইংল্যান্ডে বসবাস করবার কালে আমি আবারও অনুভব করি, চলচ্চিত্র মানুষকে এমন সব অভিজ্ঞতার উন্মোচন ঘটাতে পারে যা এতটা কার্যকরভাবে পারে না অন্য কোন মাধ্যম। ইংল্যা-ের কেম্ব্রিজ শহরে বসবাস করবার সময় লুই বুনুয়েলের সমস্ত ছবি কিংবা বিশে^র নানান সব ধ্রুপদী ছবি দেখবার সৌভাগ্য হয় আমার। এমন সব দেশের চলচ্চিত্র দেখতে পাই যেসব দেশের নাম হয়তো তখনই প্রথম শুনেছিÑ ধরা যাক বারকিনা ফাসো।
১৯৯৭ সালে লন্ডনে আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে গেলে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে বিনোদনের উদ্দেশ্যে আযোজন করা ভিসিআরে সিনেমা দেখার সুযোগ ঘটে এবং সেই প্রথম আমি দেখলাম ‘মুক্তির গান’ যেটির নির্মাতা তারেক মাসুদ। ততদিনে বিশ^ চলচ্চিত্রের অনেকানেক পরিচালকের দারুণ সব চিত্র উপভোগের অভিজ্ঞতা আমার পুঁজি। কিন্তু আমি তখন হাজার-হাজার মাইল দূরেকার এক মানচিত্রে যেখানে আমার সঙ্গী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হওয়াএকটি দেশের জন্মের ইতিহাসের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। চলচ্চিত্রের কোন দর্শন নয়, চিত্রকৌশলের কোন কারিগরি নয় কিংবা নয় কোন জমাট গল্পের প্রদর্শনী, চোখের সামনে দেখতে পেলাম আমার সেই দেশটার, আমার সেই গরিব-শ্রীহীন অথচ সংগ্রাম করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো সমষ্টিবদ্ধ মানুষগুলোর এককথায় আমারই পূর্বপুরুষদের বীরত্বের-কষ্টের কাহিনি। তারেক মাসুদের সেই ছবি সুদূর দেশে পড়ে থাকা আমার মধ্যে এমন উপলব্ধির জাগরণ ঘটালোÑ নিজের দেশ, সংস্কৃতি, মুক্তি ও স্বাধীনতার লড়াইয়ের চেয়ে মহীয়ান আর কিছুই হতে পারে না। কোন অভিনয় নয়, কৃত্রিম নির্মাণ নয় ‘মুক্তির গানে’র সবটাই এক চর্মচোখের বাস্তবÑ একটি একমাত্রিকতা। কিন্তু তারেক মাসুদের চলচ্চিত্রকার সত্তার সংস্পর্শ লিয়ার লেভিনকে আশ্রয় করে আমাদের নিয়ে যায় অন্য এক দিগন্তের দিকে। আমি তখন সেই বিদেশে বসে প্রতিতুলনায় বসি। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধে হিটলারের ভয়াবহতার প্রামাণ্য দলিলের উপজিব্যতায় নির্মিত ফরাসি চিত্রনির্মাতা ক্লদ লাজম্যানের আট ঘণ্টার চলচ্চিত্র ‘সোয়াহা’র সংক্ষিপ্ত রূপটিকে পাঠ্য করা হয়েছে ইংল্যান্ডে এবং ইউরোপের আরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। যাতে করে ভবিষ্যতের প্রজন্মগুলি ইতিহাসকে বুঝে নিতে পারে নিজেদের অভিজ্ঞতার নিরিখে। তেমনই তারেক মাসুদের ‘মুক্তির গান’ ছবিটিকে কিংবা জহির রায়হানের ‘স্টপ জেনোসাইড’কে যদি অন্তর্ভুক্ত করা যেতো আমাদের শিক্ষায়তনে তাহলে আমরা নয় আমাদের অনাগত প্রজন্মই হতো লাভবান। ইংল্যান্ডে দেখা কেবল ‘মুক্তির গান’ চলচ্চিত্রটাই আমার মনের মধ্যে তারেক মাসুদের স্থায়ী আসন গড়ে দিয়েছিল। তখনও তাঁর অন্য সৃষ্টিকর্মগুলো, অন্য সব ছবি আমার দেখা হয় না। আরও অনেক পরে, দেশে ফিরে এসে দেখলাম ‘মাটির ময়না’।
‘মাটির ময়না’ ছবিটি দেখবার পর আরেকবার বুঝতে পারি চলচ্চিত্র নির্মাণও আসলে এক ধরনের সংগ্রাম। যে-জীবনের অভিজ্ঞতাকে এবং জীবনের যে-অভিজ্ঞতাকে তারেক মাসুদ সেলুলয়েডের ভাষায় অনুবাদ করেছেন তা কেবলই একটি চলচ্চিত্র নয়, এর মধ্য দিয়ে একটি জনগোষ্ঠি, একটি জাতি, তার বিবর্তন তার বর্তমান সবই একটা সীমাবদ্ধ আয়তনের মধ্য দিয়ে ঝিকিয়ে ওঠে হয়তো কিন্তু তার মধ্যে থাকে অসীমের ব্যঞ্জনা। আবারও আমার মানসচক্ষে ভেসে ওঠে ‘মুক্তির গান’। তারেক মুক্তিযুদ্ধটাকে এর সামগ্রিক অবয়ব দিয়ে বিবেচনা করেছিলেন। যুদ্ধের বাস্তবতাকে নিজের অস্তিত্বের অর্থপূর্ণতার মানদ-ে এনে স্থাপন করেছিলেন তিনি। যেজন্যে তারেকের সেই ছবিটি দেখবার পর মনে হয় যেন, হ্যাঁ, আসলে বাংলাদেশটাকেই দেখতে পেলাম, যদিও এও তো সত্য কথা, ‘মুক্তির গান’ই বাংলাদেশের সবটা নয়। তারেক মাসুদ মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশ এই দু’টিকে পারস্পরিক অনিবার্যতার সম্পর্কসূত্রের মধ্যে গেঁথে দেন। তাঁর ‘মাটির ময়না’ ছবিটি মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশটাকেই ধরে অন্য এক বৃহত্তর বাস্তবতা দিয়েÑ যাকে বলা যায় ঐতিহাসিক-সামাজিক এমনকি রাজনীতিক-রাষ্ট্রিকও। এবং তারেক মাসুদ স্বয়ং এক যোদ্ধাই হয়ে ওঠেন এদেশের ইতিহাসে। চলচ্চিত্রকে যিনি নীরবে একটি যুদ্ধাস্ত্রের মতনই ব্যবহার করে গেছেন। সেই অস্ত্র যা চেতনার মধ্যে ঘটাবে উন্মীলন, সেই অস্ত্র যা মর্চে-পড়া অবস্থার মধ্যে সৃষ্টি করবে উজ্জ্বলতার আবেদন এবং সেই অস্ত্র যা স্থিরতা ও জড়ত্বের পরিস্থিতির মধ্যে জাগিয়ে তুলবে গতির আবেগ। ২০০১, ২০০২ এবং ২০০৪ Ñ চোখের সামনে বাস্তবের, ইতিহাসের কি অদূর ভবিতব্যের একটা আবছা ও বর্ণন-অক্ষম ঘোর তৈরি হতে থাকে। ২০০১ সালে সংঘটিত ‘নাইন ইলেভেন’-এর আয়না দিয়ে স্থানীয় ও বৈশি^ক বাস্তবতার এক বিস্তৃত পটভূমির পর্যবেক্ষণের সূচনা। ঠিক তার পরের বছর তারেক মাসুদের ছবি ‘মাটির ময়না’র আত্মপ্রকাশ। ‘মাটির ময়না’র কাজি সাহেবকে আমরা ২০০১-এর পরবর্তীকার অবলোকনের চোখ দিয়ে দেখি। হ্যাঁ, তারেক মাসুদের জন্যে ২০০১ নয় মুক্তিযুদ্ধই কাজি সাহেবের বাস্তবতার নির্ণায়কÑ ২০০১-এর আরও আগেই ছবিটির কাজ শুরু হয়েছিল। আরও স্পষ্ট করে বললে, ১৯৪৭, ১৯৪৬, ১৯৪০, ১৯০৬ এভাবে কালানুক্রমে অনেক দূর চলে যাওয়া যায়। কাজি সাহেবকে কেন্দ্র করে চারদিকটায় আমরা যখন দৃষ্টিপাত করি, তখন আবার সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ এবং তানভীর মোকাম্মেল এই দু’জনের দু’টি বা দু’য়ের সমন্বয়ে এক মজিদের চরিত্র আমাদের মস্তিষ্কে থাকে পূর্বাভিজ্ঞতার প্রতিভাসরূপে। মুক্তিযুদ্ধটা কাজি সাহেবের জন্যে এক অনিবার্য বাস্তব হিসেবে হাজির হয়েছিল কিন্তু মজিদের মৃত্যু ঘটে মুক্তিযুদ্ধের আরও অনেকটা কাল আগে। হ্যাঁ, মজিদের মৃত্যু ঘটে কিন্তু তবুও সে থেকে যায়, থেকে যায় বড়বাড়ির কাদের হয়ে কিংবা অন্য কেউ হয়ে। ‘মাটির ময়না’ এই কালানুক্রমে থেকে যাওয়া কাজি সাহেবদেরই আখ্যানÑ এদের মধ্যে কোন-কোন কাজি সাহেব বদলান আবার কোন-কোন কাজি সাহেব না-বদলে থেকে যায় একই রকম আবার কোন-কোন কাজি সাহেব হয়ে ওঠেন আরও ভয়ংকর।
২০০৪ সালের ২ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলছিল সাধারণ নির্বাচনÑ সব চোখ সেখানেই নিবদ্ধ। এদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে, এ্যামস্টাডার্মের রাজপথে নৃশংসভাবে নিহত হলেন ওলন্দাজ চলচ্চিত্রকার এবং চিত্রসমালোচক থিও ভ্যান গঘ। সাইকেলে চড়ে যাচ্ছিলেন তিনি। প্রথমে তাঁকে গুলি করা হলো এবং তারপর করা হলো ছুরিকাঘাত, মৃত্যু নিশ্চিত হলো। একখানা ছুরি দিয়ে একটা চিঠি থিও’র বুকে গেঁথে দেওয়া হয়। তাঁর হত্যাকারী ছাব্বিশ বছর বয়েসি এক মরক্কান-ওলন্দাজ, মোহামেদ ব্যুয়েরিয়া। থিও ভ্যান গঘ ছিলেন এক আক্রমণাত্মক ধরনের সমালোচক। একসময় ইহুদিদের উদ্দেশ্য করে তীব্র সমালোচনামূলক রচনা লিখতেন। আবার, মুসলমানদের সমালোচনা করেও লেখেন নানান রচনা। কিন্তু তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো সেদিক থেকে ছিল স্পষ্ট ব্যতিক্রম। তাঁর নির্মিত ‘নাজিব এবং জুলিয়া’ হল্যান্ডের টিভিতে ধারাবাহিক নাটকরূপে প্রদর্শিত হয়। এটি আসলে ‘রোমিও এ্যান্ড জুলিয়েট’-এর নবনির্মাণ। মরক্কোর এক মুসলিম যুবকের সঙ্গে এক ডাচ মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক এটির উপজীব্য বিষয়। ডাচ মেয়েটিকে ঠিক ধার্মিক বলা চলে নাÑ ধর্মনিরপেক্ষ। আরও একটি ছবির কথা বলা যাবে থিও’রÑ ‘কুল’। এ্যামস্টাডার্মের একদল (গ্যাং) মরক্কান যুবকদের কাহিনি নিয়ে তৈরি। যখন মৃত্যু ঘটে তখন থিও আরেকটি চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যস্ত ছিলেনÑ ২০০২-এর মে মাসে নিহত ডাচ রাজনীতিবিদ পিম ফরট্যুয়িন-এর হত্যাকা-নির্ভর ছবি ‘০৬০৫’। থিও একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন সোমালিয় নারীবাদী লেখক আয়ান হার্সি আলি’কে নিয়েÑ ‘সাবমিশন’। চিত্রে নারীদের ওপর ধর্মের নামে নিগ্রহের ভয়ংকর দিক তুলে ধরা হয়। ২০০৪ সালের অগাস্ট মাসে হার্সি আলি’র জীবননির্ভর অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে চিত্রটি প্রদর্শিত হয়। এ-ঘটনার পর থেকেই হার্সি এবং থিওকে ইসলামের শত্রু হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। হার্সি পুলিশী নিরাপত্তায় থাকেন কিন্তু চলচ্চিত্রকার থিও পুলিশী নিরাপত্তা নেন না। থিও কিংবা হার্সি’র প্রসঙ্গ নয়, এ-ঘটনাটার উল্লেখ করা হলো চলচ্চিত্র নামক মাধ্যমটার প্রচ- শক্তি এবং প্রভাবের দিকটাকে অনুধাবন করবার জন্যে। থিও ভ্যান গঘের চলচ্চিত্রকর্ম হল্যান্ডের একটি ধর্মের জনগোষ্ঠিকে তাঁর বিরুদ্ধে দারুণ রোষের বলয় সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। বলা যায়, তাঁর চলচ্চিত্রই তাঁর মৃত্যুর কারণ। যদিও হত্যাকা- আসলে সুস্থ প্রতিপক্ষতার উপায়-অবলম্বন নয়, তবু মানুষই হত্যাকারী, মানুষই শয়তান হয়ে যায়।
ব্যক্তি তারেক মাসুদ এবং চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ এই দুইকেই যাঁরা মনে রেখেছেন তাঁদের নিকটে তিনি এক সংযমী-পরিশ্রমী-পরিমিতিসম্পন্ন মানুষ। তাঁর ‘মুক্তির গান’, ‘মুক্তির কথা’, ‘মাটির ময়না’, ‘রানওয়ে’ কিংবা ‘অন্তর্যাত্রা’ এসব সৃষ্টিকর্মকে সামনে রেখে বলা যায়, কৌশলের জটিলতা কি দর্শনের কাঠিন্যচর্চার পথ ব্যতিরেকে কেবল চলচ্চিত্রের ভাষাকে আশ্রয় করে তিনি বাঙালির জীবন ও সমাজের গভীরে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছেন। চলচ্চিত্রের চলমানতা দিয়েও যে ইতিহাস-সমাজ-রাজনীতি ইত্যাকার বিচিত্র ও বহুমাত্রিক বিষয়ের ওপর আলোকপাত সম্ভব এবং আলো ফেলে বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়া সম্ভব সেটা তারেক মাসুদ করে দেখান। তাঁর চিত্রকে হৃদয়ঙ্গম করতে গেলে বাংলাদেশের জাতিসত্তার বিবর্তমানতা এবং তার ভেতরকার ব্যক্তি-পরিবার এবং সামাজিক সম্পর্কগুলি সম্পর্কে ধারণা থাকা চাই। আর, সেসব বিষয়ে তাত্ত্বিক বা পূর্বধারণা না-থাকলেও তাঁর চলচ্চিত্র আমাদেরকে সেসব বিষয়ে সচেতন করে তোলে।‘মাটির ময়না’ ছবিটির প্রসঙ্গে নানা প্রতিক্রিয়া আমাদের চোখে পড়েছিল। অনেকেই ছবিটি সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করে। বিশেষ করে, এর কাজি সাহেব চরিত্রটিকে অনেকেরই মনে হয়েছে নেতিবাচক চরিত্রের ইতিবাচক চলচ্চিত্রায়ণ বা উপস্থাপনা। কিন্তু, তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’কে একটি সামগ্রিক জীবনগল্পের স্বরূপে দেখতে হয়। এর আদি-মধ্য-অন্ত এবং এ-সবগুলোর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সম্পূর্ণ অবয়বটাকে বুঝতে গেলে হঠাৎ করে এক টুকরো কাজি সাহেবকে টেনে বার করে দেখলে ‘মাটির ময়না’র স্থানীয় বাস্তবকে বোঝা যাবে না। নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে বলতে পারি, আমার বাবা ধার্মিক ছিলেন কিন্তু তিনি ছিলেন কাজি সাহেবের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর মানুষ। যথেষ্ট অগ্রগামিতা সত্ত্বেও আমার বাবার চরিত্রেও দৃষ্টির সীমাবদ্ধতা দেখেছি। ১৯৬৮ সালে আমি প্রথম দাবা খেলা শিখি ঢাকায় আজিমপুরে আমার নানাবাড়িতে মামা-খালাদের খেলা দেখে-দেখে। তখন আমার মাত্র ৬ বছর বয়েস। পরে, স্কুলে এবং কলেজে আমি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দাবা খেলা অব্যাহত রাখি এবং অনেকগুলো প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টেও অংশগ্রহণ করি, পুরস্কৃতও হই। দীর্ঘদিন বাবা’র ধারণা ছিল দাবা খেলা খুবই খারাপ একটা খেলা, তিনি বলতেন এটা কম্যুনিস্টদের খেলা। আমি তাঁকে বলি, ভারতীয় অশিক্ষিত বাবুর্চি সুলতান ব্রিটিশ দাবায় বিখ্যাত দাবাড়– কাপাব্লাংকাকে হারায়। সুলতান তো কম্যুনিস্ট ছিলেন না। তা-ও বহুদিন তিনি তাঁর ধারণায় অনড় ছিলেন। সেই অনড়ত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে তাঁর সময় লেগেছিল। এখন, একটিমাত্র হেতুকে মানদ- ধরে আমি বাবা’র সীমাবদ্ধতার জন্যে তাঁকে ফেল করিয়ে দিতে পারি না। তাঁর সেই অবস্থানকে দেখা দরকার সহমর্মিতার অনুভূতি দিয়ে। নইলে তাঁর চরিত্রটিকে ঠিক-ঠিক বোঝা যাবে না। হ্যাঁ, তারপরেও বহু রেখা থেকে যায় দুষ্পাঠ্য, বহু রেখা থেকে যায় দুর্বোধ্য। কিন্তু তারেক মাসুদ তাঁর ‘মাটির ময়না’য় কোন দুর্বোধ্য জীবনের অনুবাদ ঘটান না। বাঙালি জাতিসত্তার ঐতিহাসিক বাস্তবতার একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তিনি আলো ফেলেন। তাঁর আলোকের আয়তনে ব্যক্তি-পরিবার মূলÑ আর সহগ হিসেবে আসে সমাজ এবং মুক্তিযুদ্ধ।
তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র দেখে একটা বিষয় বুঝতে পারি, দেশ-জাতি-সমাজকে বাদ দিয়ে বস্তুত কোনরূপ শিল্পচর্চাকে বৃহত্তর অর্থের দিকে নিয়ে যাওয়া যায় না। আমরা যারা মূলত সাহিত্যের পথেই হেঁটেছিলাম কিন্তু চলচ্চিত্রের আঙিনায়ও খানিকটা বিশ্রাম নিয়েছি আমাদের সে-বিশ্রাম অন্তিমে সাহিত্যের কাজেই লেগেছে। চলচ্চিত্র দিয়েও সাহিত্যকে বোঝা সম্ভব, চলচ্চিত্রের অভিজ্ঞতা দিয়ে বরং কখনও-কখনও সাহিত্যের শিল্পরূপে যোগ করা যায় ভিন্ন মাত্রিকতা। বহুকাল আগে একটি গল্প লিখেছিলাম যেটি আমার ‘আয়নাপড়া’ নামক গ্রন্থের অন্তর্গতÑ ‘নিমনগরের দুঃস্বপ্নের কাহিনি’। সুদূর কেম্ব্রিজ শহরে বসে দেখছিলাম লুই বুনুয়েলের ছবি ‘ভিরিডিয়ানা’ আর অকস্মাৎ কোত্থেকে বিদ্যুচ্চমকের মত আলোক ছুটে যায় করোটির সরু পথ ধরে। অনেককাল পরে দেশে ফিরে লেখা হলো গল্প। গল্পটি অন্য প্রকারের কিন্তু এর অনুপ্রেরণা ‘ভিরিডিয়ানা’। তারেক মাসুদের ‘মুক্তির গান’, ‘মাটির ময়না’ কিংবা ‘রানওয়ে’র প্রেক্ষণাভিজ্ঞতাকে নিশ্চয়ই সাহিত্যের সৃজনশীলতার পক্ষেও কাজে লাগানো সম্ভব। তাছাড়া, সাহিত্য-সংগীত-নাট্যকলা-চিত্রকলা-চলচ্চিত্র সবই একে অন্যের সঙ্গেপারস্পরিকতার অন্বয়ে সংযুক্ত। তারেক মাসুদের ছিল স্বচ্ছ সাহিত্যাভিজ্ঞতা, সংগীতচেতনা, ইতিহাসজ্ঞান। আর ছিল জীবনের বিচিত্র উপাদানের সঞ্চয়ে সমৃদ্ধ জীবনাভিজ্ঞতা। তাঁর চলচ্চিত্রশিল্প আমার মনে জাগায় বৃহতের অনুভূতি, মুক্তির অনুভূতি এবং সচেতনতার অনুভূতি।
নভেম্বর ২০১৯

শেয়ার করুন