চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘আমি রক্ষণশীল ক্ল্যাসিকাল ঘরানার লেখক’ …পিটার হ্যান্ডকে

ভাষান্তর : শেখর দেব

২৫ অক্টোবর, ২০১৯ | ১২:৫২ পূর্বাহ্ণ

২০১৯ খ্রি. সাহিত্যে নোবেল পেলেন অস্ট্রিয়ান ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, অনুবাদক, কবি ও চলচ্চিত্র পরিচালক পিটার হ্যান্ডকে। নোবেল কমিটির ভাষ্য মতে ‘মানবিক অভিজ্ঞতার পরিধি ও নির্দিষ্টতা অন্বেষণে ভাষাগত উদ্ভাবন কুশলতা ও প্রভাব বিস্তারী সৃষ্টিকর্মের জন্য’ তাঁকে নোবেল দেয়া হয়েছে।

হ্যান্ডকে ১৯৪২ সালে দক্ষিণ অস্ট্রিয়ার একটি প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। হ্যান্ডকের জৈবিক পিতা ও সৎ পিতা দুজনই জার্মান আর্মিতে কাজ করতো। শৈশবে তাঁকে তাঁর নেশাগ্রস্ত সৎ পিতার ধ্বংসাত্মক রূপ দেখে বড় হতে হয়েছে। ১৯৭১ সালে হ্যান্ডকের মায়ের আত্মহত্যার পরে তিনি এক বিক্ষিপ্ত সফরে যুগস্লাভিয়া গিয়েছিলেন। মায়ের আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে তিনি অ ঝড়ৎৎড়ি ইবুড়হফ উৎবধসং শিরোনামে একটি উপন্যাস লিখেন।

তাঁর শৈশবের একটা অংশ তিনি যুদ্ধ-সন্ত্রস্ত বার্লিনে কাটিয়েছেন। ১৯৫৪ সালে হ্যান্ডকেকে পাঠানো হয় ক্যাথলিক মারিয়ানাম বয়েস বোর্ডিং স্কুলে। যেখানে স্কুলের পত্রিকায় তাঁর প্রথম লেখা ঋধপশবষ প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৫৯ সালে তিনি ক্ল্যাজেনফুর্টে চলে যান, যেখানে তিনি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে গ্রেজ বিশ^বিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। পড়াশুনায় থাকা অবস্থায় তিনি দ্যা গ্রেজ অথর অ্যাসেম্ব্লি নামে একটি তরুণ লেখকদের সংগঠনের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। তাদের একটি ম্যাগাজিন ছিল, যেখানে হ্যান্ডকের প্রথমদিককার লেখাগুলো প্রকাশিত হয়েছিল।

১৯৬৫ সালে এক জার্মান পাবলিশার্স তাঁর প্রথম নোবেল ঞযব ঐড়ৎহবঃং প্রকাশের জন্য নির্বাচন করলে তিনি পড়াশুনা ছেড়ে দেন। ১৯৬৬ সালে নিউ জার্সির প্রিন্সটনে অনুষ্ঠিত একটি লেখক- সম্মেলনে যোগ দিয়ে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। একই বছরে তাঁর নাটক ঙভভবহফরহম ঃযব অঁফরবহপব ফ্রাঙ্কফুর্টে মঞ্চস্থ হবার পর তিনি দর্শকদের মনে দাগ কাটেন এবং তখন থেকে একটি পাবলিশিং হাউসের কো-ফাউন্ডার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
হ্যান্ডকে চলচ্চিত্রের জন্য অনেক স্ক্রিপ্ট লিখেন। ১৯৭৮ সালে রিলিজ হওয়া ঞযব খবভঃ-ঐধহফবফ ডড়সবহ চলচ্চিত্রটি তিনি পরিচালনা করেন। যেখানে স্বামী পরিত্যক্ত নারীর অধিকারের বিষয়টি প্রদর্শিত হয়েছিল।
১৯৭৮ সালের কেন্স ফিল্ম ফ্যাস্টিভাল-এ ঞরসব চধংংবং… ধহফ ঃযব ধঁফরবহপব ভধষষং ধংষববঢ় চলচ্চিত্রটি গোল্ডেন পাম এওয়ার্ড-এর জন্য মনোনয়ন পেয়েছিল এবং ১৯৮০ সালে গোল্ডেন এওয়ার্ড পায়। ঞযব ডৎড়হম গড়াব নামের টিভি নাটকের জন্য ১৯৭৫ সালে তিনি জার্মান ফিল্ম এওয়ার্ড ইন গোল্ড অর্জন করেন।

সাহিত্য সমালোচকরা তাঁর লেখাকে গীতলধর্মী লেখা বলে আখ্যায়িত করলেও তিনি তা অস্বীকার করেন এবং নিজেকে “রক্ষণশীল ক্ল্যাসিকাল ঘরানার লেখক” হিসেবে দাবি করেন।
যুগোস্লাভিয়া যুদ্ধের শিকার সার্বিয়াদের নিয়ে লেখা তার গদ্য ‘অ ঔড়ঁৎহবু ঃড় জরাবৎং: ঔঁংঃরপব ভড়ৎ ঝবৎনরধ’ লিখে তিনি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এই লেখায় তিনি যুদ্ধের ঘটনা প্রবাহকে ভুলভাবে উপস্থাপনার জন্য পশ্চিমা মিডিয়ার কড়া সমালোচনা করেন। এছাড়াও ২০০৬ সালের ১৮ মার্চ মিলোসভিস এর শবযাত্রা অনুষ্ঠানে ২০,০০০ শোকাহত মানুষের সামনে প্রদত্ত তাঁর বক্তব্য পশ্চিমা বিশে^ বির্তকের ঝড় ওঠে। একই বছরে প্রদত্ত একটি সাক্ষাৎকারে মিলোসভিস সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি মনেকরি তিনি নয় হিরো, নয় ট্র্যাজিক মানুষ কিন্তু একজন ট্র্যাজিক মানবসত্তা। আমি লেখক, আমি বিচারক নয়।’ তাঁকে নিয়ে এসব বিতর্কের জন্য তিনি কখনো ভাবেননি তিনি নোবেল পাবেন। কিন্তু এবারের শিারোপা পেলেন অস্ট্রিয়ান এই লেখক।
২০১৪ সালে তাঁকে আন্তর্জাতিক ইবসেন এওয়ার্ড-এ ভূষিত করা হলে এর তীব্র সমালোচনা হয়। এমনকি নরওয়েজিয়ান মিডিয়ায় তাঁকে যুদ্ধাপরাধিদের সাথে সংশ্লিষ্টতা ও ফ্যাসিস্ট বলেও কড়া সমালোচনা করা হয়।

কোরিনা ব্লেজ নামের একজন পরিচালক তাঁকে নিয়ে ‘চবঃবৎ ঐধহফশব: ওহ ঃযব ডড়ড়ফং, গরমযঃ ইব খধঃব (২০১৬) নামে একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি করেন। তিনি বর্তমানে সার্বিয়ান একাডেমি ফর সাইন্স এন্ড আর্টস এর সদস্য।
এফএসজি নামের আমেরিকান প্রকাশনা সংস্থা তাঁর ১৫টি বই ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। অনুবাদকৃত তাঁর উল্লেখযোগ্য নাটকের সংগ্রহ কধংঢ়ধৎ ধহফ ঙঃযবৎ চষধুং এবং উপন্যাস ঞযব এড়ধষরব’ং অহীরবঃু ধঃ ঃযব চবহধষঃু করপশ’। এফএসজি এর সভাপতি জোনাথন গ্যালাসাই বলেন, ‘হ্যান্ডকে জার্মানীর অন্যতম গদ্যকার, তিনি প্রাকৃতিক বিশ^ ও মানুষের চেতনা বিশে^র সমন্বয়, হিউমার এবং সম্ভাবনা নিয়ে লিখেছেন। পিটার হ্যান্ডকের একটি কাব্য ‘অর্থহীনতা ও সুখ’ নামে বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।

পিটার হ্যান্ডকের প্রাপ্ত উল্লেখ্যযোগ্য পুরস্কারগুলো হলো জর্জ বুচনার পুরস্কার (১৯৭৩), ভিলেনিকা আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), ব্রাদার্স কেরিক অ্যাওয়ার্ড (২০০০), আমেরিকান সাহিত্য পুরস্কার (২০০০), ফ্রান্জ কাফকা পুরস্কার (২০০৯), আন্তর্জাতিক ইবসেন পুরস্কার (২০১৪) ও নিস্টর-থিয়েটারপ্রিস (২০১৮) ইত্যাদি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট