চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ঠাকুর বাড়ির অন্দর মহলে

প্রতিভাময়ী নারী স্বর্ণকুমারী

রতন কুমার তুরী

১১ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:২২ পূর্বাহ্ণ

জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল সন্ধ্যাবেলা মেয়েরা গোল হয়ে বসে আছেন। উল্টো দিকে বসে আছেন মহর্ষিপুত্র জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের হাতে ইংরেজি নভেল এবং গল্পের বই। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ বইগুলো হতে ভালো ভালো গল্প বেছে নিয়ে সেগুলো বাংলায় শোনাচ্ছেন। সে সব গল্পকাহিনী ঠাকুর বাড়ির বধূ ও কন্যারা মুগ্ধ হয়ে শুনছেন।

এরকমই একদিন সন্ধ্যাবেলা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের গল্প বলা শেষ হলে একটি ছোট্ট মেয়ে উঠে এলো হাতে একটি খাতা নিয়ে। খাতাটিতে কতগুলো গল্প লেখা। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ গল্পগুলো পড়ে অবাক হলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন এগুলো কার লেখা। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটি মৃদুস্বরে বললো-আমার। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ সে থেকে মেয়েটিকে আরো লেখার জন্য উৎসাহ দিতে লাগলেন। সেই হলো ছোট্ট মেয়েটির সাহিত্যে হাতেখড়ি। সেই স্বল্প বয়সী মেয়েটি ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন বাংলার প্রথম সার্থক উপন্যাস লেখিকা স্বর্ণকুমারী দেবী।

স্বর্ণকুমারী মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্থ কন্যা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ন. দিদি। ১৮৫৬ সালের ২৮ আগস্ট জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে তার জন্ম। ঊনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের সমাজ চিত্রটা তখন এরকম ছিলো যে, বহুবিবাহ সমাজে চল হয়ে আসছে তখনও। এদিকে গৌরীদানও চলছে। তবে মহর্ষি ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণের পর অন্দরমহলেও আবাহন করলেন ধর্ম, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও শিক্ষা। কলকাতার অন্যান্য জমিদার বাড়িগুলো থেকে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলটি এখন থেকেই স্বতন্ত্র হয়ে গেলো। মহর্ষি অন্দরমহলের বধূ ও কন্যাদের শিক্ষাদানের জন্য নিযুক্ত করলেন বৈষ্ণবঠাকুরাণী ও গুরুমশাই। অন্দরমহলের মেয়েরা তাদের কাছে পাঠ নিতে থাকলেন। মহর্ষি নিজে দিলেন জ্যোতির্বিদ্যা ও ধর্ম শিক্ষার পাঠ। অযোধ্যানাথ পাকড়াশীর কাছে ঠাকুরবাড়ির বধূ কন্যারা অংক, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞানের পাঠ নিতে থাকলেন। ছোট স্বর্ণকুমারীও ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের সঙ্গে অন্তঃপুরে লেখা-পড়ার পাঠ নিতেন। স্বর্ণকুমারীর বড়দিদি সৌদামিনীকে মহর্ষিঅনেক আগেই বেথুনের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন, তবে সেখানে তিনি বেশিদিন পড়েননি। স্বর্ণকুমারী দেবীও বেথুনের স্কুলে পড়েননি। তিনি গুরুমশায়ের কাছে যেমন পাঠ নেন, তেমনই অগ্রজদের অর্থাৎ দাদাদের কাছে নেন দেশি, বিদেশি গল্প, কবিতা, উপন্যাস নানা রকমের সাহিত্য পাঠ। ছোটবেলা থেকে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির এরকম শিক্ষা ও সংস্কৃতির উদার পরিম-লে বড় হতে থাকেন স্বর্ণকুমারী দেবী। মাত্র বারো বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় স্বর্ণকুমারী দেবীর জানকীনাথ ঘোষালের সাথে। বিয়ের পর স্বর্ণকুমারী দেবী জানকীনাথকে পেলেন এক উদার, সাহিত্যপ্রেমী, জীবনসঙ্গীরূপে। বিয়ের কিছুকাল পরে জানকীনাথ স্বর্ণকুমারীকে শিক্ষার জন্য মেজদাদা সত্যেন্দ্রনাথের কর্মস্থল সুদূর বোম্বাই প্রদেশে রেখে আসেন। অগ্রজের কাছ থেকে ইংরেজি শিক্ষা, সঙ্গীত শিক্ষা, সাহিত্যপাঠ প্রভৃতির মধ্য দিয়ে নিজেকে এক স্বতন্ত্র নারীতে রূপান্তর করতে থাকলেন স্বর্ণকুমারী। বোম্বাইয়ে বসবাসকালে বোম্বাই প্রেসিডেন্সির নানা জায়গায় পরিভ্রমণ করেছেন দাদা, বউদি ও তার পরিবারের সঙ্গে। পাশাপাশি লিখে চলেছেন সেখানকার নানা বিবরণ।

ভারতীয় পাতায় সেগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে পত্রাকারে। কোনো পত্রে সোলাপুর, পুনা প্রভৃতি শহরের চিত্র কখনও সেসব শহরের বসবাসকারী দেশি-বিদেশি মানুষের বিবরণ, কোনো পত্রে তুলে ধরেছেন বোম্বাই প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত অঞ্চলের প্রাকৃতিক ছবি। ন. দিদির ছোট ভাই রবি। তখন কৈশোর পেরিয়ে যুবক। মাঝে মাঝে সতেন্দ্রনাথের কর্মস্থলের সঙ্গী তিনিও, দুই ভাই বোনের পত্রে-বোম্বাই প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত অঞ্চলের চমৎকার ছবি চিহ্নিত হয়েছে ভারতী ও বালকের পাতায়। যদিও দু’জনের দৃষ্টি লেখনির স্বাদ অন্যরকম। প্রকৃতপক্ষে অগ্রজ দাদা ও পিতৃদেবের অনুপ্রেরণায় স্বর্ণকুমারীর সাহিত্য রচনা শুরু জোড়াসাঁজোর ঠাকুরবাড়িতেই। পরে তিনি স্বামীর সঙ্গে কাশিয়াবাগানের বাড়িতে চলে আসেন। এখানে থাকাকালীন তার প্রথম উপন্যাস ‘দ্বীপনির্বাণ’। ১৮৭৬ সালে প্রকাশিত হয়। তিনি । উপন্যাসটি উৎসর্গ করেন অগ্রজ সত্যেন্ত্রনাথ ঠাকুরকে। এরপর একের পর এক তার লেখনি থেকে উৎসারিত হয়েছে উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা, গান, প্রবন্ধ, গীতিনাট্য, গাথা, নাটক, কৌতুক-নাটক প্রভৃতি। স্বর্ণকুমারী দেবীর লেখা উপন্যাসের সংখ্যা এগারো তার প্রথম উপন্যাস ‘দ্বীপনির্বাণ’। উপন্যাসটির ভূমিকায় তিনি উপন্যাসটির মূলকথাটি বিধৃত করেছেন। তিনি লিখেছেন-ভারতে মুসলমান শাসনের আগে হিন্দুরাজাদের নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বান্দ্বের সুযোগ মুসলমান শাসকরা হিন্দু রাজাদের পরাস্ত করে ক্ষমতায় আসীন হন। তার আরেকটি ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘মিবাররাজ’ টড-এর রাজস্থানের কাহিনী অবলম্বনে রাজপুত ও ভীল দ্বন্দ্ব। তার শ্রেষ্ঠ সামাজিক উপন্যাস ‘¯েœহলতা বা পালিতা’ দুখ-ে ১৮৯০ ও ১৮৯৩ সালে প্রকাশিত হয়। শিক্ষিত নারীর সুখ-দুঃখ, বিধবা বিবাহ সমস্যা, সমাজ-রাজনীতি, ইতিহাস প্রীতি, জাতীয়তাবোধ প্রভৃতি তার উপন্যাস জুড়ে স্থান পেয়েছে। স্বর্ণকুমারীর হাতেই জন্ম নিয়েছে বাংলার প্রথম নারী রচিত সামাজিক উপন্যাস। তবে জীবনের শেষ প্রান্তে স্বর্ণকুমারী গড়লেন এক নতুন নারী মূর্তির ত্রয়ী উপন্যাস ‘বিচিত্রা’, ‘স্বপ্নবাণী’ ও ‘মিলনরাত্রি’। যে নারী সমাজ ও পরিবারের মতো করে নিজেকে মানিয়ে নেয়নি। সে নারী স্বমহিমায় নতুন সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখে। একবিংশ শতকে স্বাধীন নারীর যেই রূপটি আমরা পাই স্বর্ণকুমারীর ত্রয়ী উপন্যাসে সে ছবি আঁকা হয়ে গিয়েছিল বিশ শতকের গোড়াতেই। বাংলার ছোট গল্পের পরিবৃত্তটি গড়ে উঠেছিল স্বর্ণকুমারী ও রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে। তার ছোট গল্পের নায়িকারা নিরব ও অভিমানহীন প্রেমিকা। তারা শুধু অন্যের সুখ দেখেই সুখী। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীর প্রতিবাদী রূপটিও লক্ষ্য করা যায়। ঊনিশ শতকের নবজাগরণের যুগে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িটি ছিল বৎসরব্যাপী উৎসব মুখর।
নতুন বছরের আগমনে, কখনও নতুন ঋতুর আগমনে, কখনও ব্রাহ্মধর্মের নানা অনুষ্ঠানকে ঘিরে মেতে উঠতেন জোড়াসাঁকের ঠাকুর বাড়ির সদস্যরা। অনুষ্ঠান উপযোগী গান, কবিতা, নাটক, ছবি এসবই লিখে এঁকে জোগান দিতেন ঠাকুর বাড়ির ছেলে, মেয়ে, বধূ, জামাতারা। এমনই এক বসন্তের দিনে বসন্তের আগমনকে স্বাগত জানানোর জন্য একখানি নাটক দরকার।

জ্যোতিদাদা ডেকে পাঠালেন স্বর্ণকুমারীকে, জ্যোতিদাদার অনুরোধে স্বর্ণকুমারী লিখে ফেললেন ‘বসন্তোৎসব’ গীতিনাট্যটি। কৌতুক নাটক রচনায়ও স্বর্ণকুমারী কালোত্তীর্ণ। কৌতুক নাটকগুলোতে তার প্রখর সমাজ দৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায়। তৎকালীন সমাজের অসঙ্গতিগুলিকে তিনি তার কৌতুক নাটকে তুলে ধরেছেন।

স্বর্ণকুমারী দেবীর উল্লেখযোগ্য কীর্তি ‘ভারতী’ পত্রিকা সম্পাদনা করা। ঊনিশ শতকের পত্রিকার ইতিহাসে ‘ভারতী’ এক উজ্জ্বল নাম। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ছেলে মেয়েদের সাহিত্যচর্চা এবং প্রতিভার বিকাশের জন্য, বাড়ির ছেলে মেয়েদের উৎসাহে, ঠাকুর বাড়ি থেকেই ‘ভারতী’ নামে মাসিক পত্রিকা বের হতে থাকে ১৮৭৭ সাল থেকে। সম্পাদক হন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

সম্পাদকম-লীতে জ্যোতিবিন্দ্রনাথ, স্বর্ণকুমারী দেবী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু ১৮৮৪ সালে জ্যোতিবিন্দ্রনাথের স্ত্রী কাদম্বরী দেবীর হঠাৎ মৃত্যু হলে, ঠাকুর বাড়ি থেকে প্রকাশিত আর একটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকা, তত্ত্ববোধীনি, তে ভারতী প্রকাশ বন্ধ করে দেয়ার কথা ঘোষণা দেন দ্বিজেন্দ্রনাথ। এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৮৪ সালে স্বর্ণকুমারী দেবী ‘ভারতী’ সম্পাদনার দায়িত্ব নেন।
‘ভারতী’ সম্পাদনার দায়িত্ব নিয়েই প্রথম সম্পাদকীয়তে তিনি ‘ভারতী’-তে বিজ্ঞান বিষয়ক লেখার সংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণা দেন।

এরপর ধারাবাহিকভাবে ১৮৮৪ থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তিনি ভারতী পত্রিকা সম্পদনার দায়িত্ব পালন করেন। ভারতী সম্পাদনকালে তার একটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি প্রবন্ধ সাহিত্যচর্চা। বিজ্ঞানের প্রবন্ধে ভারতীর পাতা ভরে উঠলো বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা। সুদূর ছোটবেলায় পিতৃদেব মহর্ষি তার অন্তরে যে জ্যোতিবিদ্যা ও বিজ্ঞানের বীজ রোপণ করে দিয়েছিলেন এখন তা ভারতীয় পাতায় শতধারায় প্রকাশিত। আজ থেকে ১২০ বছর আগে জ্যোতিবিজ্ঞানী প্রক্টারের মঙ্গল গ্রহণ নিয়ে প্রবন্ধিটি স্বর্ণকুমারী দেবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানী প্রক্টারের ধারণা মঙ্গলে পৃথিবীর মতো পরিবেশ আছে। প্রক্টোরের এই সংবাদটি মানুষের মধ্যে পৌছানোর জন্য স্বর্ণকুমারী দেবী প্রক্টোরের ঐ প্রবন্ধটি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করে ভারতীতে প্রকাশ করে।

ঊনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে আইন করে বিধবা বিবাহ প্রচলন করলেও সমাজ এবং আত্মীয়-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে বহু অভিভাবকই বিধবা বিবাহ নিয়ে ভীত ছিলেন। সমাজের এইসব অসহায় বিধবাদের কথা চিন্তা করে স্বর্ণকুমারী দেবী ভারতীর পাতায় কলম ধরলেন। ‘একটি প্রস্তাব’ এবং ‘আরেকটাই প্রস্তাব’ নামের দু’টি প্রবন্ধ লিখলেন। প্রবন্ধগুলোর মূলকথা হলো এসব অসহায় বিধবাদের স্বনির্ভর করা এবং শিক্ষায়-দীক্ষায় বড় করে সমাজের প্রতিষ্ঠিত করে গড়ে তোলা। এই ভাবনার সফল রূপায়ণ স্বর্ণকুমারী দেবীর ‘সখি সমিতি, যা তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ১২৯৩ বঙ্গাব্দে। সখি সমিতি প্রতিষ্ঠা স্বর্ণকুমারী দেবীর একটি উল্লেখযোগ্য কাজ। অসহায় বিধবা মেয়েদের আর্থিক সহায়তা এবং স্বনির্ভর করে গড়ে তোলাই ছিল এ সমিতির প্রধান কাজ।

এ সমিতির মেয়েদের তিনি প্রয়োজনে বেথুন স্কুলের বোডিং-এ রেখে পড়াশোনা করাতেন। এ সমস্ত লেখাপড়া জানা মেয়েরা পরবর্তীতে বিভিন্ন পেশায় জড়িত হয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়েছিল। সমিতির উদ্যোগে স্বাবলম্বী হয়ে বহুনারী সে সময় সমাজে প্রতিষ্ঠাও পেয়েছিলেন।

স্বর্ণকুমারী দেবীর আরেক উদ্যোগ ছিল ‘মহিলা শিল্পমেলা’ অন্তঃপুরের মেয়েদের হাতে তৈরি শিল্প সামগ্রী এই মেলায় স্থান পেতো। এই মেলা সাধারণত দিল্লি, বোম্বে, জয়পুর, কানপুর ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে হতো। অন্তঃপুরের মেয়েরা সারা বছর অপেক্ষা করতো এই শিল্প মেলার জন্য। শিল্পমেলায় অর্জিত অর্থ ‘সখি সমিতি’র ভা-ারে জমা হতো। সাহিত্য রচনার পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনেও পা রেখেছিলেন স্বর্ণকুমারী দেবী। ১৮৮৫ সালে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হলে, কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর স্বামী দ্বারকানাথ গাঙ্গুলী মেয়েদের জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে প্রতিনিধি হবার দাবি নিয়ে আন্দোলন করেন। অবশেষে জাতীয় কংগ্রেস তা মেনে নেয়।

১৮৮৯ সালে বোম্বাই শহরে কংগ্রেসের পঞ্চম অধিবেশনে ছ’জন মহিলা প্রতিনিধির মধ্যে স্বর্ণকুমারী দেবী ছিলেন অগ্রগণ্য। ১৮৯০ সালে কলকাতা কংগ্রেস অধিবেশনেও স্বর্ণকুমারী দেবী প্রতিনিধি হয়ে যোগদান করেন। এমন প্রতিভাময়ী লেখিকাকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২৭ সালে ‘জগারিণী’ পুরস্কার প্রদান করে তার সাহিত্য প্রতিভাকে সম্মাননা প্রদান করেন। এই প্রথম একজন লেখিকা ‘জগত্তারিণী’ সম্মানে সম্মানিত হন। এর আগে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অমৃতলাল বসু।

আজ একুশ শতকের মেয়েরা শিক্ষা, স্বাধীনতার শিখরে পৌঁছেছে। স্বর্ণকুমারী দেবী সে সময় কলম ধরে ছিলেন। সে যুগে মেয়েদের লেখা পড়া করা উচিত কিনা এই নিয়েই সমাজে চলছিলো কতো বিতর্ক। যারা মেয়েদের লেখা-পড়ার সমর্থক ছিলো খোদ তাদের মনেও নানা রকম প্রশ্ন ছিল। মেয়েরা অন্তঃপুরেই পড়বে নাকি দিবালোকে বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়বে। মেয়েদের পড়ার পাঠ্যক্রমই বা কি হবে? শুধুমাত্র সংসারের উপযোগী পাঠ্যক্রম নাকি পুরুষদের মতো অংক, বিজ্ঞান, ভূগোল ব্যাকরণ পড়বে? আজকের দিনে অনেক স্বার্থক ও স্বনামধন্য লেখিকা সাহিত্য অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। তবুও আমরা স্বর্ণকুমারী দেবীর মতো একজন সব্যসাচী নারীর অবির্ভাবের অপেক্ষায় থাকবো। এমন একজন বিদূষী নারী শুধু সে যুগেই নয়, এ যুগেও অনন্যা।

শেয়ার করুন