চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

একুশের প্রথম কবিতা বাজেয়াপ্ত করে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ

দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান আলাদা হওয়ার পর বাংলা ভাষার অবস্থান নিয়ে বাঙালি বুদ্ধিজীবী মহলে সংশয় বাড়তে থাকে। ১৯৫২ সালে ঢাকার সঙ্গেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে চট্টগ্রামে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন কবি মাহবুব-উল আলম চৌধুরী এবং যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন চৌধুরী হারুনুর রশীদ এবং এম এ আজিজ।

 

৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হরতাল পালিত হয়। ঢাকায় ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণের খবর শোনার পর মাহবুব-উল আলম চৌধুরীর রচনা করেন ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ নামের কবিতাটি। যা একুশের প্রথম কবিতা।

 

এর কিছুদিন আগে তিনি জলবসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অসুস্থতার জন্য মাহবুব-উল আলম চৌধুরীর হাতে লিখতে পারতেন না। তিনি বলে যাচ্ছিলেন কবিতার পঙ্ক্তিগুলো আর সহকর্মী ননী ধর তা লিখে নেন।

 

রাতে আন্দরকিল্লায় কোহিনূর ইলেক্ট্রিক প্রেসে কবিতাটি পুস্তিকা আকারে প্রকাশের দায়িত্ব নেন সাংবাদিক-সাহিত্যিক খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস। উদ্দেশ্য ছিল সারারাত প্রেসে কাজ করে পরদিন সকালে গোপনে পুস্তিকাটি প্রকাশ করা। এক ফর্মার এই পুস্তিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ছিল শিরোনাম ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ এবং নিচে কবি মাহবুব-উল আলম চৌধুরীর নাম। প্রকাশক হিসেবে নাম ছিল কামালউদ্দিন খানের এবং মুদ্রাকর হিসেবে নাম ছিল প্রেস ম্যানেজার দবিরউদ্দিন আহমদের।

 

শীতের রাতে যখন কম্পোজ ও প্রুফের কাজ শেষের পথে। ঠিক সে সময়ে তখনকার পুলিশ সুপার আলমগীর কবীরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ প্রেসে হানা দেয়। প্রেসে উপস্থিত কর্মচারীদের বুদ্ধিতে লুকিয়ে যান খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস এবং রক্ষা পায় সম্পূর্ণ কম্পোজ ম্যাটার। পুলিশ পুরো প্রেস তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কিছু না পেয়ে ফিরে যায়। পরে কোহিনূর ইলেক্ট্রিক প্রেসের কর্মচারীরা গোপনে পুস্তিকাটি প্রকাশ করে। তারা প্রায় ১৫ হাজার কপি বিক্রয় ও বিতরণের জন্য মুদ্রণ ও বাঁধাইয়ের কাজ শেষ করে। ঢাকায় গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ২৩ ফেব্রুয়ারি সমগ্র চট্টগ্রামে সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়।

 

লালদিঘি ময়দানে বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভার জনসমুদ্রে ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন চৌধুরী হারুনুর রশীদ। কবিতা শুনে বিক্ষুব্ধ জনতা স্লোগান দেয় ‘চল চল ঢাকা চল, খুনি লীগশাহীর পতন চাই’, ‘লীগ নেতাদের ফাঁসি চাই, নুরুল আমিনের কল্লা চাই।’ এর কয়েকদিন পরেই সে সময়কার মুসলিম লীগ সরকার কবিতাটি বাজেয়াপ্ত করে।

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট