চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

মাহবুব উল আলমের  ‘মোমেনের জবানবন্দী’ তে স্রষ্টা-ধারণা

জয়নব তাবাসসুম বানু

৯ আগস্ট, ২০১৯ | ৭:৩৬ অপরাহ্ণ

‘Freedom began the day the first sheep wandered away from the herd’

মারটি রুবিনের এহেন উক্তি রক্ষণশীল সমাজে বসবাসরত একজন মুক্তবুদ্ধি চর্চায় নিবেশিত মানুষকে ভেবেই লেখা। একজন স্বশিক্ষিত মানুষ, যিনি সমাজের প্রচলিত ধর্মীয় গোঁড়ামো থেকে বেড়িয়ে সুস্থ ও সুষ্ঠু চিন্তা করতে পারেন, সমাজকে অন্যভাবে দেখতে পারেন, তিনি একজন নন-কনফর্মিস্ট। আধুনিক বাংলা মুসলিম সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল কথাসাহিত্যিক মাহবুব উল আলম (১৮৯৮-১৯৮১) এমনই একজন প্রগতিশীল নন-কনফর্মিস্ট, যিনি তার কালের সীমা পেড়িয়ে দেখতে ও লিখতে পারতেন। তিনি মূলত একজন ঔপন্যাসিক ও ইতিহাসবিদ হলেও ছোটগল্প লেখাও ছিলেন পারদর্শী। তার লেখায় সমাজ ও মানুষের এক বাস্তবিক দিক ফুটে উঠেছে সুনিপুণভভাবে। তার এই বাস্তবধর্মীতাই তাকে অন্য সব লেখক থেকে আলাদা করেছে, অনন্য করেছে। তার লেখার জীবনবোধ অগণিত পাঠকের মন ছুঁয়েছে। সমালোচনাও হয়েছে বটে, তবে সেসবও তাকে একজন সাহসী ও স্পষ্টবাদী লেখক হিসেবে মহিমান্বিত করেছে। মানুষের মন, একে অপরের মধ্যেকার প্রকাশ্য- অপ্রকাশ্য সম্পর্ক, মনের গোপন চাহিদার কথা তিনি সাবলীল ভাষায়, প্রাঞ্জল ভঙ্গিমায় তুলে ধরেছেন। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাঙালি মুসলিম সমাজে যেসব বিষয় নিয়ে লেখায় এক রকমের অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা ছিল, তিনি সেসব বিষয়কে পাঠক সমাজের সামনে তুলে ধরেছেন। তার এই প্রয়াস বাংলা মুসলিম সাহিত্যের জগতে এক সাহসিক সংযোজনই বটে।

এবছর ‘মোমেনের’ ১২১ তম ভূমিষ্ঠ দিবস। ১৮৯৮ সালের ১লা মে চট্টগ্রামের ফতেহাবাদে বিখ্যাত মৌলভী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কথাসাহিত্যিক মাহবুব উল আলম। তার পরিবার সেসময়কার চট্টগ্রামের বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী ও ধার্মিক পরিবারগুলোর মধ্যে একটি ছিল। তবে ধার্মিক হলেও তার পরিবারে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মুক্তবুদ্ধির নিয়মিত চর্চা হত। তার বাবা মৌলভী নসিহউদ্দীন

একজন প্রগতিশীল আলেম ছিলেন। মা আজিমুন্নেছাও ছিলেন স্বশিক্ষিত নারী। বাবা-মায়ের শিক্ষা ও আদর্শেই তার শৈশব ও কৈশোর কাটে যা তাকে বাস্তববাদী ও সাহসে কথাসাহিত্যিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মাহবুব উল আলম ১৯১৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উন্নীত হবার পরেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরিবারের হাল ধরেন। দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকেই তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। পরবর্তী জীবনে সরকারি চাকুরীজীবী হলেও লেখালেখি কখনো ছাড়েননি। তিনি একজন যোদ্ধাও ছিলেন। তার যুদ্ধের অভিজ্ঞতা পাওয়া যায় তার লেখা ইতিহাসধর্মী বইগুলোতে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপরে লেখা তার চার খন্ডের বই ‘বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধের ইতিবৃত্ত’ বাংলাদেশের যুদ্ধ বিষয়ক একটি বিশেষ দলিল। তিনি বাঙালি পল্টনে যোগ দিয়ে তিন বছর কাটান মেসোপটেমিয়াতে। সেই অভিজ্ঞতার কথা তিনি লেখেনন তার ‘পল্টন জীবনের স্মৃতি’ বইতে।

ইতিহাসধর্মী লেখার পাশাপাশি তিনি উপন্যাস লিখে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। তার লেখা ‘মফিজন’একটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাসিকা। এখানে তিনি মানুষের সুপ্ত ও গোপন দিকগুলো অবলীলায় তুলে ধরেছেন। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বাঙালি পাঠক ও সমালোচক সম্প্রদায় নারীর বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ এমন বর্ণনা পাঠের জন্য প্রস্তুত ছিল না। তাই ’মফিজন’ আলোচিত হওয়ার চেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছিল। তবে সকল সমালোচনার বক্রবাণ অতিক্রম করে ‘মফিজন’ জ্ঞানীগুণী মহলের ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিশিষ্ট লেখিকা সুফিয়া কামাল বলেছেন, ‘সবাই শুধু মফিজনের দোষই খুঁজিল,কেউ তাহার কষ্টটা বুঝিল না’। লেখক এমন দু:সাহসিক উপন্যাসের পাশাপাশি বেশ কিছু ছোটগল্পের বইও লিখেছেন; তন্মধ্যে ‘পঞ্চঅন্ন’, ‘তাজিয়া’, ‘তাজা শিংগি মাছের ঝোল’ অন্যতম।

মাহবুব উল আলমের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ তার আত্মজৈবনিক উপন্যাস ‘মোমেনের জবানবন্দী’ যা ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় অনুদিত হয়েছে এবং বিশ্বসাহিত্যের পাঠক সমাজের সমাদর ও প্রশংসায় সিক্ত হয়েছে। এই বইটি প্রমাণ করে লেখকের nonconformism। বইটিতে তিনি তার জীবনের বিভিন্ন বয়সের ও পর্যায়ের খন্ড খন্ড অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরার মাধ্যমে একটি অখন্ড concept বা ধারণার অবতারণা করেছেন। একজন শিশু, কিশোর ও যুবকের জবানবন্দীতে স্রষ্টাধারণা ও অস্তিত্ববাদ ফুটে উঠেছে। মাহবুব উল আলমের লেখনীর অপরাজেয় ক্ষমতা পাঠককে ভাবতে বাধ্য করে স্রষ্টা ও স্রষ্টাকেন্দ্রিক প্রচলিত ধারণা নিয়ে।

‘মোমেনের জবানবন্দী’ হল একজন সাধারণ মানুষের মোমেন বা বিশ্বাসী হয়ে ওঠার একটি সুস্পষ্ট দলিল, যেখানে আছে বাস্তবতা, কুসংস্কার থেকে বেড়িয়ে আসার প্রবল ইচ্ছা এবং self – criticism। এটি লেখকের আত্মজৈবনিক বলেই তার নিজের গল্প। বইটিতে লেখক অকপটে লিখেছেন তার মোমেন হয়ে ওঠার পেছনে এক গুচ্ছ ধারণা ও ভ্রান্ত ধারণার আনাগোনা। তিনি অবলীলায় স্বীকার করেছেন তার বিশ্বাসের দোদুল্যমানতা। তিনি লিখেছেন, ‘কিসে আমি বিশ্বাস করি তাহা বর্ণনা করা শক্ত। কারণ, আমি যাহাতে বিশ্বাস করে আসিয়াছি তাহা বরাবর এক পদার্থ থাকে নাই।’ তিনি আত্মসমালোচক হয়েই তার গল্প বলেছেন এবং দেখিয়েছেন কিভাবে স্রষ্টা তার কল্পনার সীমিত জায়গা ছেড়ে তার ‘জীবনের সর্বাপেক্ষা dynamic কেন্দ্রে’ পরিণত হন। লেখক নিঃসন্দেহে আত্মসচেতন, আত্মবিশ্লেষক ও আত্মসমালোচক ছিলেন, আত্মবিমুগ্ধ নয়। তাইতো তিনি জীবনের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের আলোকে বুঝতে পেরেছিলেন যে ঈশ্বর বহির্বিশ্বের বস্তুবাচকতায় থাকেন না,তিনি থাকেন মানুষের অন্তঃপুরের বিশ্বাসের মাঝে। বহির্বিশ্বে স্রষ্টার অস্তিত্ব খোঁজার চেষ্টায় মানুষ ধর্মান্ধ হয়ে যায়, ধর্মপ্রাণ না।

‘মোমেনের জবানবন্দী’র প্রথম প্রকাশকাল ১৯৪৬ সাল হলেও এতে লেখক তার ছেলেবেলার সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থার কথা লিখেছেন। ১৯০৫-০৬ সালে হিন্দু-মুসলমানের দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক ও বিভাজন তার শিশুমনে ও শৈশবের কল্পনাময় জীবনে প্রভাব বিস্তার করে। শৈশবে তিনি ও তার সহপাঠীরা ভাবতেন আকাশের একেকটা মেঘ যেন একেকটা আল্লাহ্। পৃথিবীর সকল একেশ্বরবাদ ধর্মের মতবাদ অনুসারে স্রষ্টা নিরাকার। কিতাব আর প্রচলিত কল্পনার আল্লাহর মধ্যে ফারাকটা সাকার এবং নিরাকারের মতই বিপরীতার্থক। যেমন লেখকের শিশুমন আল্লাহকে আকাশের মেঘের মত করে ভাবতেন, আবার আল্লাহর একেশ্বরবাদীতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

লেখক আরও স্বীকার করেছেন আল্লাহকে মনুষ্যরূপে চিন্তা করার হেয়ালির কথা। এমন হেয়ালি যে আসলে শিশুমনের এক ধরণের প্রবৃত্তি। যেমন তার ক্ষুদে মেয়েকে আল্লাহর ধারণা সম্পর্কে প্রশ্ন করায় সে জবাব দিলো,‘আল্লাহ এক প্রকাণ্ড পুরুষ, চিত হয়ে আকাশে শুইয়া আছেন’। বলা বাহুল্য, আল্লাহর ধারণা মানুষের মনে বস্তুবাচক তো বটেই, পুরুষবাচকও। পুরুষকেন্দ্রিক সমাজের আল্লাহ পুরুষবাচক, যদিও স্রষ্টা এবং ধর্ম সংক্রান্ত যাবতীয় শিক্ষার অন্যতম প্রধান উৎস পরিবারের নারীরা। মাহবুব উল আলমের লেখায়ও নারীর ভূমিকা বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে। তার ধর্মীয় জ্ঞান ও সহবৎ শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন মূলত তার মা ও তার নানি। তাদের জ্ঞানও উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ছিল। প্রচলিত ধারণা থেকে বেড়িয়ে না এসে তারা সেই জ্ঞানই প্রচার করেছেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মাঝে। যেমন নামাজ আদায় করা এবং কুরআন তিয়াওয়াত করা একটি অত্যাবশ্যক গুণ ছিল তখনকার মেয়েদের। তবে অর্থসহকারে কেউ কুরআনকে আত্মস্থ করতো না। তাই এমন সাকার আল্লাহর ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত ছিল যা মূলত আল্লাহকে এক বস্তুবাচক স্রষ্টায় পরিণত করতো। মেঘকে আল্লাহ ভাবা বা আল্লাহর বিভিন্ন আকৃতি কল্পনা করার যে প্রবণতা, তার কারণও লেখন খুঁজে বের করেন–আমাদেরই জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা। আমরা সর্বোচ্চ উপরে আকাশ দেখি বলেই মনে করি আল্লাহও যেন আকাশের বিশালতায় আছেন। যেহেতু আল্লাহ সর্বশক্তিমান, সেহেতু ক্ষমতার ফ্লোচার্টে তিনি সবচেয়ে উপরে থাকেন, অর্থাৎ সর্বোচ্চ আকাশে থাকেন। তবে তাকে কেউ দেখতে পারেনা, শুধু চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে পারে। এক্ষেত্রে লালন সাইজির দর্শনের উদ্ধৃতি দেওয়া যায়,‘আকাশ তো দেখে সকলে, খোদা দেখে কয়জনে?/ কেন জিজ্ঞাসিলে খোদার কথা দেখাই আসমানে?’

হেগেল বলেছেন স্রষ্টা সীমিত বাস্তবতা থেকেই সৃষ্ট এক ধারণা। মানুষের প্রচলিত বিশ্বাসও এমন যা মাহবুব উল আলম তার বইয়ে লিখেছেন। স্রষ্টা অদৃশ্য এবং নিরাকার। তিনি সর্বত্র বিরাজমান। অথচ মানুষ আল্লাহকে উর্ধাকাশের সীমিত বিশালতায় খুঁজে বেড়ায়। লেখক বড় হওয়ার এক পর্যায়ে অনুভব করলেন স্রষ্টা বহির্জগতেরর কোথাও নেই, বরং আছেন অন্তর্জগতের চালক হিসেবে। তিনি লেখেন, ‘জীবনের বড় বড় অনুভূতি বিপর্যয়ের পর আমি তাঁকে দেখিতে পাইয়াছি অন্তর্জগতে–আমার যন্ত্রীরূপে’। তিনি জানলেন ‘বিশ্বাসীর হৃদয় আল্লাহর আসন’ এই কথাটি বুঝতে তাকে পার করতে হয়েছেন আরো অনেক স্রষ্টা-ধারণার ব্যাপক সব অভিজ্ঞতা। শৈশবের সাকার আল্লাহ স্কুলে গিয়ে হলে গেল কিতাবি আল্লাহ, মুখস্থ আল্লাহ, যার জ্ঞান চাপানো হত, গেলানো হত পরীক্ষার খাতায় উগ্রে দেওয়ার জন্য। স্কুলের আল্লাহও যেন ‘divide and rule’ নিয়ম মেনে চলতেন। সেখানে ‘ঈশ্বর হিন্দুর ছিল এক, মুসলমানের ছিল অপর’। এই দলীয় আল্লাহকে নিয়েই স্কুলে দলাদলি চলত। কার আল্লাহ কতটা ক্ষমতাবান। সেসময় আল্লাহপ্রীতির চেয়েআল্লাহভীতির প্রচলন ছিল বেশি। নানান রকমের কুসংস্কার ও অপব্যাখ্যার কারণে আল্লাহ binary opposition এর খপ্পরে পরে গেলেন। ভালোর বিপরীত মন্দ, আল্লাহর বিপরীত শয়তান। সমস্ত ভালো কাজের দায় আল্লাহর। পক্ষান্তরে সমস্ত খারাপ কাজের দায়ভার শয়তানের উপর ন্যস্ত করা হত।

আকাশের বিদ্যুৎ চমকানো থেকে শুরু করে somnambulism কিংবা বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেদের ‘শেজে মোতা’ সবকিছুই ‘শয়তানের কুমন্ত্রণা’ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হত। প্রথমে স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে লেখক এসব অন্ধবিশ্বাসে কান দিলেও পরবর্তীতে সমস্ত ঘটনার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা খুঁজে পান। তারপর তিনি স্বীকার করেন ‘আমি এমন আল্লাহয় বিশ্বাস করিনা যা শয়তানের সহিত coexistent’ ।

আল্লাহর প্রতি প্রেম না জাগিয়ে ভয় জাগানোর ফলে লেখক স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন বারংবার। বন্ধু সুধীরের বক্তব্য- ‘ভগবান নাই, উহা মানবমনের প্রকান্ড একটা ভয় মাত্র’ তার মগজে গেঁথে যায়। তিনি বিমর্ষ হয়ে পড়েন। তারপর তিনি স্রষ্টাকে তার নিজের ভেতরেই আবিষ্কার করেন তার চালনাশক্তি হিসেবে। সোরেন কিরকেগার্ড বলেছেন, স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টাই স্রষ্টাকে বস্তুতে পরিণত করে। আর বস্তুবাচক স্রষ্টা কল্পনার পুরুষবাচক স্রষ্টার মতই বিভ্রান্তিকর। লেখক তার মা ও নানির কাছে মূলত ধর্মীয় শিক্ষা পান। তাই তিনি তাদের খুব ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। তাদের নামাজে মোনাজাত করার ধরণ দেখেই তিনি বুঝতে পারেন যে মানুষ মূলত স্রষ্টাকে বহির্বিশ্বে খুঁজে বেড়ায়, বস্তু কিংবা প্রতীকের মাঝে খুঁজে বেড়ায়। অথচ স্রষ্টা থাকেন ব্যক্তির অন্তঃপুরের বিশ্বাসের আসনে।

মাহবুব উল আলম একটি ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন, বড় হয়েছেন, যেখানে ‘ভালো মুসলমান’ হওয়ার বেশ কিছু মানদণ্ড ছিল। তিনি অনুধাবন করেন যে ভালো মানুষ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরো অনেক বেশি। তিনি তার আশেপাশের মানুষকে লক্ষ্য করে দেখেন ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস জীবনকে রসহীন, আমোদহীন করে তোলে। আর সঠিক শিক্ষা ও ভালো মানুষ হওয়ার গুণ মানুষকে অন্ধকার থেকে মুক্তি দেয়। তার জবানবন্দীতে স্রষ্টা কখনও এক জিনিস থাকেননি।

হেগেলের ভাষায় বলা যায় স্রষ্টা ছিলেন ‘one damn thing after another’। তিনি যখন মোমেন হলেন তখন তিনি স্রষ্টাকে পেলেন ‘জীবনের সর্বাপেক্ষা dynamic কেন্দ্র হিসেবে’।

‘মোমেনের জবানবন্দী’ মাহবুব উল আলমের দূরদর্শিতার একটি উল্লেখযোগ্য প্রমাণ। লেখক তার সময়ের সীমারেখা পেড়িয়েও আরও অনেক দূরে দেখতে পারতেন। কথাসাহিত্যিক মাহবুব উল আলম ১৯৮১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু তার লেখা এই আত্মজৈবনিক তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, তার দর্শনকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বইটি তখনকার জন্য যেমন একটি মাইলফলক ছিল, তেমনি এখনকার জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ বই। ধর্মীয় গোঁড়ামির গোড়লিতে পিষ্ট হয়ে আজ যখন মানবজীবন বিপন্নের পথে,তখন কথা সাহিত্যিক মাহবুব উল আলমের এই সুস্পষ্ট লেখনী একটি অত্যাবশকীয় পাঠ্য।

 

লেখক : লেকচারার, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ,চট্টগ্রাম ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট