চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

দেবপ্রসাদ দাস দেবু’র চট্টগ্রামে শেখ হাসিনা : একটি অপ্রকাশিত ইতিহাস

অনুপম চৌধুরী

২৬ জুলাই, ২০১৯ | ১:২৩ পূর্বাহ্ণ

চর্যাপদের হাত ধরে বাংলা ভাষার সৃষ্টি হলেও সেই ভাষার জন্যেও কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। কালের স্রােতে সব ভেসে গেলেও ইতিহাস কিন্তু ঠিকই তার সময় মতো কালের হিসেব নিকেষ করে। বাঙালি জাতির ইতিহাসও হাজার বছরের পুরনো। আর বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের সময়ও কম নয়। এক একটা প্রজন্ম শেষ করে আরেকটা প্রজন্মের শেষ হতেই পূর্ব প্রজন্মের সময়, তাদের কর্ম ইতিহাসে রূপ নেয়। যার হাত ধরে একটা দেশ কিংবা জাতি তার পথচলা অক্ষুণœ রাখে। হাজারো প্রজন্মের হাত ধরে বাঙলার ইতিহাসের পথচলা এখন একবিংশ শতাব্দীতে। একাত্তরের বিশাল আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলার উদ্ভব। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি জনবহুল ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানকে হারিয়ে দেশটি বিশ্ব-মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়।
বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নেতা হলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যাঁর রাজনৈতিক ইতিহাস বাঙালির জন্যে আয়না স্বরূপ। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তাঁর পথচলাও সুদীর্ঘ কালের। তাঁকে ঘিরে আজকের এ আয়োজন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পূর্বাপর শেখ হাসিনা রাজনৈতিক রাষ্ট্রীয় নানা কাজে বিভিন্ন সময় চট্টগ্রামে এসেছেন। সুখে-দুখে এই অঞ্চলের মানুষের সাথী হয়েছেন। তাঁর সেই সফরের ধারাবাহিকতায় ইতিহাস নির্ভর এক অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা দেবপ্রসাদ দাস দেবু। যে অ্যালবামের ছবিগুলো দেবপ্রসাদ দাস দেবু নিজেই তাঁর ক্যামেরায় ধারণ করেছেন বিভিন্ন সময়। অ্যালবামের শিরোনাম ‘চট্টগ্রামে শেখ হাসিনা : একটি অপ্রকাশিত ইতিহাস’। যার প্রতিটি পৃষ্ঠা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপ্রকাশিত স্থিরচিত্র। স্থিরচিত্রের অ্যালবামটি প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে। এটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেসা মুজিবকে উৎসর্গ করা হয়।
ড. অনুপম সেন তাঁর ভূমিকায় লিখেছেন, ‘দেবপ্রসাদ দেবু সংকলিত ‘চট্টগ্রামে শেখ হাসিনা : একটি অপ্রকাশিত ইতিহাস’ নামক ফটো অ্যালবাম বা আলোকচিত্র সংকলনের বইটি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রায় তিন দশক ধরে জন-অধিকার সংগ্রামের ইতিহাস-মানুষকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা-প্রদানের সংগ্রামের ইতিহাস।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিক্রিয়া তার বিকট-আস্যে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জনকে যখন সম্পূর্ণভাবে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, ঠিক সে-সময়েই; ১৯৮১ সালের মে মাসে, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এলেন। সেদিন বোঝা যায়নি, তাঁর নাতিদীর্ঘ-দেহে তিনি তাঁর পিতার প্রতিশ্রুত বাঙালির মুক্তির জন্যে কি বিরাট অঙ্গীকার ও সংকল্প ধারণ করে আছেন। দেবু প্রসাদ দেবুর ফটো আলেখ্য এই অঙ্গীকার ও প্রত্যয়কেই মূর্ত করার চেষ্টা করেছে। ফটো-আলেখ্যের শুরু ১৯৮৫-এর ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে।’
ভূমিকার অন্য এক জায়গায় তিনি বলেছেন, ‘অধিকার সংগ্রামের বহ্নিশিখা শেখ হাসিনা; শেখ হাসিনাকে নিয়ে এরকম আলোকচিত্রের গ্রন্থ হয়তো আরো হাজারটি করা যেতে পারে। কিন্তু এখনো তা কেউ করেননি। করাটা দরকার ইতিহাসের স্বার্থে। দেবু এই কাজটি করে আমাদের ধন্যবাদর্হ হয়ে রইলেন।’
অ্যালবামটির প্রকাশক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। অ্যালবামের নিজ বাণীতে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে বিশাল জনসমাবেশ থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দাবি করেছিলেন। চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সে সময়ের রাজনৈতিক কর্মকা- নিয়ে ‘চট্টগ্রামে শেখ হাসিনা : একটি অপ্রকাশিত ইতিহাস’ নামে একটি তথ্য সমৃদ্ধ ফটো অ্যালবাম বের হতে যাচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত।’
অ্যালবামটির শুরুতেই রয়েছে ২০১৫ সালের ২৮ নভেম্বর চিত্র সাংবাদিক দেবপ্রসাদ দেবু তাঁর কর্ম নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে যে দেখা করেন তার একটি স্থিরচিত্রসহ ক্যাপশান। তারপরেই প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে থেকে বাইনোকুলার দিয়ে কি যেন দেখছেন তার চিত্র, নিচে লেখা আছে-
তোমার প্রজ্ঞাময় দৃষ্টি জানি দূরে, বহুদূরে প্রসারিত
তুমিই করবে জানি, জাতির চলার পথ চিরঅবারিত।
কী দেখিতে পাও দূরে, আলো? নাকি বড় অন্ধকার?
খুলে দাও, তুমিই খুলতে পারো চিরবন্ধ দ্বার।
এভাবেই পরপর প্রধানমন্ত্রীর ৬ টি ছবির সাথে ৪ টি করে লাইন দেয়া চিত্র। ১৯৮৪ সালে জাতির পিতা হত্যার বিচারের দাবিতে লালদিঘি ময়দানে স্মরণাতীতকালের বিশাল সমুদ্রে বক্তব্য রাখা জননেত্রীর ছবি দিয়ে এগিয়ে যায় অ্যালবামটির পৃষ্ঠা। যার পরতে পরতে নানা ঘটনার ছবি দিয়ে ভরিয়ে তোলা হয়। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো ১৯৮৫ সালের ঘূর্ণিঝড়, ১৯৮৮ সালের চট্টগ্রাম গণহত্যা, ১৯৯০ সালে সংখ্যালঘু নির্যাতন, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়, ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচন, ১৯৯৮ সালের সিটি করর্পোরেশন নির্বাচন, ২০০১ সালের গোপালকৃষ্ণ মুহুরী হত্যা, ২০১০ সালে নতুন ব্রিজ (শাহ আমানত সেতু) উদ্বোধন, ২০১৩ সালে ভুজপুর ট্রাজেডিসহ নানা ঘটনায় ঘিরে সাথে শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সফরের ছবি। যা অপ্রকাশিত দলিল হিসেবে জাতির কাছে অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে।
পরিশেষে দেশনেত্রীকে নিয়ে করা এ কাজ নিঃসন্দেহে প্রসংসার কাজ এবং সাহসীও বটে। ‘চট্টগ্রামে শেখ হাসিনা : একটি অপ্রকাশিত ইতিহাস’-দেবপ্রসাদ দাস দেবু। প্রচ্ছদ-বিশ্বজিৎ দাশ। প্রকাশক-এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন। পৃষ্ঠা-২৪৮। মূল্য-১০০০ টাকা। অ্যালবামটির প্রচার ও প্রসার কামনা করছি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট