চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বিদ্রোহী কবির ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ আগস্ট, ২০২১ | ১২:৪২ অপরাহ্ণ

‘সারাদিনমান কোলাহল করে
কাহারো ধেয়ান ভাঙিবো না’
আজও উল্লেখিত পঙক্তি মৃত্যুচেতনার বেলায় প্রাসঙ্গিক। মহা-বিদ্রোহের রণতূর্য বাদক, যৌবনের পূজারি কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। প্রেম, মানবতা ও সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ সালে ২৫ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট (১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো এই মহান পুরুষ যুগ যুগ ধরে বাঙালির মানসপটে চির ভাস্বর হয়ে আছেন। দানবীয় বিরাটত্ব নিয়ে বাংলা সাহিত্যের আকাশ যখন পুরোটাই দখল করে নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঠিক সেই সময় কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব। সেই আবির্ভাব পর্বেই বুঝি দিয়েছিলেন, তিনি ধূমকেতু হতে আসেননি, ধ্রুব তারা হতে এসেছেন এবং ধ্রুব তারা হয়েছেন।
নজরুল চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি প্রায় ৩ হাজার গান রচনা করেছেন। অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশী, দোলন চাঁপা, ছায়ানট, ইত্যাদি তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা তার উপন্যাস। ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলিমালা ইত্যাদি তার বিখ্যাত গল্পগ্রন্থ।
তিনি সুগায়ক ছিলেন। ‘ধ্রæব’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেন। কমরেড মুজাফ্ফর আহমদ, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন তার বন্ধু। নজরুল যেমন রবীন্দ্রনাথকে তার বই উৎসর্গ করেছেন, তেমনি রবীন্দ্রনাথ তার ‘বসন্ত’ নাটক উৎসর্গ করেন নজরুলকে।
অভাব ছিল নজরুলের চিরসঙ্গী। তিনি জগতের দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষের দুঃখ-কষ্ট গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে হঠাৎ করেই তার সাহিত্যসাধনা স্তব্ধ হয়ে যায়। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা-গান ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অন্যতম প্রেরণা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবিকে নিয়ে আসেন এবং তাকে বাংলাদেশের জাতীয় কবির সম্মান দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাব ও তত্ত্বের জায়গায় প্রেম এবং দ্রোহ, নিগূঢ় দর্শন জায়গায় সাম্য-মানবতার গান গাইলেন নজরুল। পাকা করে নিলেন বাংলা সাহিত্যে নিজের স্থান। যে স্থান আজ পর্যন্ত কেউ নিতে পারেনি। অদূর ভবিষ্যতে পারবেন বলেও মনে হয় না। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বাংলা সাহিত্যে যে নামটি উচ্চারিত হয়, সেটি কাজী নজরুল ইসলাম।
তিনি শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তার কলম ধারালো তলোয়ারের মতো কাজ করেছে। তার প্রতিটি লেখনি ব্রিটিশ শাসনের ভিতকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। তিনি বার বার শাসকদের কোপানলে পড়েছেন। নিক্ষিপ্ত হয়েছেন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। কিন্তু আদর্শচ্যুত হননি। মাথা নত করেননি অন্যায়ের কাছে। কারো সঙ্গে করেননি আপসরফা।
তার শিক্ষা জীবন কেটেছে রাণীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুল, মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুল, ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরাম স্কুলে। কিন্তু নিদারুণ দারিদ্র্য তাকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করতে দেয়নি। সিয়ারসোল রাজ স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন নজরুল।
করোনাভাইরাসের কারণে কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুদিনে তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। তবে রেডিও, টেলিভিশন, দৈনিক সংবাদপত্র ও অনলাইন নিউজপোর্টালগুলো নজরুল জয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও প্রকাশ করবে।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট