চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পবিত্র আশুরার শিক্ষা ও তাৎপর্য

১৩ আগস্ট, ২০২১ | ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ

হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। কালের আবর্তে হারিয়ে গেল আরও একটি হিজরি বছর। এ মহররম মাস থেকে শুরু ১৪৪৩ হিজরির যাত্রা। বহু ঐতিহাসিক তাৎপর্যময় ঘটনা সংঘটিত হয়েছে মহররম মাসের ১০ তারিখে। ইসলামি বর্ষ পরিক্রমায় এ দিন আশুরা নামে অভিহিত। এ দিনে হযরত আদম (আ.)-এর পৃথিবীতে আগমন এবং তাঁর তাওবাহ কবুল থেকে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হলেও কারবালা প্রান্তরের মর্মান্তিক হৃদয় বিদারক ঘটনাই মুসলিম বিশ্ব স্মরণ করে আসছে এবং পবিত্র আশুরা হিসেবে পালন করছে। ধর্মের নামে অধর্ম ও অন্যায়ের অশুভ শক্তি ইসলামের সত্যবাণী ও ন্যায় ধর্মকে আঘাত করা হয়েছিল বলে কারবালার রক্তাক্ত ঘটনার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল।

ইসলামের চার খলিফার স্বর্ণযুগ অতীত। দূরাত্না এজিদ তখন রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র ও পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্টার স্বপ্নে বিভোর। প্রিয় নবীর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এ অন্যায় মেনে নিতে পারেনি। ন্যায় ও সত্যের পতাকা সমুন্নত রাখায় লক্ষ্যে অবিচল ও আপসহীন থাকায় চাপিয়ে দেয়া হল এক অসম যুদ্ধ। ইমাম হোসাইন (রা.) তাঁর স্বজন ও সহযোদ্ধারা মৃত্যু অবধারিত জেনেও মহানবীর সুমহান আদর্শ রক্ষার দৃঢ প্রত্যয়ে শাহাদতের অমীয় সুধা পান করেন। সত্য প্রতিষ্টার জন্য পরিবার-পরিজন নিয়ে মহান আত্নত্যাগের যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা অনুকরণীয়। তাই পবিত্র আশুরার শিক্ষা হচ্ছে অন্যায় ও অসত্যের কাছে মাথা নত না করা-মিথ্যার কাছে নতি স্বীকার না করা। আজকের এ দিনে প্রকৃত ধার্মিক ও ইমানদার মুসলমানকে এ সত্য উপলদ্ধি করতে হবে। অন্যায় অসত্য রুখে দাঁড়াতে হবে। সত্যের উজ্জ্বল আলোয় দূর হোক মিথ্যার কালিমা। এটিই হোক আমাদের কামনা ও প্রার্থনা।

ইসলামের ইতিহাসে অনেক তাৎপর্যময় ঘটনা সমূহের মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে আছে পবিত্র আশুরা। এ দিন কারবালার প্রান্তরে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদত হওয়ার কারণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হলেও এ পৃথিবী সৃষ্টি, হযরত ঈসা (আ.)-এর আসমানে জীবিত অবস্থায় উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া, হযরত আইয়ূব (আ.)-এর কঠিন রোগ থেকে মুক্তি, হযরত নূহ (আ.)-এর নৌকা ঝড় তুফানের কবল থেকে মুক্তি পাওয়াসহ অসংখ্য ঐতিহাসিক ঘটনায় ভরপুর মহররমের ১০ তারিখ। এ দিনটি মহিমান্বিত ও অবিস্মরণীয়। এছাড়াও এ পৃথিবীর মহাপ্রলয় রোজ কিয়ামত মহররমের ১০ তারিখ ঘটবে বলে উল্লেখ রয়েছে কোরআন ও হাদীসে।

মহররমের ১০ তারিখ আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর পবিত্র শাহাদতের কারণে শোকের স্মৃতি মুসলিম হৃদয়ে জাগ্রত করে। আশুরার হৃদয় বিদারক ঘটনার কারণে হিজরি নববর্ষের প্রথম মাস শোক ও বিষাদময় স্মৃতির আবহে আচ্ছাদিত হয়। ১০ মহররমের তাৎপর্যে আরও জানা যায়, এদিনেই আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন এবং এদিনেই মা হাওয়া (আ.)-এর সঙ্গে মিলিত হন হযরত আদম (আ.)। আবার এদিনেই আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.)-এর তাওবাহ কবুল করেন। এ তারিখেই নূহ (আ.)-এর জাহাজ জুদি পাহাড়ের প্রান্তরে এসে থেমে যায়। এদিনেই ইব্রাহিম (আ.)-কে নমরুদ অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করে এবং ইব্রাহিম (আ.) তা হতে রক্ষা পান। এদিনেই মূসা (আ.) বনি ইসরাঈল বাসীদের নিয়ে নীল নদী পাড়ি দেন এবং মূসা (আ.)-কে ধাওয়াকারী ফেরাউন দলবল নিয়ে নীল নদীতে ডুবে যায়। এদিনেই ইউনুছ (আ.) মাছের পেট থেকে রক্ষা পেয়েছেন।

সর্বোপরি ১০ মহররম পৃথিবী ধ্বংস হবে বলে উল্লেখ রয়েছে কুরআন ও হাদিসে। পবিত্র আশুরার রোযা সম্পর্কে উলামায়ে কেরামগণের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিমত হচ্ছে- শুধুমাত্র ১০ তারিখে আশুরার রোযা পালন করা জায়েয রয়েছে। যেহেতু একাকী একটি মাত্র রোযা রাখার ক্ষেত্রে নবী (সা.)-এর থেকে কোন ধরণের নিষেধাজ্ঞা নেই। বরং তিনি নিজেই তা রেখেছেন। তবে বিভিন্ন হাদিস দ্বারা ইহা প্রমাণিত যে, ১০ তারিখের সাথে ৯ তারিখ অথবা ১০ তারিখের সাথে ৯ ও ১১ তারিখসহ মোট ৩ টি রোযা পালন করা মুস্তাহাব। আর তা এ জন্যই যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-হতে বর্ণিত রয়েছে যে, রাসূল (সা.) যখন মদিনায় আগমন করেন, তখন তিনি নিজেই আশুরার রোযা রাখেন ও রোযা রাখার জন্য সাহাবায়ে কেরামকে আদেশ দেন।

তখন সাহাবায়ে কেরামগণ আপত্তির সূরে বলেন যে, ওহে নবী! (সা.) ইহা এমন এক দিবস, যে দিবসের প্রতি ইয়াহুদ ও খৃষ্টান ধর্মালম্বীরা যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। তখন এ দ্বন্দ্ব নিরসনকল্পে রাসুল (সা.) বলেন, ঠিক আছে, বেঁচে থাকলে মুহররমের ৯ তারিখসহ আমরা আগামী বৎসর রোযা পালন করবো-ইনশাআল্লাহ। আগামী বৎসরের আগেই তিনি ইন্তেকাল করায় মুহররমের ৯ম তারিখ রোযা পালনের সুযোগ হয়নি। সহীহ মুসলিম। নাইলুল আওতার গ্রন্থে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে মুহররমের ৯, ১০, ১১ এ তিন দিন রোযা পালন উত্তম। সুতরাং আশুরার রোযার তিন স্তর।

১) শুধু আশুরার দিন রোযা পালন

২) ৯ম ও ১০ম অথবা ১০,১১ এ দুদিন রোযা পালন

৩) ৯ম ১০ম ও ১১তম দিবস সমূহে ধারাবাহিক তিনটি রোযা পালন।

 

লেখক : অধ্যক্ষ, প্রাবন্ধিক ও ইসলামি চিন্তক।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট