চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনায় দিনকাল

নাট্যকর্মীদের সম্বল পাঠ নাটক

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২৬ মে, ২০২১ | ৭:৪২ অপরাহ্ণ

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে মঞ্চ নাটকে। অনলাইনে থিয়েটার চর্চায় কখনো অভিনয়ের সম্পূর্ণতা আসে না। অভিনয় হচ্ছে জীবিত মানুষের সাথে জীবিত মানুষের ক্রিয়া। নাটকে শুধু অভিনয়ই নয়, সমান গুরুত্বের সাথে থাকে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সংমিশ্রণ, গান ও নাচ। যা কখনোই অনলাইনের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। এমনই মনে করছেন চট্টগ্রামের স্বনামধন্য নাট্যশিল্পীরা। তবে নাট্যকর্মীরা বলছেন, এমন অপ্রাপ্তির মাঝে কিছুটা প্রাপ্তি হচ্ছে দেশের মাটিতে বসে অনলাইনের বদৌলতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে পাঠ অভিনয় (কণ্ঠের মাধ্যমে অভিনয়কে ফুটিয়ে তোলা) অংশগ্রহণ করা। এখানে বিভিন্ন দেশের নাট্যকর্মীরা তাদের নিজস্ব ভাষায় পাঠ নাটকে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া একেবারে কিছু না হওয়ার চেয়ে মোটামুটি একটা অনুশীলন হচ্ছে। একুশে পদক প্রাপ্ত নাট্যশিল্পী ও তির্যক নাট্যদলের দলপ্রধান আহমেদ ইকবাল হায়দার বলেন, থিয়েটার মানে কাছে আসতে হবে। নাটকের চরিত্র কখনোই দূর থেকে ফুটিয়ে তোলা যায় না। অনলাইনে থিয়েটার হয় না। নাটক মানেই জীবন্ত মানুষের সাথে অন্য জীবন্ত মানুষের ক্রিয়া। নাটক অনেকটা পরিবেশের উপর নির্ভর করে। আবার দর্শক ও আমাদের মুডের উপরও নির্ভরশীল। আমি পার্সোনালি নাটকটা অনলাইনে করে তৃপ্তি পাই না। অনলাইনে নাটকের ফিলিংসটা পাওয়া যায় না। তবে অনলাইনে রিহার্সেল করার কারণে অনুশীলনটা হচ্ছে। যেটা আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আমাদের মঞ্চে ফিরতে সহযোগিতা করবে বলে আমি মনে করি।

গণায়ন নাট্য সম্প্রদায়ের দলপ্রধান অধ্যাপক ম. সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, করোনা আন্তর্জাতিক সমস্যা। এখানে আমাদের হতাশ না হয়ে সচেতনতার সাথে মোকাবেলা করতে হবে। তবে অবশ্যই কষ্ট লাগছে কারণ আগে আমরা পথ নাটক, মঞ্চ নাটক করতাম। যা এখন করতে পারছি না। তিনি আরো বলেন, পাঠ অভিনয় আমাদের কণ্ঠের মাধ্যমে চরিত্র ফুটিয়ে তুলছি। শরীরের ক্রিয়া হচ্ছে না। তবে নাটকে বাচিক শিল্পচর্চার পাশাপশি শরীরের ক্রিয়াটাই মুখ্য। যা অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না।

জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক ও অরিন্দম নাট্য সম্প্রদায়ের সাইফুল আলম বাবু বলেন, মঞ্চের কোনো বিকল্প নেই। নাটক এমন একটা মাধ্যম যেখানে মঞ্চের গুরুত্ব অনেক বেশি। অনলাইনে নাটকের পূর্ণাঙ্গ রূপ ফুটিয়ে তোলা যায় না। গান, আবৃত্তি যে পরিমাণে অনলাইনে হচ্ছে নাটক কিন্তু সেই পরিমাণে হচ্ছে না। কিছু হলেও তাতে মনে তৃপ্তি আসছে না। সাইফুল আলম বাবু আরো বলেন, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে নাটকে। খুবই অল্প পরিমাণে কিছু নাটক সংলাপ আকারে অনলাইনে হচ্ছে। নাটকের রিহার্সেল করা যাচ্ছে না। তবুও আমরা অনলাইনে সংলাপে অংশগ্রহণ করছি। কারণ না হয় পরে সবকিছু শুরু হলে শিল্পীরা হঠাৎ করে মঞ্চে নিজেকে চরিত্রের সাথে ফুটিয়ে তুলতে পারবে না। তার জন্য আমরা নিজেকে প্রস্তুত রাখতে অনলাইনের মাধ্যমে এ রিহার্সেল করছি। যাতে পরবর্তীতে মঞ্চে অংশগ্রহণ করতে পারি।

তিনি আরো বলেন, নাটকে একাধিক মানুষ ও মঞ্চের প্রয়োজন হয়। তাই এ সাংস্কৃতিক চর্চা অনলাইনে হয় না। তবুও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর নাট্যকর্মীরা মঞ্চে প্রবেশ করতে পারবে না। তারজন্য অনলাইনের মাধ্যমে এ রিহার্সেল করা। এছাড়া অনেকে শহর ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছে। তারা আর্থিকভাবে কষ্টে আছে। তাদের আবার মঞ্চে ফেরানো সম্ভব হবে কিনা সেটাই এখন বড় বিষয়।

কালপুরুষ নাট্য সম্প্রদায়ের শুভ্রা বিশ্বাস বলেন, মঞ্চে যেতে পারছি না এটার একটা কষ্ট অবশ্যই আছে। তবে তার একটা বিকল্প তৈরি হয়েছে। অনলাইনে বিশেষ দিনগুলোতে কিছু অনুষ্ঠান হচ্ছে। সেখানে নাটক হচ্ছে। আমরা অনলাইনের মাধ্যমে পাঠ অভিনয় করছি। তবে মঞ্চ বন্ধ থাকলেও আমার কাজ চলছে। আমি বিভিন্ন দিবসের সময় অনলাইনের মাধ্যমে পাঠ নাটকে অভিনয় করছি। এটা আমি করছি বলেই যে ভালো অবস্থানে আছে বলা যায় না। তবে সত্যি হলো, করোনার কারণে নাট্যকর্মীদের অনেক সমস্যার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। বিশেষ করে নাটকে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।

তিনি বলেন, অনলাইনের কারণে এখন আমাদের উপস্থাপনা শুধু দেশের মানুষ নয়, বাহিরের মানুষও দেখতে পারছে। আমরাও তাদের ভাষায় নাটকের সংলাপ শুনতে পারছি।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট