চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর নাজাতের দশকের বেজোড় রাতেই এসে থাকে

রায়হান আজাদ 

৮ মে, ২০২১ | ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ

মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতেই এসে থাকে। হাদীস শরীফে এ রাতটি ঠিক কখন তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এরও একটি গভীর তাৎপর্য রয়েছে। তা হচ্ছে, উম্মতে মুহাম্মদী যেন বরকতময় রমজানের দশ দিনই লাইলাতুল কদর খুঁজতে গিয়ে অত্যধিক ইবাদতে মশগুল থেকে কামিয়াবি হাসিল করতে পারে। বুখারী শরীফে হযরত আয়েশা রদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ ফরমাইয়েছেন, ‘পবিত্র রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রে তোমরা লাইলাতুল কদর তালাশ করবে’।

অনুরূপভাবে মুসলিম শরীফে রেওয়ায়েত হয়েছে, ‘হযরত আয়েশা রদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকের ইবাদতে যত অধিক পরিশ্রম করতেন তত পরিশ্রম আর কখনো করতেন না’।  এ বর্ণনা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, নবীজী রমজানের শেষ দশকে নিজে অত্যধিক পরিশ্রম করে লাইলাতুল কদর সন্ধানের মাধ্যমে তার উম্মতের জন্য অনুপম শিক্ষা রেখে যান। হযরত আবু বকর রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত।

তিনি বলেন, ‘আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে ‘রমজানের শেষের ৯,৭,৫,৩ অথবা শেষ রাত্রি বাকি থাকতে তোমরা লাইলাতুল কদর সন্ধান কর’। – তিরমিজী শরীফ। হযরত উবাদা বিন সামিত রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে লাইলাতুল কদরের খবর দেয়ার জন্য বের হলেন এমন সময় দুইজন মুসলমান কলহ আরম্ভ করল । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আমি তোমাদেরকে লাইলাতুল কদরের খবর দেয়ার জন্য বের হয়েছিলাম। কিন্তু অমুক অমুক কলহে লিপ্ত হল, ফলে আমিও ভুলে গেলাম। সম্ভবত এটা আমাদের জন্য মঙ্গল হয়েছে। সুতরাং তোমরা ২৯,২৭ ও ২৫ রাত্রিতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করবে’- (ছহীহ আল বুখারী)।  ছহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের বর্ণনায় ২৭ রমজানের রাতের উপর বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

তাই যুগ যুগ ধরে মুসলিম উম্মাহর ঘরে ঘরে  রমজানের এ রাতই পবিত্র লাইলাতুল কদর হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। অবশ্য এ রাত রমজান মাসের মধ্যে আবর্তিত হয়ে থাকে। ছহী বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনুল হাজর আসকালানী তার বিখ্যাত ফাতহুল বারীর মধ্যে উল্লেখ করেন, ‘লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশকের যে কোন বেজোড় রাত্রিতে এবং তা পরিবর্তনশীল। লাইলাতুল কদর সংক্রান্ত হাদীসগুলো হতে এ কথাই বুঝা যায়।

এই কল্যাণময় রজনীটি গোপন রাখার রহস্য প্রসঙ্গে গবেষকগণের মতামত হচ্ছে, আমরা জাগতিক ক্ষেত্রে দেখতে পাই, সাধারণত যে জিনিস অধিক মূল্যবান হয় সেই জিনিস লুকায়িত থাকে। এমনিভাবে যে জিনিস বহু দুঃখ-কষ্ট ও পরিশ্রমের পর লাভ করা হয় সেই জিনিস মানুষের অধিক অন্তরঙ্গ ও ভালোবাসার কারণ হয়।

কদর রাত গোপন থাকার রহস্যটিও ঠিক তেমনি একটা ব্যাপার। যেন লোকেরা এই রজনী লাভের মানসে অদম্য প্রচেষ্টায় নিমগ্ন থাকে এবং এ রাতের কল্যাণ ও মাহাত্ম্য লাভে ঐকান্তিক আগ্রহ নিয়ে অধিকমাত্রায় ইবাদাত করে, বেশি বেশি রাত জাগরণ করে নিজেকে মহান আল্লাহর দরবারে উৎসর্গ করতে পারে। অতঃপর সে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অফুরন্ত নিয়ামতসমূহ লাভ করে সৌভাগ্যবান ও ধন্য হয়। যদি এই রজনীকে  গোপন না রেখে প্রকাশ করে দেয়া হত, তাহলে এই রাতের গুরুত্ব কমে যেত এবং ঈমানদারগণ সব ইবাদাত-বন্দেগী পরিত্যাগ করে উক্ত রজনীর উপর নির্ভর করত।

যাই হোক, অত্যধিক ফয়জ-বরকত হাছিলের জন্য আমাদেরকে রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের জন্য কোমর বেঁধে  নেমে পড়তে হবে। মাগফিরাত ও নাজাত লাভে ব্রতী হতে হবে। অত্যধিক পরিশ্রম করে সৌভাগ্যবানদের মাঝে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। আয় আল্লাহ ! তুমি আমাদেরকে এ রমজানের বাকি দিনগুলোতে বেশি বেশি ইবাদত করার তৌফিক দিন; অন্ততপক্ষে জীবনে একবার হলেও লাইলাতুল ক্বদর বখশিশ করুন। আমীন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট