চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রোজার উপকারিতা

রায়হান আজাদ 

১ মে, ২০২১ | ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, সুস্থ জীবন লাভের জন্য বেশি বেশি খাওয়ার প্রয়োজন নেই, বরং কম ও পরিমিত খাওয়াই সুস্থ জীবনের মূলমন্ত্র। প্রখ্যাত মুসলিম চিকিৎসক ইবনে সিনা তাঁর রোগীদের ৩ সপ্তাহের জন্য উপবাস পালনের নির্দেশ দিতেন। বৎসরে ১ মাস রোজা রাখার কারণে মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিশ্রাম ঘটে। মাঝে মাঝে বিশ্রাম দিলে কারখানার মেশিন যেমন অনেকদিন টেকসই হয়, তেমনি রোজার ফলে মানবদেহের নানা যন্ত্রপাতির আয়ু বৃদ্ধি পায় এবং রোগ-শোক কম  হয়।

কোলেস্টেরল (ঈযড়ষবংঃবৎড়ষ) মানব শরীরের একটি প্রয়োজনীয় লিপিড (ষরঢ়রফ) । এটি দেহ কোষের পাতলা আবরণ গঠনের ও হজমের পিত্তরসে ব্যবহৃত হয়। এটি স্নায়ু কোষকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া মানব দেহের ইস্ট্রজেন ও এন্ড্রোজেন নামক প্রজনন হরমোন তৈরিতে এর ভূমিকা মুখ্য। এটি সকল প্রকার স্টেরয়েড (ঝঃবৎড়রফ) সংশোধনের প্রধান ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এর পরিমাণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত হলে উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের রোগ প্রভৃতি সৃষ্টি হয়ে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা সীমিত রাখতে রোজা ও রোজার মাসের পরিমিত খাদ্য গ্রহণ এবং অতিরিক্ত নামাজ যথেষ্ট সহায়ক।

অনিয়মিত খাবার, অত্যধিক চা পান, ধুমপান, দুঃশ্চিন্তা ও টেনশন পেপটিক আলসার সৃষ্টি করে। অনেকে মনে করেন, পেপটিক আলসার রোগীদের রোজায় ক্ষতি করে এবং রোজা রাখা উচিত নয়। এটা কিন্তু ভুল ধারণা। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন, পাকস্থলিতে পারাইটেল নামক একটি কোষ আছে, এ কোষ অনবরত আইসোটনিক হাইড্রোক্লোরিক এসিড বের করে এবং অতিরিক্ত হাইড্রোক্লোরিক এসিডের ফলে পাকস্থলীতে যে গ্যাসট্রিক ও ডিওএডনাল আলসারের সৃষ্টি হয়। সেই এসিড আহারের পর বেশি নির্গত হয়। পাকস্থলী খালি থাকলে এই এসিড কম নির্গত হয়।

রোজা রাখা অবস্থায় পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড কম পাওয়া যায়। রোজার ফলে পেপটিক আলসার বৃদ্ধি পায় না বরং কমে যায়।  মুসলিম গবেষকগণের অভিমত, নিয়মিত রোজা পালনে বৈজ্ঞানিক কারণেই পেপটিক আলসার থেকে মানুষের মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিয়মিত পেট খালি রাখলে এবং নিয়মিত আহার করলে পেটে এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যাতে আলসার বা ক্ষত শুকাতে সহায়ক হয়। ডাক্তার ক্লীভ তার পেপটিক আলসারের গবেষণায় লিখেছেন, ভারত, জাপান, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ নাইজেরিয়াতে অন্যসব এলাকার তুলনায় মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় এই পেপটিক আলসার রোগের প্রকোপ অনেক কম। কেননা তারা সিয়াম পালন করে থাকেন। তাই তিনি জোর দিয়ে বলেছেন-“সিয়াম কোন রোগ সৃষ্টি করে না”।

ডায়াবেটিস হলে ডায়েট নিয়ন্ত্রণ করে চলতে হয়, সুতরাং রোজা এই রোগীদের জন্য উপকার করে। রোজা ডায়াবেটিস, স্থুলকায়ত্ব ও বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। মানব দেহের অগ্নাশয়ে উৎপন্ন ইনসুলিন নামক হরমোন রক্তে মিশে রক্তের শর্করাকে জীবকোষে প্রবেশ ও কার্যকরী করতে সাহায্য করে। ইনসুলিনের অভাব হলে শরীরে শর্করা কাজে লাগতে পারে না।

এর ফলে চর্বি ও প্রোটিন থেকে প্রয়োজনীয় শক্তি সংগ্রহ করে। ফলে ডায়বেটিস রোগী দুর্বল ও ক্লান্ত হয় এবং বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। বর্তমান বিজ্ঞান বলে যে, রমজানের একমাস রোজা পালন এবং বছরের অন্যান্য সময় অতিরিক্ত রোজা ডায়বেটিস রোগীর রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসু। একমাস সিয়াম সাধনার কারণে অগ্নাশয় পূর্ণ বিশ্রাম পায় এবং দিনের বেলায় অগ্নাশয় থেকে ইনসুলিন নির্গত কম হয় বিধায় তা বিশেষ উপকারিতা লাভ করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষকগণ রোজা রাখলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন। সুস্থ মানুষের জন্য রোজা রাখা নিরাপদ উল্লেখ করে তারা আরো বলেছেন, ‘রোজা রাখার মাধ্যমে কেউ করোনার বিস্তার ঘটান না। যারা দীর্ঘ সময় ধরে করোনায় ভুগছেন তারাও রোজা রাখতে পারবেন। রোজা রাখা অবস্থায় তাদের উপসর্গ যদি গুরুতর আকার ধারণ করে, তাহলে তারা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী রোজা ভাঙতে পারেন’।

তাই একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে রোজা বিজ্ঞান সম্মত ও সুস্বাস্থ্যের জন্য রোজার কোন বিকল্প নেই।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট