চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

কুরআনকে বাদ দিয়ে রমজানের মর্মোপলব্ধি করার সুযোগ নেই

রায়হান আজাদ 

২০ এপ্রিল, ২০২১ | ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ

কুরআন আরবী শব্দ। এর অর্থ বহুল পঠিত অথবা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। আভিধানিক দুটি অর্থই কুরআনের সাথে যথেষ্ট সংগতিপূর্ণ। সৃষ্টির শুরু থেকে অদ্যাবধি এমন কোন বই-পুস্তক খুঁজে পাওয়া যাবে না, যা  আল কুরআনের মত এত অধিকহারে পৃথিবীর সর্বত্র পঠন-পাঠন গবেষণা ও অনুশীলন হয়েছে।

অন্যদিকে কুরআনের প্রতিটি হরফ, কালেমা, আয়াত, রুকু ও সুরা  একটি অন্যটির সাথে অর্থ, ভাব ও রচনায় অঙ্গাঙ্গিভাবে ছন্দোবদ্ধ। কুরআন শরীফ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বাণী। এটি সর্বশেষ বড় আসমানী গ্রন্থ। মহানবী হয়রত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.) এর উপর নবুয়তী জিন্দেগির ২৩ বৎসর ধরে বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত সাইয়েদুল মালায়েকা হযরত জিবরাঈল (আ.) মারফত আল কুরআন ধাপে ধাপে অবতীর্ণ হয়।

আল্লাহ পাক বলেন, “নিশ্চয় কুরআন মজিদ এক অতি সম্মানিত ফিরিশতা কর্তৃক পৌঁছানো বাণী, যিনি অহীর গুরুভার বহনে সক্ষম এবং আরশের অধিকারী সত্ত্বার কাছে রয়েছে তাঁর উচ্চ মর্যাদা। তিনি সেখানে গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব এবং বিশ্বস্ত”। (সুরা তাকভীর)   ভাষণ, সংকলন ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আল কুরআন সন্দেহাতীতভাবে সত্য প্রমাণিত। দীর্ঘ দেড় হাজার বছর পূর্বে আল কুরআন নাযিল হলেও অদ্যাবধি তার কোন ধরনের পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংকোচন, বিকৃতি কিংবা রূপান্তর ঘটেনি। কিয়ামত পর্যন্ত ইহা নির্ভুল ও অবিকৃতভাবে সংরক্ষিত থাকবে। আর এ দায়িত্ব নিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ রব্বুল আলামীন। তিনি বলেন, “নিশ্চয় এ কুরআন নাযিল করেছি আমি আল্লাহ আর এর হেফাজতের দায়িত্বটাও আমার।”

আল কুরআন কেবল মুসলমান নয়, সর্বকালের সমগ্র মানবতার জন্য বিশ্ব জাহানের মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে সর্বোত্তম হাদিয়া। আর এটি মাহে রমজানেরও অনন্য অনুগ্রহ। মানবজাতির সূচনালগ্ন থেকে অদ্যাবধি যত বই-পুস্তক শাস্ত্রের অস্তিত্ব পাওয়া যায় তন্মধ্যে কুরআনুল কারীম যুগশ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক পঠিত। যুগে যুগে আল কুরআনের যত হাফিজ (মুখস্থকারী) পাওয়া যায় তা অন্য কোন গ্রন্থের ক্ষেত্রে কল্পনাও করা যায় না।

শুধু কুরআন শরীফ নয়, অন্যান্য আসমানী গ্রন্থও রমজান মাসে নাজিল হয়েছে বলে জানা যায়। হযরত ইমাম আহমদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত ওয়াছেল ইবনে উকাশা রদিআল্লাহু আনহু থেকে রেওয়ায়েত করেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এর ছহীফা রমজানের ১তারিখে অবতীর্ণ হয়েছিল। হাদীস শরীফে আছে, “কুরআন তিলাওয়াত করা সর্বোত্তম ইবাদত।” কুরআনকে বাদ দিয়ে রমজান ও সিয়ামের মর্মোপলব্ধি করার সুযোগ নেই। জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এ রমজান মাসে রাসুল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে কুরআন শিক্ষা দিতেন (বুখারী শরীফ)। আল কুরআনের অন্তত ২০টি জায়গায় এই পাক কুরআনই যে মানবজীবনের চলার পথের দিক নির্দেশনা দানকারী সে কথা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত হয়েছে।

মুসলমানদের উচিত আল কুরআনের আলোকে নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন গড়ে তোলা। অথচ দেখা যায়, ধর্মীয় কিছু আচার-অনুষ্ঠান ও ইবাদত-বন্দেগী ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে কুরআনের অনুসরণ করা হয় না। কুরআনকে জীবন যাপনের বিশাল বলয় থেকে নির্বাসিত করাই বর্তমান বিশ্বে মুসলিম উম্মাহর এই চরম অধঃপতন। তাইতো কাল কিয়ামতের ময়দানে কুরআন ফরিয়াদ করে বলবে, “হে বিশ্ব জাহানের প্রভু! আপনার এ বান্দাহ আমাকে পূর্ণভাবে গ্রহণ করেনি বরং অবহেলার বস্তু বানিয়েছিল। আমার ও তার মধ্যে আপনি আজকের বিচার দিবসে ফায়সালা করুন। তাকে শাস্তি দিন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা’য়ালা ঐ লোককে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন (কুরতুবী)।  তাই পবিত্র রমজানুল মোবারকে কুরআন শেখা, বুঝা ও দৈনন্দিন জীবনে মেনে চলার জন্য আমাদেরকে নতুন করে শপথ নিতে হবে। আয় আল্লাহ!  আমাদেরকে তৌফিক দান করুন। আমিন ॥

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট