চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নানা ধরনের পুতুল

জিনাত মাহরুখ বানু

১৯ নভেম্বর, ২০১৯ | ১:৫৮ পূর্বাহ্ণ

পুতুল একটি লোকজ শিল্প। দেবদেবীর প্রতিকৃতি ও খেলনা হিসেবে পুতুল এদেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সাধারণত মাটি, কাঠ, শোলা, কাপড়, বেত, কাগজের ম-, গাছের পাতা, পাট ও চীনামাটি দিয়ে পুতুল তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে মাটি ও কাঠের পুতুলের প্রচলনই সর্বাধিক।

কবে থেকে পুতুল তৈরি শুরু হয়েছে সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া দুষ্কর। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে জানা যায় যে, মহেঞ্জোদারোসহ ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য স্থানেও পুতুল তৈরি হতো। বাংলাদেশের সাভার, ময়নামতি, মহাস্থানগড় ও দিনাজপুরে প্রত্নস্থলে স্থাপত্যকর্মে পুতুলের বিভিন্ন কারুকাজ লক্ষ্য করা যায়। সেসব কাজের মধ্যে দেবদেবীর মূর্তি, সিংহ, মহিষ, বাঘ, হরিণ, শেয়াল, হাতি, ভল্লুক, বানর, মাছ ও হাঁস উল্লেখযোগ্য।
পুতুল দু’ভাবে তৈরি হয়- হাতে ও ছাঁচে। ছাঁচে পুতুল তৈরির কাজ সহজতর। হাতে তৈরি পুতুলে কারিগরকে নিজস্ব মেধা ও দক্ষতা প্রয়োগ করতে হয়। এধরনের পুতুলের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হাতের সাহায্যেই গড়ে তোলা হয়। মাটির বুটি দিয়ে বা কাঠির রেখা টেনে পুতুলের অলঙ্কার ও পোশাকের আভাস ফুটিয়ে তোলা হয়। হাতে তৈরি পুতুলে রঙের ব্যবহার হয় না; রোদে শুকিয়ে অল্প আগুনে পোড়ানো হয় মাত্র।

পুতুল তৈরির ছাঁচ কুমাররা নিজেরাই তৈরি করে বংশপরম্পরায় ব্যবহার করে আসছে। যুগের চাহিদা অনুযায়ী বর্তমানে ছাঁচের নতুন নতুন আঙ্গিক তৈরি হচ্ছে। কাঁচামাটি দিয়ে তৈরি ছাঁচের পুতুল প্রথমে রোদে শুকিয়ে আগুনে পোড়ানো হয়। পরে বিভিন্ন রঙের মাধ্যমে পুতুলের পোশাক-পরিচ্ছদ ও চোখ-মুখের ভাব ফুটিয়ে তোলা হয়। এককাঠের পুতুল বাংলাদেশের অপর ঐতিহ্য। এধরনের পুতুল তৈরিতে কদম, আমড়া, জিওল, শ্যাওড়া, ছাতিম, শিমুল প্রভৃতি কাঠ ব্যবহৃত হয়। কাঠের তৈরি এই তিনকোণা মেয়ে পুতুল মিশরের মমির মতো দেখতে বলে এগুলিকে ‘মমি পুতুল’ও বলা হয়।
চার চাকাওয়ালা কাঠের ঘোড়া এবং হাতি পুতুলও বেশ জনপ্রিয়। সাধারণত এক টুকরা কাঠ খোদাই করে ঘোড়া বা হাতির অবয়ব তৈরি করা হয় এবং উজ্জ্বল রঙের সাহায্যে সেসবের অঙ্গসজ্জা করা হয়। পরে চারটি চাকা লাগানো হয়।
নাচের পুতুল মাটি ও কাঠের তৈরি। এসব পুতুলের ওপরের অর্ধাংশে রঙের সাহায্যে চোখ, নাক, মুখ ইত্যাদি ফুটিয়ে তোলা হয় এবং নিচের অংশে কাপড়ের পোশাক ব্যবহার করা হয়। সাধারণত পাট বা কৃত্রিম আঁশ দিয়ে চুল বানানো হয়। নাচের পুতুলের পোশাক-পরিচ্ছদ দৃশ্য অনুযায়ী তৈরি করা হয়। এধরনের পুতুল তৈরির প্রধান উপকরণ ভাঁটশোলা, ন্যাকড়া, কাদামাটি, লোহার তার, কাঠ, রং ইত্যাদি।
সাধারণত বৈশাখী মেলাসহ বিভিন্ন গ্রাম্যমেলা উপলক্ষে শোলার পুতুল তৈরি ও বেচাকেনা হয়। কাপড়ের পুতুল শিশুদের কাছে অধিক জনপ্রিয়। এধরনের পুতুল তৈরি হয় হাতে।

বর্তমানে বিভিন্ন সংস্থা গৃহসজ্জার জন্য নানা ধরনের কাপড়ের পুতুল তৈরি করছে। বর্তমানে বিভিন্ন সিরামিক প্রতিষ্ঠান চীনামাটির পুতুল তৈরি করছে। বর্তমানে মাটি ও কাঠের পুতুলের চাহিদা দেশে ও বিদেশে বৃদ্ধি পাওয়ায় কুমাররা বিভিন্ন আঙ্গিকে পুতুল তৈরি করছে।
বাজারজাত করণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা, ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই শিল্পের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট