চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ছোটদের প্রিয় টারজান

রোজী আকতার

২৯ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:১৫ পূর্বাহ্ণ

টারজান একটি কাল্পনিক চরিত্র। এই শব্দের মানে ‘সাদা চামড়া’। এডগার রাইজ বারোজ এই কমিক্স চরিত্রের রচয়িতা। পূর্ব আফ্রিকার পটভূমিতে এই চরিত্রের গল্প। এই চরিত্রকে নিয়ে উপন্যাস, ছায়াছবি হয়েছে। টারজান চরিত্রে অভিনয় করেছেন অলিম্পিক তারকা সাঁতারু জনি ওয়েস মুলার।

তোমরা নিশ্চয় টারজানের কাহিনী জানো? বিমান দুর্ঘটনার পর জঙ্গলে হারিয়ে যায় সে, এরপর বনের পশুপাখিদের যতেœই বেড়ে ওঠে টারজান। পশুদের সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠার কাহিনী কিন্তু শুধু এই কল্পনার টারজানের ক্ষেত্রেই ঘটেনি, বাস্তবেও এমন টারজানের দেখা পাওয়া যায়, যাদের শৈশব কেটেছে পশুদের স্নেহে। মানুষ, বাবা-মা তাদের কাছে থাকতে পারেনি বা থাকেনি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এই খবরগুলো এসেছে। সেখান থেকেই সত্যি ‘টারজান’ শিশুদের গল্প বলছি, শোনো।
বানরের কাছে মানুষ : জন সেবুনিয়া, উগান্ডার বাসিন্দা সে। তখন অনেক ছোট, মাত্র চার বছর বয়স। এই অল্প বয়সেই তাকে সম্মুখীন হতে হয় এক মর্মান্তিক ঘটনার। চোখের সামনে বাবার হাতে মাকে নৃশংসভাবে খুন হতে দেখে সে। প্রচ- শোক ও আতঙ্কে জঙ্গলে পালিয়ে যায়। এই নৃশংসতায় মনে প্রচ- আঘাত পেয়ে মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেছিল সেবুনিয়া।

জঙ্গলে সম্পূর্ণ একা এবং অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে সে। অসহায় এই শিশুটিকে পরম স্নেহে লালন-পালন করে জঙ্গলের একদল বানর। আস্তে আস্তে বড় হয় এবং একসময় মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে ওঠে। বানরের সঙ্গে থাকতে থাকতে হয়ে যায় বানর পরিবারেরই একজন। নিজের ভাষা ভুলে গিয়ে বানরের মতো ভাব প্রকাশে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে সে। এভাবে কেটে যায় বেশ কয়েকটা বছর। শেষ পর্যন্ত তার খোঁজ মেলে। তাকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী গ্রামের মানুষ। তবে বানরের কাছ থেকে ছেলেটিকে উদ্ধার করতে বেশ বেগ পেতে হয় তাদের। কারণ আদরের সেবুনিয়াকে বানররা কিছুতেই দিতে চাচ্ছিল না। ১৯৯১ সালে লোকালয়ে ফিরে আসার পর সেবুনিয়া ধীরে ধীরে আবার কথা বলতে শেখে। এমনকি এখন সে চমৎকার গানও গাইতে পারে।

কুকুরের যতেœ শিশু : ঘটনাটি সাইবেরিয়ার, ২০০৯ সালের কথা। দেশটির চিটা শহরের একটা ঘরে বদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় পাঁচ বছর বয়সের একটি শিশুকে। শিশুটির নাম নাতাশা। ঘরের ছাদের কাছে একটা ফুটো দিয়ে কুকুর-বিড়ালেরা ঘরটিতে যাওয়া আসা করত এবং সেই স্থানটিই ছিল তাদের থাকার জায়গা। নাতাশাকে যখন পাওয়া গেল, তখন সে কুকুরের মতই ঘেউ ঘেউ করছিল। পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, নাতাশার জন্মের পরই তার নিষ্ঠুর বাবা-মা সদ্যোজাত শিশুটিকে ওই ঘরে আটকে রেখে চলে যায়। সেই থেকে কুকুর-বিড়ালের স্নেহ পেয়েই বড় হয়েছে মেয়েটি। অবোধ সেই পশুগুলোই শিশুটিকে দুধ, খাবার খাইয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। তাকে যখন উদ্ধার করা হয়, তখন তার আচার-আচরণ ছিল একেবারে কুকুরের মতো। খাবার দিলে সে খাওয়ার আগে তা কুকুরের মতোই শুকতো। হাঁটত হাত ও পায়ের সাহায্যে। আর কথা তো বলতই না, কুকুরের মতো শুধু ঘেউ ঘেউ করত। তাকে মানুষের মতো স্বাভাবিক করতে সমাজকর্মীদের অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। পরে নাতাশার সেই হৃদয়হীন বাবা-মাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। সন্তানকে অবহেলার অপরাধে কারাদ- হয় তাঁদের। পশুও কতটা স্নেহময়ী হতে পারে এই ঘটনাটিই তার প্রমাণ।

ছাগলের দুধ খেয়ে মানুষ : সময় তখন ২০১২ সাল। খবর এলো রাশিয়ার রোস্তভ শহরের একটি বাড়ির বদ্ধ ঘরে একপাল ছাগলের সঙ্গে পাওয়া গেছে একটি ছোট্ট ছেলেকে। ছেলেটির নাম ছিল শাশা। পরে জানা গেছে, শাশার মা ছিলেন মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। শাশাকে তার মানসিক ভারসাম্যহীন মা ছাগলগুলোর সঙ্গে রেখেছিলেন এবং নিজ সন্তানের লালন-পালনের ভার ছেড়ে দিয়েছিলেন ছাগলগুলোর ওপর। আর আশ্চর্যজনকভাবে শিশুটিও ছাগলের দুধ খেয়ে বড় হয়ে ওঠে। তবে বিভিন্ন কারণেই অপুষ্টিতে ভুগছিল সে। তার বয়সী অন্য বাচ্চাদের তুলনায় ওজন ছিল অনেক কম। শাশা সেই নরক থেকে উদ্ধার হলেও তার মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট