চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ছোটদের রবীন্দ্রনাথ

নারায়ণ চন্দ্র রায়

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:১২ পূর্বাহ্ণ

১৮৬১ সালের ৭ মে বাংলা ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দ কলকাতার বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি ছিলেন এশিয়ার মধ্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত প্রথম বাঙালি। কবি বাংলা সাহিত্য ভা-ারকে সমৃদ্ধি করেছেন। বাংলা সাহিত্যের আকাশ ছোঁয়া পরিপূর্ণতা এনে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলা সাহিত্য ভা-ার আজ সমৃদ্ধি। বাংলা ভাষা আজ সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত। তিনি লিখেছেন ছড়া, কবিতা, নাটক, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, স্মৃতি কথা, ভ্রমণ কাহিনী প্রভৃতি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য পাঠে বাঙালির হৃদয়-প্রাণে আজও আনন্দের দোলা দিয়ে যায়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বড়দের জন্য যেমন লিখেছেন তেমনি ছোটদের জন্যও অনেক লিখেছেন। কবি ছোটদের অনেক স্নেহ করতেন আদর করতেন অনেক ভালোবাসতেন। ছোটদের সঙ্গে একটু সময় পেলেই কবি খেলায় মেতে উঠতেন। কবি তখন হয়ে যেতেন ছোট্ট খোকা। আর তখনই কবি খেলার ছলে আপন মনে লিখে যেতেন ছড়া, কবিতা, গান, নাটকসহ অনেক কিছু।
কবি ছোটদেরকে কখনও অবহেলার চোখে দেখেননি। তিনি ছোটদেরকেও বঞ্চিত করেননি তার সাহিত্য ভা-ার থেকে। কবি ছোটদের চাওয়া-পাওয়ারকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাদের আশা-আকাক্সক্ষা, দুঃখ-কষ্ট এবং হাসি-আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে কবি ছিলেন অত্যন্ত যতœশীল এবং দায়িত্ববান একজন অভিভাবক। কবি ছোটদের নিয়ে লিখেছেন-“আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে/বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।”

কবি পাখি নিয়ে লিখেছেন-“কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক/রাতে উঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক।”
বৃষ্টির পর আকাশে রোদ উঠেছে। রংধনুর সাত রঙের লুকোচুরি খেলা। বেজে উঠেছে স্কুলের ছুটির ঘণ্টা। বাঁধ ভাঙা ছেলে-মেয়েদের বাড়ির পানে ছুটে চলা। রংধনুর সাত রঙের সঙ্গে এ সময় ছেলে-মেয়েরা আনন্দে মেতে উঠে। এই আনন্দের মুহূর্তে আরও একটু বেশি আনন্দ দিয়ে গিয়ে কবি লিখেছেন-“মেঘের কোলে রোদ হেসেছে
বাদল গেছে টুটি,/আজ আমাদের ছুটি ও ভাই আজ আমাদের ছুটি।”
মা পালকিতে করে যাচ্ছিলেন। আর খোকা যাচ্ছিল মায়ের পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে। মা তখন ভীষণ ভয় পাচ্ছিলেন। ডাকাতের ভয়ে মা ভেঙে পড়েছেন।
“তুমি ভয়ে পালকিতে এক কোণে/ঠাকুর-দেবতা স্মরণ করছ মনে/আমি যেন তোমায় বলছি ডেকে/আমি আছি, ভয় কেন মা করো।”

কবি ‘বীর পুরুষ’ কবিতায় মা’কে এভাবেই সাহস দিয়ে যাচ্ছিলেন। কবির ইচ্ছে হলেই মা’কে নিয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াতেন। কখনও রাজপুত্র হয়ে আবার কখনও বীরপুরুষ হয়ে। মা খোকাকে ভীষণ ভালোবাসতেন। আর তাইতো কখনও না করতে পারেননি। খোকার যে কোনো ইচ্ছাই মা হাসি মুখে মেনে নিতেন। খোকা এখানেও তার ইচ্ছার কথাটি বলতে ভুল করেনি।
“মনে করো, যেন বিদেশ ঘুরে/মাকে নিয়ে যাচ্ছ অনেক দূরে…।
কবি বৃষ্টি ভালোবাসতেন। কবি প্রকৃতিকে ভালোবাসতেন। পাখির কিচির মিচির গান গাওয়া, নদীর কলকল ছলছল ছুটে চলার ধ্বনি কবির মনকে আনন্দ দিয়েছে। নদীর কথা, বৃষ্টির কথা, পাখির কথা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তার ছড়া-কবিতায়। আষাঢ় মাসের মেঘ দেখে কবি বলেছেন-“নীল নব গনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে/ও গো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।”
কবি চাঁদকে নিয়ে লিখতেও ভুলে যাননি। চাঁদকে নিয়ে লিখেছেন একটি চমৎকার ছড়া-কবিতা-
“দিনের আলো নিভে এল/সূর্যি ডোবে ডোবে/আকাশ ঘিরে মেঘ ছুটেছে/চাঁদের লোভে লোভে।”
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৃষ্টি নিয়ে অনেক লিখেছেন। কবি বৃষ্টি নিয়ে ছড়া-কবিতা যেমন লিখেছেন তেমনি বৃষ্টি নিয়ে অনেক গানও লিখেছেন-“আজি ঝর ঝর মুখরিত/ বাদলও দিনে।”
কবির সব লেখাই শিশু পাঠে অনবদ্য এবং অতুলনীয়। ছন্দ রসে পরিপূর্ণ। তেমন একটি ছড়া-“বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর/নদেয় এল বান।

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের জাতীয় সংগীত রচনা করেছেনÑ“আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।”
এই মহান কবি, বিশ্ব কবি ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট