চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দুরন্ত শৈশবে বিজ্ঞানী আইজাক নিউটন

সাদ আব্দুল ওয়ালী

১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:০৮ পূর্বাহ্ণ

একটি আশ্চর্যের ঘটনা বিজ্ঞানের ইতিহাসে। আর তা হচ্ছে দুর্বল, শীর্ণকায় এবং সেই সঙ্গে ক্ষুদ্র আকৃতির শিশু যার জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিল তাঁর মাতা, অথচ এই ব্যক্তি একদিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিজ্ঞান চর্চায় রাখেন অসাধারণ অবদান। তিনি হচ্ছেন বিজ্ঞানের রাজ্যে একজন উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক স্যার আইজাক নিউটন। তিনি একজন পদার্থ বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ।
অন্যতম অবদানসমূহ: নিউটনের গতিসূত্র- ক. প্রতিটি ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। খ. বাইরে থেকে প্রযুক্ত বল দ্বারা অবস্থার পরিবর্তন করতে বাধ্য না করলে অচল বস্তু চিরকাল অচল অবস্থাতেই থাকবে এবং সচল বস্তু চিরকাল সমবেগে সরলরেখা ধরে চলতে থাকবে। গ. বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার বস্তুটির উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে প্রযুক্ত হয় ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকে ঘটে।

নিউটনের অভিকর্ষ তত্ত্ব- বিশ্বজগতে সমস্ত বস্তুই বল দ্বারা পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ বল বস্তু দুটোর ভরের সমানুপাতিক এবং বস্তুদ্বয়ের মধ্যে দূরত্বের ব্যস্তানুপাতিক।
বিজ্ঞানের প্রায় প্রতিটি শাখায় তিনি গবেষণা করে গেছেন। বলা যায়, তিনি যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানেই যেন রত্ন ফলেছে। অংকশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা এবং পদার্থবিদ্যায় তাঁর গবেষণাকে কেন্দ্র করে এককালে সারা বিশ্বে সৃষ্টি হয়েছিল বিরাট আলোড়ন। প্রকৃতপক্ষে ঐ তিন শাস্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন নিউটন।

বিজ্ঞানী নিউটন জন্মগ্রহণ করেন ১৬৪২ সালে ইংল্যান্ডের লিঙ্কনশায়ারের প্যানথামের নিকটবর্তী উল্স্থর্প নামক গ্রামে। তাঁর পিতার নামও ছিল আইজাক নিউটন। নিউটনের জন্মের কয়েকমাস আগেই পিতার মৃত্যু হয়। তাঁর মা হ্যানা নিউটন, স্বামীর স্মৃতি হিসেবে পুত্রের নাম রেখেছিলেন আইজাক নিউটন।

নিউটনের যখন দু’বছর বয়স, তখন তাঁর মা নিকটস্থ গির্জার পাদ্রী বার্নাবাস স্মিথকে বিয়ে করেন। এই বিবাহকালে তিনি তাঁর সকল সম্পত্তি নিউটনের নামে লিখে দেন। বিধবা মায়ের সঙ্গে জীবনের প্রথম তিন বছর কেটে যায়। এ সময় তাঁর মা বিবাহ করেন। একরকম অবাঞ্ছিত হিসেবে নিউটন তাঁর নানীর কাছে লালিত-পালিত হন। একরকম এতিম অবস্থায় বিজ্ঞানী নিউটনের শৈশব-কৈশোর কাটে। এই গ্রামের পাঠশালাতে তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু হয়। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি এই স্কুলে লেখাপড়া করেন।
এরপর তিনি নিকটস্থ প্যানথাম শহরে গিয়ে কিংসনামক একটি স্কুলে ভর্তি হন। এ সময় তাঁর অসাধারণ মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। জন্মলগ্ন থেকে নিউটন ছিলেন রুগ্ন প্রকৃতির। তবুও তাঁর দুষ্টমির কমতি ছিল না। অপরদিকে বালক নিউটনের জ্ঞান প্রতিভায় শিক্ষকগণ মুগ্ধ হয়ে যান।

একদিনের ঘটনা। একটা বিষয় নিউটন প্রায় লক্ষ্য করতেন স্কুলের অধ্যক্ষের শালা স্কুলে আসতে দেরি করতেন। নিউটন বলে ওঠলেন, স্যার আমি আপনার জন্য একটা ঘড়ি তৈরি করে দিচ্ছি, তাহলে ঘড়ি দেখে যথাসময়ে স্কুলে আসতে পারবেন। যথার্থই তিনি ঘড়ি তৈরি করলেন। ঘড়ির উপরে থাকত একটা পানির পাত্র। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি সেই পাত্রে ঢেলে দেওয়া হত। তাঁর থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি ঘড়ির কাটার উপর পড়ত। এর ফলে ঘড়ির কাটা আপন গতিতেই এগিয়ে চলত।

বিজ্ঞানী ও সাধকগণ কখনো এমন আত্মমগ্নতায় বিভোর হন সবকিছুই যেনো ভুলে যান। নিউটনও এমনিভাবে কোন নতুন বৈজ্ঞানিক ভাবনায় ডুবে থাকেন। একদিনের ঘটনা একজন লোক তাঁর বাড়িতে এসে একটা প্রিজম (তিনকোণা কাচ) দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন এর দাম কত হতে পারে। এ সময় নিউটন প্রিজমের বৈজ্ঞানিক গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে বললেন, এর সঠিক মূল্য নির্ণয় করা তাঁর সাধ্যের বাইরে। ফলে লোকটি বেশি দাম চাইল। নিউটন সেই দামে প্রিজমটি কিনে ফেললেন। এই প্রিজম থেকে পরবর্তীকালে উদ্ভাবন করেন বর্ণতত্ত্ব (ঞযব ঃযবড়ৎু ড়ভ পড়ষড়ৎ)।ভাগ্যের চাকা হঠাৎ-ই সচল হলো। চাচা উইলিয়াম ভাইপোর জ্ঞানতৃষ্ণায় মুগ্ধ হয়ে নিজের কাছে নিউটনকে রেখে দিলেন। চাচা কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আবার নিউটন স্কুলে ভর্তি হলেন। এবার সম্পূর্ণ চাচার উদ্যোগে। এর এক বছর পর নিউটন ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হলেন।
১৬৬৫ সালে নিউটন স্নাতক ডিগ্রি লাভ করলেন। কলেজে ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায় তিনি কিছু জটিল তথ্যের আবিষ্কার করেন। এসময় নিউটনের বয়স তখন মাত্র ২৪ বছর।মধ্যাকর্ষণ তত্ত্বের একটি ঘটনা। কলেজ ছুটিতে মায়ের কাছে গিয়েছেন। প্রকৃতির পরিবেশে বসে আছেন বাগানে। সেই মুহূর্তে হঠাৎ খসে পড়ল একটা আপেল। মগ্ন হয়ে পড়লেন অন্য চিন্তায়। এদিকে বিজ্ঞানী নিউটনের মাথায় খুরপাক খেলো, কেন আপেলটি আকাশে না উঠে মাটিতে এসে পড়ল? এই জিজ্ঞাসাই মানুষের চিন্তার জগতে এক যুগান্তর নিয়ে এলো। এভাবে মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্বের সৃষ্টি হলো। যদিও এই চিন্তার সূত্রপাত হয়েছিল বহু পূর্বেই। নিউটন গবেষণা প্রকাশ করলেন তাঁর কালজয়ী গ্রন্থ ‘গধঃযসবঃরপধষ ঢ়ৎরহপরঢ়ষবং ড়ভ ঘধঃঁৎব ঢ়যরষড়ংড়ঢ়যু’। এই মহান বিজ্ঞানী মৃত্যুবরণ করেন ১৭২৭ সালের ২০ মার্চ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট