চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

তাঁতী পাখি বাবুই

রোহিত চৌধুরী

৩০ এপ্রিল, ২০১৯ | ১:৩৫ পূর্বাহ্ণ

তোমরা নিশ্চয় বাবুই পাখি দেখেছো অথবা পদ্যে তার সম্পর্কে জেনেছো। এবার আমরা পদ্যটি পড়ে ফেলি- বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই,/ কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই!/ আমি থাকি মহা সুখে অট্টালিকা পরে,/ তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে।/ বাবুই হাসিয়া কয়; সন্দেহ কি তায় !/ কষ্ট পাই তবু থাকি নিজেরই বাসায়।/ পাক হোক তবু ভাই পরের বাসা,/ নিচ জাকে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা। মানুষকে মানবিকভাবে জাগ্রত করার জন্য কবি রজনীকান্ত সেন এ পদ্যটি রচনা করেন। তার এ কালজয়ী পদ্যটি এখনো মানুষের মুখে মুখে। বাবুই পাখিকে নিয়ে কবির ‘স্বাধীনতার সুখ’ পদ্যটি আজো মানুষ উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করলেও হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি ও বাবুই পাখির বাসা।
বাবুই চষড়পবরফধব গোত্রের অন্তর্গত একদল প্যাসারাইন পাখি। খুব সুন্দর বাসা বোনে বলে এরা ‘তাঁতী পাখি’ (ডবধাবৎ ইরৎফ) নামেও পরিচিত। এদের বাসার গঠন বেশ জটিল আর আকৃতি খুব সুন্দর। কয়েক প্রজাতির বাবুই একাধিক কক্ষবিশিষ্ট বাসা তৈরি করতে পারে। এরা মূলত বীজভোজী পাখি, সে জন্য তাদের ঠোঁটের আকৃতি বীজ ভক্ষণের উপযোগী। চোঙাকার আর গোড়ায় মোটা। অধিকাংশ বাবুই প্রজাতির আবাস সাব-সাহারান আফ্রিকায়, তবে কয়েকটি প্রজাতি এশিয়ায় স্থায়ী। এরা দলবদ্ধ প্রাণী আর কলোনি করে জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত। বাংলাদেশে তিন ধরনের বাবুই দেখা যায়: দেশি বাবুই (চষড়পবঁং ঢ়যরষরঢ়ঢ়রহঁং), দাগি বাবুই (চষড়পবঁং সধহুধৎ) ও বাংলা বাবুই (চষড়পবঁং নবহমধষবহংরং)।
বাসস্থান:
বাবুই পাখির বাসা উল্টানো কলসির মত দেখতে। বাসা বানাবার জন্য বাবুই খুব পরিশ্রম করে। ঠোঁট দিয়ে ঘাসের আস্তরণ সারায়। যত্ন করে পেট দিয়ে ঘষে (পালিশ করে) গোল অবয়ব মসৃণ করে। শুরুতে দুটি নিম্নমুখী গর্ত থাকে। পরে একদিক বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গা হয়। অন্যদিকটি লম্বা করে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ হয়। কথিত আছে: রাতে বাসায় আলো জ্বালার জন্য বাবুই জোনাকি ধরে এনে গোঁজে।
বাংলাদেশে বাংলা ও দাগি বাবুই এর প্রজাতি বিলুপ্তির পথে, তবে দেশি বাবুই এখনো দেশের সব গ্রামের তাল, নারিকেল, খেজুর, রেইনট্রি গাছে দলবেঁধে বাসা বোনে। এরা সাধারণত মানুষের কাছাকাছি বসবাস করে, তাই দেখা যায় এদের বাসা মানুষের হাতের নাগালের মাত্র পাচ অথবা ছয় ফুট উপরে। ফলে অনেক অসচেতন মানুষ এদের বাসা ভেঙে ফেলে আর একারণেই এদের সংখ্যা রহস্যজনকভাবে কমে যাচ্ছে।
বাসার বুনন:
বাবুইয়ের বাসা করার জন্য প্রয়োজন হয় নলখাগড়া ও হোগলার বন। কিন্তু দেশে নলখাগড়া ও হোগলার বন কমে যাওয়ায় এই বাবুইয়ের সংখ্যা খুবই কম। তা ছাড়া এই পাখি যেখানে বাস করে নল ও হোগলার বনে সেখানে মানুষের চলাচল থাকে। এরা সাধারণত খুটে খুটে বিভিন্ন ধরনের বীজ, ধান, ভাত, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু-রেণু ইত্যাদি খেয়ে জীবনধারন করে। গ্রীষ্মকাল এদের প্রজনন ঋতু। তারা সাধারণত কাঁটা জাতীয় বৃক্ষে বাসা তৈরি করে এবং আহার সংগ্রহে সুবিধা হয় এমন স্থান নির্বাচন করে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট