চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

উপমহাদেশের চার পায়ের তিমি

রোজী আকতার

৩০ এপ্রিল, ২০১৯ | ১:৩৫ পূর্বাহ্ণ

বর্তমানে সমুদ্রের পানিতে ঘুরে বেড়ানো তিমির প্রাচীন এক উভচর পূর্বপুরুষের সন্ধান সম্প্রতি পেয়েছেন জীবাশ্মবিদরা। এই আবিষ্কারের ফলে স্থল থেকে সমুদ্রে স্তন্যপায়ীদের বিবর্তনের একটি নতুন চিত্র পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
তিমি ও ডলফিনের এই আদিপুরুষ পাঁচ কোটি বছর আগে পৃথিবীর যে এলাকায় হেঁটে বেড়াতো সেই জায়গাগুলির বেশিভাগই এখন ভারত ও পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত।
প্যালিওন্টোলোজিস্ট বা জীবাশ্মবিদরা উত্তর আমেরিকায় এই প্রজাতির আংশিক জীবাশ্ম খুঁজে পেয়েছেন আগে, যার বয়স ছিল ৪.১২ কোটি বছর। ধারণা করা হয় যে, এই সময়ের পর থেকে নিজেদের ওজন বহন করার ক্ষমতা হারায় এই প্রাণিরা।
কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়, এই নতুন নমুনাটি ৪.২৬ কোটি বছর বয়সী সিট্যাসিয়ানদের বিবর্তনের বিষয়ে নতুন তথ্য জানাচ্ছে।
পেরুর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল প্লায়া মিডিয়া লুনা থেকে ০.৬ মাইল (এক কিলোমিটার) ভিতরে এই জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। এর শুঁড় বা মুখের সামনের অংশটি মাটির মধ্যে গাঁথা ছিল এবং খননকালে গবেষকরা নিম্ন চোয়াল, দাঁত, মেরুদ- পাঁজর, সামনের এবং পিছনের পায়ের অংশ এবং তিমির পূর্বপুরুষের দীর্ঘ আঙুলগুলিও উদ্ধার করেন।
জীবাশ্মের শারীরবৃত্তীয় বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন এই প্রাণির দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১৩ ফুট (চার মিটার)। হাঁটতে এবং সাঁতার কাটতে পারত এই প্রাণি।
রয়্যাল বেলজিয়ান ইনস্টিটিউট অব ন্যাচারাল সায়েন্সেসের প্রধান লেখক অলিভিয়ার ল্যামবার্ট এএফপিকে বলেন, ‘লেজের মেরুদ-ের অংশটি বর্তমানের অর্ধ-জলের স্তন্যপায়ী প্রাণিদের (ংবসর-ধয়ঁধঃরপ সধসসধষং) মতো একই। এটি এমন একটি প্রাণি ছিল যা তার লেজটিকে সাঁতার কাটার জন্য ব্যবহার করতে শুরু করেছিল। এই কারণেই এটা ভারত ও পাকিস্তানের পুরোনো সিট্যাসিয়ানদের (পবঃধপবধহং) থেকে পৃথক।’
মিশর, নাইজেরিয়া, টোগো, সেনেগাল এবং পশ্চিম সাহারায় চার পায়ের তিমি পাখির জীবাশ্মের টুকরো পাওয়া যায়, কিন্তু সেগুলো এতটাই বিভক্ত ছিল যে এই প্রাণি সাঁতার কাটতে পারে কিনা তা নিয়ে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত নেওয়া অসম্ভব।
ল্যামবার্ট বলেন, ‘এটি ভারত ও পাকিস্তানের বাইরে পাওয়া চারপেয়ে তিমির (ভড়ঁৎ-ষবমমবফ যিধষব) সবচেয়ে অক্ষত একটা নমুনা।’ পেরুর তিমি যদি ভোঁদড়ের মতো সাঁতার কাটতে পারে তবে গবেষকরা অনুমান করেছিলেন যে এটি সম্ভবত আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে থেকে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত আটলান্টিক মহাসাগর অতিক্রম করেছিল। কন্টিনেন্টাল ড্রিফট অর্থাৎ মহাদেশগুলোর দূরে সরে যাওয়ার গতির ফলস্বরূপ, আজকের তুলনায় দূরত্বটি ছিল প্রায় অর্ধেক, মোটামুটি ৮০০ মাইল এবং পূর্ব-পশ্চিম গ্রোত তাদের ভ্রমণকে সহজতরও করেছিল। পেরুর দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলে পিসকো বেসিনে এমন অজগ্র জীবাশ্ম পাওয়া যায়। যা দিয়ে আগামী ৫০ বছর গবেষণা চালানো যাবে বলে মনে করেন গবেষকরা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট