চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

একান্ত সাক্ষাৎকারে চট্টগ্রামের কৃতী শিল্পী সন্দীপন

আঞ্চলিক গান সংরক্ষণে চাই বিশেষ উদ্যোগ

তাসফিয়া ফারিহা

১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৩৭ পূর্বাহ্ণ

আঞ্চলিক গানকে প্রাধান্য দেয়ার মানেই হল নিজেদের সংস্কৃতিকে সম্মান দেয়া। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান তুলনামূলকভাবে অন্যান্য গানের তুলনায় অবহেলিত। কিন্তু এই গানগুলো আমাদের হাটে-মাঠে-ঘাটে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ফিরে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান আমাদের সংস্কৃতিকে অনেক সমৃদ্ধ করেছে। তাই এসব গান সংরক্ষণ, চর্চা ও নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের চর্চা এবং ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এভাবেই নিজের মতামত তুলে ধরলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী

রাউজানের সন্তান সন্দীপন দাশ। দৈনিক পূর্বকোণের সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে গুণী এই শিল্পী তার সঙ্গীত জীবনে আসা, সঙ্গীত পরিবারের বেড়ে ওঠা এবং এগিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন। প্রশ্ন-উত্তর আকারে আলোচনার উল্লেখযোগ্য অংশ নিচে দেয়া হল।
প্রশ্ন : সঙ্গীত জীবনে আসার অনুপ্রেরণা কার কাছ থেকে পেয়েছিলেন?
সন্দীপন : আমার পরিবারেই গানের পরিবেশ ছিল। আমার বাবা, বোন ভীষণ ভাল গাইতেন। আমার বড় ভাই তবলায় গোল্ড মেডেল পেয়েছিলেন। পরিবারের উৎসাহ ছিল সবসময়ই। গান, নাটক, থিয়েটার, পথনাটক করতাম। সব মিলিয়েই পরিবারের উৎসাহেই গানটা করা।
পূর্বকোণ : আপনি তো কলকাতায় পড়াশুনা করেছেন, থিয়েটারও করেছেন। কিন্তু গান দিয়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন সবচেয়ে বেশি। এর কারণ কি?
সন্দীপন : গান করব না অভিনয় করব সেটা আসলে ওভাবে ভাবিনি। কাজ করতে গিয়েই গানের প্রতি ভাললাগা তৈরি হয়েছে। তবে ছোটবেলা থেকেই গানটাকে ভীষণভাবে ধারণ করতাম। ক্লাসিক্যাল গুরুর কাছে আমাকে গান শেখানো হয়েছিল। আমার গুরু ওস্তাদ মিহির কান্তি লালা। হয়ত প্রকৃতি চেয়েছে গানটাই করি তাই গানটাই করছি।
পূর্বকোণ : পর্দায় কি নিজেকে দেখার ইচ্ছে আছে ?
সন্দীপন : পর্দায় ইতিমধ্যে কিছু কাজ করেছি। বাংলাভিশনে একটি ছোট সিরিয়ালেও কাজ করেছি শামীম শাহেদের ডিরেকশনে। সামনেও কাজ করতে চাই। তবে যেহেতু গানটাই গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে সবচেয়ে বেশি তাই গান নিয়েই থাকতে চাই।
পূর্বকোণ : আঞ্চলিক গান গেয়েই আপনি জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন বেশি। আপনার আঞ্চলিক গানের একক কোনো এলবাম কি বের হয়েছে?
সন্দীপন : আঞ্চলিক গান নিয়ে জি সিরিজ আমাকে ফোকাস করে একটি এলবাম বের করেছে ‘চট্টগ্রামের গান’ নামে। আমার বেশকিছু গান রয়েছে এলবামটিতে। চট্টগ্রামের গান নিয়ে একক কোনো এলবাম বের হয়নি। আমার প্রথম যে এলবামটি ছিল সেখানে সোনা বন্ধু তুই আমারে করলিরে দিওয়ানা, মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা, ওরে সাম্পানওয়ালা, যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম এবং তার সাথে লালন, হাছন, আব্বাস উদ্দীনের গানও ছিল। তবে প্রথম থেকেই পথচলাটা ছিল চট্টগ্রামের গান নিয়েই। তাই একক কোন এলবাম না থাকলেও এটা কিন্তু আমার কাছে বিশাল প্রাপ্তি।
পূর্বকোণ : আপনার কাছে সফলতার মূলমন্ত্র কী?
সন্দীপন : পরিশ্রম। প্র্যাকটিস, প্র্যাকটিস এবং প্র্যাকটিসের কোন বিকল্প নেই। আমি যে কাজটা করছি সেই কাজটাকে ভীষণরকম ভালবেসে তাতে মনোনিবেশ করলে আমি মনে করি সফলতা আসবেই।
পূর্বকোণ : গানের একাল আর সেকাল সম্পর্কে একটু বলবেন। বর্তমানের গানগুলোতে পাশ্চাত্যের যে ছোঁয়া লাগছে সেটিকে কীভাবে দেখেন আপনি?
সন্দীপন : সংগীততো আর অঞ্চলভিত্তিক কোনো বিষয় না, পাশ্চাত্য, প্রাচ্য সবকিছুর মেলবন্ধনেই মিউজিকটা এগোবে।
পূর্বকোণ: হারানো দিনের গানের যে আবেদন সেই আবেদন এখনকার গানগুলোতে নেই কেন?
সন্দীপন: একটা সময় ছিল যখন গীতিকার, সুরকার এবং শিল্পী একসাথে বসে গান রেকডিংয়ের সব প্ল্যান করতেন। কিন্তু এখন তো হাতের কাছেই সবকিছু পাওয়া যায়। ভাল কোনো গান যদি করতে চাই তবে অবশ্যই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট