চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

গার্মেন্টস খাত ঝুঁকিতে পড়লে ঝুঁকিতে পড়বে দেশ

নাসির উদ্দিন চৌধুরী

৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শিল্পখাত যেটি
ইতিমধ্যে জাতীয় শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, সেই গার্মেন্ট শিল্প এখন ঝুঁকির মধ্যে দাঁড়িয়ে
আছে। চার দশক আগে মরহুম নুরুল কাদের খানের হাত ধরে দেশে ছোট আকারে তৈরি পোশাক শিল্পের স্বপ্ন ও সম্ভাবনা শুরু হয়েছিল। তাঁর সেই ছোট স্বপ্ন থেকে দেশে আজকের এই বৃহৎ গার্মেন্টস শিল্প যা শুন্য থেকে এখন বত্রিশ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির একটি শিল্পে রূপান্তরিত হয়েছে। এখন দেশের মোট রপ্তানির ৮৩ ভাগ হলো এই গার্মেন্টস পণ্য। এতো বড় সাফল্যের শিল্পটিতে বর্তমানে ৪০ লক্ষ মানুষ কাজ করছে যার ৮০ ভাগই নারী শ্রমিক। এই খাত ঝুঁকিতে পড়লে দেশ ঝুঁকিতে পড়বে।

তাজনীন ফ্যাশন ও রানা প্লাজার ঘটনার পর দেশ-বিদেশে এতো বেশি করে তা প্রচার প্রচারণা চলেছে যে গার্মেন্টস শিল্পের দীর্ঘদিনের অর্জিত সুখ্যাতির অনেক ক্ষতি হয়েছে। এমন একটি নেতিবাচক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও শিল্প উদ্যোক্তাদের মনোবল, তাদের চেতনা, সাহসী পদক্ষেপ ও লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের আন্তরিকতার কারণে আজো শিল্পটি টিকে আছে।
গত বাজেটে তৈরি পোশাক শিল্পকে বাঁচাতে সরকার দুই হাজার ছয়শ কোটি টাকা ইনসেনটিভ দিয়েছে। গণমাধ্যমে ফলাও কারে তা প্রচারও করা হয়েছে। এ নিয়ে জনবিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে যে হাজার হাজার কোটি টাকা গার্মেন্টস খাতে দিয়ে দেয়া হচ্ছে কিন্তু এরপরও কেন গার্মেন্টস খাত সংকট কাটাতে পারছে না। চট্টগ্রামের বিনিয়োগকারী – ব্যবসায়ীদের সাথে কেন জানি বিমাতাসুলভ আচরণ করা হয়। কিন্তু এই ধরণের আচরণ কতটুকু যৌক্তিক তা বোধগম্য নয়। বিনিয়োগকারীতো বাংলাদেশেরই বিনিয়োগকারী, সেখানে কেন আঞ্চলিক বিনিয়োগকারী হিসেবে বিবেচিত হবেন? আমরা চাই কারো প্রতি যেন অবিচার করা না হয়।

বন্দর ব্যবহারকারী হিসেবে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের সমস্যা নিয়ে নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাংহাই থেকে কাঁচামাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে জাহাজ আসতে লাগে ১৩ দিন। আর বহির্নোঙর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে সেই কাঁচামাল কারখানায় পৌঁছাতে সময় লাগে ১৫দিন। এটি ব্যবসায়ীদের জন্য বড় ধরণের ক্ষতির কারণ। কারণ কাঁচামাল সময়মতো না আসলে গার্মেন্টেসের কাজ বন্ধ থাকে। এতে ক্ষতি গুনতে হয় ব্যবসায়ীদের। নৌ মন্ত্রণালয় ও বন্দর কর্তৃপক্ষকে অনেকবার এ বিষয়ে অবহিত করার পরও ন্যায্য সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না।

গার্মেন্ট খাতে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ছিল অসামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ার পরও এ খাতের ব্যবসায়ীরা তা মেনে নিয়েছেন। একই সাথে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আন্তর্জাতিক বাজার পড়ে যাওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা অর্ডার পাচ্ছেন না। তাই মূলত গার্মেন্টস খাতের আজকের এই দৈন্যদশা। এই পরিস্থিতির সাথে জড়িয়ে আছে দেশের লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের রুটি-রুজির বিষয়। সংশ্লিষ্টদের মাথায় রাখতে হবে, গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা বাঁচলে শ্রমিকরা বাঁচবে; দেশ বাঁচবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট