চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রতিযোগী দেশের রপ্তানি বাড়ছে, কমছে বাংলাদেশের

এম এ সালাম

৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

গত ৪০ দশকের মধ্যে এবারই প্রথম গার্মেন্টস শিল্প এতো কঠিন
সংকটে পড়েছে। এর আগেও গার্মেন্টস শিল্প নানা সংকটের মধ্যে পড়েছিল
কিন্তু কখনোই রপ্তানি হার নেগেটিভ ছিল না, যা এখন হচ্ছে। চলতি অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ কম গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। যেখানে আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর রপ্তানি বাড়ছে আর সেখানে আমাদের রপ্তানি কমছে। এটা আমাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। প্রতিযোগী বলতে প্রথমেই যে দেশের নাম আসে তা হলো ভিয়েতনাম। এছাড়া পাকিস্তানের যেখানে গত ১০/১২ বছরে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির হার নেগেটিভ ছিল, এখন তারাও ভাল পরিমাণে রপ্তানি করছে। ইউরোপ আমেরিকার বাজারে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো দ্বিতীয়। কিন্তু ভিয়েতনাম যেভাবে দিন দিন তাদের রপ্তানি বাড়াচ্ছে এবং আমাদের যে হারে রপ্তানি কমছে তা অব্যাহত থাকলে খুব অচিরেই বাংলাদেশকে ফেলে ভিয়েতনাম দ্বিতীয় অবস্থানে ওঠে আসবে। সব দেশই আসলে চ্যালেঞ্জের মুখে আছে। কারণ বায়াররা একেক সময় একেক দেশে অর্ডার দিচ্ছে। ডলারের মূল্যহ্রাসের কারণে পাকিস্তান ও ভারতেও রপ্তানি বেড়েছে এবং তারা ডলারের পরিবর্তে বেশি টাকা পাচ্ছে। আর আমাদের দেশে ডলারের দর দিন দিন বেড়েই চলেছে।

আমাদের বর্তমান অবস্থার জন্য তিনটি কারণ দায়ী। প্রথমতঃ ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। এজন্য সরকারের প্রতি বার বার অনুরোধ করা হয়েছিল আমাদের অন্ততঃ দুই বছরের জন্য কমপক্ষে ৫ শতাংশ ইনসেনটিভ দেওয়া হোক। এতে করে এই সেক্টর অস্তিত্ব সংকটের হুমকি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য প্রথম খাত হলো তৈরি পোশাক শিল্প। এরপর জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে যে রেমিটেন্স আসে সেটি। সরকার তাদের বৈধ পথে পাঠানো টাকার উপর ইনসেনটিভ দিচ্ছে যা প্রশংসার দাবিদার। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর হার বেড়েছে দুই শতাংশ। আর আমরা চেয়েছিলাম ৫ শতাংশ ইনসেনটিভ। কিন্তু দেয়া হয়েছে মাত্র এক শতাংশ। এজন্য আমাদের আড়াই হাজার গার্মেন্টস এর মধ্যে কেউ আবেদনই করতে পারেনি।

গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া ও এর ঝুঁকি প্রসঙ্গে এম এ সালাম বলেন, গত ছয় মাসে বিজিএমইএ তাদের নিয়ম-নীতি মেনে বন্ধ করেছে ৬১টি গার্মেন্টস কারখানা, যার কোনটিই ছোট কারখানা নয়। এগুলোর প্রায় প্রতিটিতেই দেড় থেকে তিন হাজার শ্রমিক কাজ করত। একটি পরিসংখ্যানে জানা যায়, দেশে এখন তিন হাজার একশ বৃহৎ গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। যার মধ্যে দুই হাজার গার্মেন্টসই বিজিএমইএ’র। এই দুই হাজারের মধ্যে যদি গত ছয় মাসেই ৬১টি বন্ধ হয় তাহলে বুঝতে হবে আমরা কতটা সংকটে আছি। বর্তমান পরিস্থিতিকে আসলে আর সংকট বলার উপায় নেই। এখন বলতে হবে বেঁচে থাকার লড়াই।
ব্যাংকিং খাত ব্যবসাবান্ধব নয় এমন ইঙ্গিত করে এম এ সালাম বলেন, ব্যাংকিং বিষয়ে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের প্রথম বাধা হলো বৈদেশিক মুদ্রার দর। ডলারের রেট বেড়ে গেলে আমাদের খরচ অনেক বেড়ে যায়। আর সেটি বেসরকারি ব্যাংক কন্ট্রোল করে না। কন্ট্রোল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই তাদের উচিত হবে কোনভাবেই ডলার রেট বাড়তে না দেওয়া। ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার কথা বার বার বলার পরেও কেন করা হচ্ছে না সেটিও দেখা দরকার। খেলাপী ঋণের কারণে ব্যাংকের সুদহার সিংঙ্গেল ডিজিটে আসছে না এমন মন্তব্যের সঙ্গে আমি একমত নই। ব্যাংকসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষ চাইলেই সেটি করতে পারে। আর দেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতাতো আছেই।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট