চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

একান্ত সাক্ষাৎকারে মুনীর চৌধুরী

দেশের ৮ বিভাগে বিজ্ঞান জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হবে

হ ফোরডি মুভি দেখানোর জন্যে ৫টি মুভি বাস এনেছি হ শিশুরা এখন অনেকটা গৃহবন্দী আর মোবাইলবন্দী

নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ২:০৬ পূর্বাহ্ণ

দেশের আটটি বিভাগে বিজ্ঞান জাদুঘর (সায়েন্স মিউজিয়াম) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এছাড়া নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য পাঁচটি ‘ফোর ডি’ মুভি বাস আনা হয়েছে।

দৈনিক পূর্বকোণ’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী। রবিবার পূর্বকোণ স্টুডিওতে আলাপকালে জাদুঘরে সম্প্রতি যোগদানের পর গৃহীত কর্মসূচি প্রসঙ্গে মুনীর চৌধুরী বলেন, কর্মস্থলে যোগদানের পর মোটামুটি সারা বাংলাদেশের সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে যেগুলো বিজ্ঞাননির্ভর তাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। শিক্ষার্থীরা জাদুঘরে আসছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান কুইজ, বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, বিজ্ঞান বক্তৃতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা নিয়মিতভাবে আয়োজন করে যাচ্ছি। প্রতিযোগিতায় যারা ভাল ফলাফল করছে তাদেরকে আমরা পুরস্কৃত করছি। এছাড়াও আমাদের ভ্রাম্যমাণ মিউজিয়াম বাস আছে যা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে বিজ্ঞান শিক্ষা নেই, যেখানে ল্যাবরেটরি নেই, যেখানে অনেক কিছুর অভাব-সেখানে সেই বাস ছড়িয়ে দিচ্ছি। এর ফলে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা জানছে বিজ্ঞান কী। আমাদের সৌরজগত দেখার কিছু ইনস্ট্রুমেন্ট আছে। সেগুলো ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ভার্চুয়ালি মহাকাশে পরিভ্রমণ করাচ্ছি। অতি সম্প্রতি ফোরডি মুভি দেখানোর ব্যবস্থা আছে এমন ৫টি মুভি বাস এনেছি, যেগুলো অনেক আকর্ষণীয়। এগুলো যখন আমরা জাদুঘরের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিব, কী ধরনের গণজাগরণ হবে সেটা ভেবেই আমি পুলকিত হচ্ছি। একটু ভাবুন, আমাদের জীবন থেকে বলতে গেলে বিনোদন হারিয়ে যাচ্ছে। বিনোদন এখন টিভি আর ইন্টারনেট এবং মোবাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।

আমাদের শিশুদের জীবন এখন অনেকটা গৃহবন্দী, মোবাইলবন্দী। আমি তাদের বলছি, তোমরা আসো। বিজ্ঞান জাদুঘরকে সুন্দর করে প্রাকৃতিক পরিবেশে সাজিয়ে দিয়েছি। শিক্ষার্থীরা এসে সেখানে অনেক আনন্দ করে। তাদেরকে চকলেট দিই, গিফট দিই, ফোর ডি মুভি বাসে উঠাই। ওরা দলে দলে আসে। বলা যায়, রীতিমতো একটি মিলনমেলা হয়ে গেছে জাদুঘর। শুধুমাত্র পুঁথিগত জ্ঞান না, জ্ঞানের সাথে বিজ্ঞানের চর্চা, বিনোদনের মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞানকে আরো বিকশিত করার একটি সুবর্ণ সুযোগ পাচ্ছে তারা। আমরা পরিকল্পনা করছি, দেশের ৮টি বিভাগে বিজ্ঞান জাদুঘর করব। চট্টগ্রাম আমাদের অগ্রাধিকারের মধ্যে আছে। চট্টগ্রামে ইতিমধ্যে আমরা জায়গা খুঁজছি। আমাদের অনেক কর্মসূচি করার এবং বিজ্ঞান আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ আছে। শিগগিরই এগুলো দৃশ্যমান হবে।

‘সাধারণ জনগণের কাছে যাদুঘরের যে ধারণা তা হলো, জাদুঘর মানে একটি স্থাপনা যেখানে দুর্লভ ও ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়। আপনি কি সেই ধারণায় বিশ্বাস করেন নাকি জাদুঘরের চিরায়িত ধারণার বিপরীতে অন্য কোন ভাবনা আপনার মধ্যে কাজ করে?’- এমন প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী বলেন, জাদুঘরের কনসেপ্ট, একটি স্ট্রাকচার বা স্থাপনা যেখানে বাচ্চারা, নাগরিকরা, দর্শকরা আসবে যাবে। এটুকুর মধ্যেই এটি সীমাবদ্ধ ছিল। সেই বৃত্ত ভেঙে আমরা চাইছি জাদুঘর থেকে কিছু উদ্ভাবন হবে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ছড়িয়ে যাবে এবং বই পুস্তকের জগত ছাড়িয়ে বাস্তব জগতের সাথে একটি সম্পৃক্ততা ঘটবে। যেখানে বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে প্রতিটি মুহূর্তে জীবনের মানকে উন্নত করা যায়, কীভাবে জীবনের সমস্যাগুলোকে সমাধান করা যায়। মানুষের সম্পদ ও মানুষের জ্ঞান এ দুটির সম্মিলন ঘটিয়ে আমরা চাইছি একটা বিপ্লব তৈরি করতে। মানুষের জীবনটা যে খুব বস্তুকেন্দ্রিক জড় পদার্থকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে তা থেকে মানুষকে মুক্ত করতে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট