চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

মেডিকেল সাইয়েন্স টেকনোলজি ব্যবসা

উচ্চশিক্ষায় চট্টগ্রামে অনন্য অবদান রাখছে ইউএসটিসি

৭ নভেম্বর, ২০২১ | ৫:১৮ অপরাহ্ণ

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সাবেক উপাচার্য। বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ইউএসটিসি) চট্টগ্রামের উপাচার্য। করোনাকালে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি এবং তা উত্তরণের উপায় নিয়ে দৈনিক পূর্বকোণের সঙ্গে কথা বলেছেন এই শিক্ষাবিদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এহছানুল হক| 

পূর্বকোণ: করোনায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন তছনছ। বড় ধরনের ক্ষতির মুখে শিক্ষা। কিভাবে এই ক্ষতি পোষানো সম্ভব?

ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম: করোনাকালে দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ছিল না। ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাসে না থাকলে আসল লেখাপড়াটা হয় না। শিক্ষক যেটি ফিজিক্যালি দেখবে এবং ফিজিক্যালি কোনো জিনিস ল্যাবরেটরিতে শেখাবে সেটা যদি করতে না পারে তাহলে আসল লেখাপড়াটা হবে না। এটি একটি অসুবিধা। তবে সুবিধাটা হচ্ছে করোনাকালে ওটা গ্লোবাল এডুকেশন হয়ে গেছে। আজকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সিঙ্গাপুরের প্রফেসররা পড়াচ্ছেন, আমেরিকার প্রফেসররা পড়াচ্ছেন, কানাড়ার প্রফেসররা পড়াচ্ছেন অনলাইনে, সে সুযোগটা হয়েছে।

তবে এখন ক্ষতি যেটা হয়েছে সেটি পোষিয়ে নেয়ার জন্য আমাদেরকে এখন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এখন যে কাজটি করতে হবে সেটি হল- যে জিনিসগুলো শিক্ষার্থীরা না দেখে পড়ালেখা করেছে সেই জিনিসগুলো কিন্তু ল্যাবরেটরিতে আবারও পড়ালেখা করার সুযোগ করে দিতে হবে। শিক্ষকদের একটু কষ্ট হবে। বিশ্ববিদ্যালয় সেই জিনিসটা করে দেবে।

পূর্বকোণ: এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলেছে। শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যাপারে ইউজিসি থেকে শিক্ষকদের কোনো গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে কি না?

ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম: সম্প্রতি ইউজিসি একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে। সেটা হচ্ছে- ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং’। প্রত্যোক বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা চালু করতে হবে। সেটা অনলাইনেও থাকবে, অফলাইনেও থাকবে। অফলাইন হচ্ছে- ফিজিক্যালি আসতে হবে। যে সাবজেক্টগুলো ফিজিক্যালি পড়াবে আর বাকিগুলো বিদেশি প্রফেসরদের সঙ্গে কোলোবেরেশন করে সাবজেক্টটি পড়ানোর জন্য অন্য সাহায্যও নিতে পারবে।

যেমন- আমাদের সাথে প্রিমিয়ারের একটা কোলেবেরেশন হয়েছে। ওদের ছাত্র আমাদের এখানে আসার দরকার নেই। আমাদের এখানে যদি একজন ভালো শিক্ষক থাকে তাহলে তাদের অনলাইনে পড়াইতে পারবে। আর ওদের যদি একজন শিক্ষক থাকে, তিনি যখন পড়াবে তখন আমাদের ছাত্ররা অনলাইনে ওখানে যুক্ত হতে পারবে।

পূর্বকোণ: শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন?

ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম: কোনো ইউনিভার্সিটি যদি তিন-চার মাস বন্ধ থাকে, তাহলে সেটা পোষানোর জন্য শিক্ষকরা সপ্তাহে একদিন বন্ধ নিত। বাকি দিনগুলোতে ক্লাস নিত। সেটাও করা যায়। তাছাড়া মহামন্য রাষ্ট্রপতি বলছিলেন শিক্ষকরাতো বাবার মতো। তাঁরা ইচ্ছা করলে এটা কাভার করতে পারবে। এরপর আসতেছে- আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাটা তো ব্লেন্ডেড হবে। অনলাইনেও থাকবে, ফিজিক্যাল ক্যাম্পাসও হবে। তবে ল্যাবরেটরিতেগুলোতে তো অনলাইনে পড়ালেখা হবে না। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কিন্তু এখন অনলাইনে ল্যাবরেটরি করার ইকুইপম্যান্ট তৈরি করে ফেলেছে। এখন আইআইটি বোম্বে একটা প্রাকটিক্যাল ক্লাস করাচ্ছে। এটি করতে গেলে আমাদের একটু চ্যালেঞ্জ হবে। চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে- শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস নিলে তার স্মার্টফোন লাগবে, ল্যাপটপ লাগবে। এজন্য দেশের টপ ল্যাবেলে একটা পলিসি করতে হবে। যেমন- একজন ছাত্রের যদি ল্যাপটপ প্রয়োজন হয় তখন সে এডমিশন কার্ড নিয়ে ব্যাংকে যাবে, ব্যাংক তাকে ফাইনান্স করবে। ব্যাংক তাকে যে টাকাটা ফাইনান্স করবে সেই টাকাটা সে চাকরি করার পর পরিশোধ করবে। কারণ এই ছেলেগুলো দেশের এসেট।

পূর্বকোণ: ইউএসটিসি নিয়ে কিছু বলুন?
ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম: ইউএসটিসি জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত চিকিৎসক জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর নুরুল ইসলামের একেবারেই হাতেগড়া। চট্টগ্রামের লোক এবং চট্টগ্রামের প্রতি ভালোবাসা আছে বলেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টি এখানে করেছেন। এখানে মেডিকেল, সাইয়েন্স, টেকনোলজি, ব্যবসা, আর্টস সবকিছু রয়েছে। এখন এটি সেন্টার অব এক্সিলেন্স। মেডিকেলে দেশ-বিদেশে এটির খুব সুনাম। এবার ইউএসএসিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য বিদেশি ছাত্ররা আসবে। আমাদের সঙ্গে মালয়েশিয়ার ছয়টি ইউনিভার্সিটির সঙ্গে কোলেবেরেশন আছে।

এবার আমাদের ৮ জন ছাত্র ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মালয়েশিয়ান মাল্ডিমিয়া ইউনিভার্সিটিতে অ্যাডভান্স কোর্সগুলো করছে অনলাইনে। কোর্সগুলো শেষ হলে তারা এখান থেকে ডিগ্রি পাওয়ার পর ওখানে মাস্টার্স ডিগ্রিতে ভর্তি হতে পারবে। মাস্টার্স ডিগ্রি শেষ করতে তাদের মাত্র ৮ মাস লাগবে। আমাদের মালদ্বীপ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সঙ্গে কোলেবেরেশন হয়েছে। সেখানে আমরা একটা ক্যাম্পাস খোলার পর্যায়ে আছি। একটা সেন্টার এক্সিলেন্স তৈরি করার জন্য যে জিনিসগুলো দরকার সবগুলো আছে ইউএসটিসিতে। বিদেশি শিক্ষকগুলো নিয়োগ করা আমাদের ট্রেডিশন। আমাদের ইন্ড্রাস্ট্রির সাথে কোলেবেরেশন আছে। শিক্ষার্থীদের দেখে হাতে-কলমে করে শেখার একটা কারখানা এটা।
এক কথায় উচ্চশিক্ষায় চট্টগ্রামে অনন্য অবদান রাখছে ইউএসটিসি।

পূর্বকোণ/মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট