চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

একান্ত সাক্ষাতকারে মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম

সব পেশার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নগর উন্নয়নে কাজ করব

ইফতেখারুল ইসলাম

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৭:২৩ অপরাহ্ণ

মেয়র নির্বাচিত হলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী চট্টগ্রামের সকল পেশার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নগরীর উন্নয়নে কাজ করবেন বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তিনি নগরীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনে সর্বত্মক প্রচেষ্টা চালানোর পাশাপাশি কর্ণফুলীর দূষণ রোধ ও পাহাড় কাটা বন্ধে উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছেন। গতকাল (বৃহস্পতিবার) দৈনিক পূর্বকোণের সাথে একান্ত আলাপে তিনি এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তাঁর সাক্ষাতকারটি প্রশ্নোত্তর আকারে নি¤œরূপ:

দৈনিক পূর্বকোণ: আপনার পারিবারিক ঐতিহ্য যেমন আছে, তেমনি রাজনৈতিক ধারাবাহিকতাও আছে। আপনি মেয়র প্রাথী হিসেবে দলের সমর্থন পেয়েছেন। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
রেজাউল করিম: প্রথমে স্মরণ করছি জাতিরজনক শেখ মুজিবর রহমান এবং ১৫ আগস্টে শহীদ এবং ভাষা শহীদদের। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। যিনি মনোনয়ন দিয়ে চট্টগ্রামবাসীর সেবা করার পথ তৈরি করে দিয়েছেন।
আমি চট্টগ্রামের একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী জমিদার পরিবার বহরদার পরিবারের সন্তান। এই অঞ্চলে আমার পরিবার আসে ইয়েমেন থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য। বলিরহাটের যে মসজিদ আছে সে মসজিদে একটি প্রস্তর পাওয়া গেছে সেখানে উদ্বৃত আছে ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে শাসিন বহরদার এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। এর থেকে আমাদের পরিবারের প্রাচীনতা এবং ঐতিহ্যের বিষয়টি বুঝা যায়। রাজনৈতিক দিক দিয়েও এই পরিবারের ঐতিহ্য আছে। এছাড়া ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে আমার বড় ভাই অধ্যাপক সুলতানুল আলম চৌধুরী এই অঞ্চল থেকে এমএলএ নির্বাচিত হয়েছিলেন। আমার দাদাও বৃটিশ-ভারতের প্রখ্যাত আইনজীবী ছিলেন। তিনি প্রায় দীর্ঘ ২২ বছর তৎকালীন ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। সেসময় অসংখ্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। আমার পিতা হারুনুর রশিদ চৌধুরী উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। এই ঐতিহ্য এখনো ধরে রাখার চেষ্টা করি। মানুষের সেবা করার চেষ্টা করি।
দৈনিক পূর্বকোণ: আপনার দৃষ্টিতে এই শহরের প্রধান সমস্যা কি ? সমস্যা সমাধানে আপনার কোন পরিকল্পনা আছে কি?
রেজাউল করিম: জলাবদ্ধতা হল প্রধান সমস্যা। কারণ জলাবদ্ধতার অভিশাপে জর্জরিত আমাদের চট্টগ্রাম। সবার মনে আছে লালদিঘির ময়দানের জনসভায় আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নের ভার নিজ কাঁধে নিয়েছেন। তখন থেকে চট্টগ্রামকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে আমাদের নেত্রী প্রায় আট হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। কাজ চলছে, এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে আমার মনে হয় চট্টগ্রামের মানুষ এই সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করবে।

দৈনিক পূর্বকোণ: নগরের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম আধুনিকায়নের কোন চিন্তা-ভাবনা আছে কি ?
রেজাউল করিম: অবশ্যই আছে। নগরের পরিচ্ছন্নতা, আলোকায়ন, রাস্তাঘাট, নালা-নর্দমা, স্যুায়ারেজ, বিনোদনের ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অসংখ্য সমস্যা আছে। নগরের আধুনিকায়নের জন্য একজন মেয়রের দায়িত্ব হচ্ছে এসব সুন্দরভাবে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা। ১৭ বছর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন আওয়ামী লীগের আলহাজ এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরী। মধ্যখানে পাঁচ বছরের জন্য মেয়র আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়েছিল। পরে আবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এসব চলমান রয়েছে। তিনি সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছেন। সুন্দরভাবে এই শহরকে সাজাচ্ছেন। ইনশা আল্লাহ আমি যদি মেয়র নির্বাচিত হতে পারি, তাহলে আমার পূর্বসূরি মেয়রদের যে উদ্দেশ্য ছিল সেই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাব।
দৈনিক পূর্বকোণ: সিটি কর্পোরেশন আর্থিক অনটনের মধ্যে আছে। এই সমস্যা কিভাবে সমাধান করবেন?
রেজাউল করিম : এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া এখন আমার পক্ষে সম্ভব নয়। যদি নির্বাচনে বিজয়ী হই তখন সেই বিষয়টি চিন্তা করবো।
দৈনিক পূর্বকোণ: ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করতে এবং হকারদের শৃঙ্খলায় আনার ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নেবেন ?
রেজাউল করিম: অবশ্যই নেব। আমাদের দেশে ঘনবসতি, এটি একটি বড় সমস্যা। বিদেশে অর্থাৎ উন্নত দেশেও হকাররা ফুটপাতে বসে। আমরা সহজে বলতে পারি। এরা গরিব লোক। যাবে কোথায়। লাখ, লাখ হকার ফুটপাতে বসে। আমাদের এখানেও সমস্যা আছে, গরিব লোকজন আছে তাদেরকে শৃঙ্খলায় আনতে সবার সাথে আলাপ করে উদ্যোগ নেব।

দৈনিক পূর্বকোণ: নগরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নৈরাজ্যকর। এই সমস্যা সমাধানে আপনি কিভাবে সমন্বয় করবেন ?
রেজাউল করিম: ট্রাফিক ব্যবস্থার যে অব্যবস্থাপনা রয়েছে তার ব্যাপারেও অগ্রিম কোন কথা বলতে চাই না। যদি নির্বাচিত হই তখন যথাযথ পদক্ষেপ নেব। আসলে এটি একটি সমন্বিত প্রয়াস। আমি মনে করি সমস্ত কিছু শুধু ট্রাফিক ব্যবস্থা নয়। একজন মেয়রের একার পক্ষে একটি নগরকে পরিকল্পিতভাবে সাজিয়ে তোলা সম্ভব নয়। কারণ একজন মেয়র পরিকল্পনাবিদ হতে পারেন না। একজন মেয়রের সব বিষয়ে জ্ঞান থাকতে পারে না। আরো সমস্যা আছে তো। তাই বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, আইনজীবী, কৃষিবিদ, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, পরিকল্পনাবিদ সর্বশ্রেণির সর্বপেশার মানুষকে সমন্বিত করে সবার পরামর্শ নিয়ে এই শহরকে সাজানোর স্বপ্ন আমার আছে।
সবাই জানেন, এই শহর আজ বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। প্রাচ্যের রাণী বলা হত এই শহরকে। পুরো শহরটাই একটি পর্যটন শহর। আপনি ভবনগুলো বাদ দেন। বাকি পুরোটাই তো প্রাকৃতিক নৈসর্গ্য। পাহাড়, নদী, সমূদ্র। কিন্তু পাহাড় কেটে ফেলা হয়েছে। নদী দূষণ। যে কর্ণফুলী আমাদের প্রাণ, সেটি দখল ও দূষণে মরতে বসেছে। এগুলোকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে হবে। আমি চাই পরিবেশ বান্ধব, মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, একটি নির্মল ও পরিচ্ছন্ন শহর।
দৈনিক পূর্বকোণ: এই শহর বিলবোর্ডমুক্ত হয়েছে। সেটা ধরে রাখার ব্যাপারে আপনার পদক্ষেপ কি হবে ?
রেজাউল করিম: আমি আগেই বলেছি, পরিকল্পিত, পরিবেশ বান্ধব, পরিচ্ছন্ন একটি শহর গড়ে তোলা আমার লক্ষ্য। বর্তমান মেয়র সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে বিলবোর্ড উচ্ছেদ করেছেন। সেখানে নতুনভাবে বিলবোর্ড বসার আর কোন অবকাশ নেই। যদি কোন বিলবোর্ড এখনো শহরের সৌন্দর্য্যরে হানি ঘটায় আমি তাও উচ্ছেদ করতে বদ্ধপরিকর।

দৈনিক পূর্বকোণ : বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় সৌন্দর্যবর্ধন হচ্ছে তা নিয়ে সমালোচনা আছে। বিশেষ করে ফুটপাতে দোকান নির্মাণের বিষয়টি সমালোচনার বিষয়বস্তু। ফুটপাত অর্থাৎ হাঁটার জায়গায় দোকান না দিয়ে অন্যকোনভাবে সৌন্দর্যবর্ধনের বিষয়টি আপনার চিন্তায় আছে কি ?
রেজাউল করিম: অবশ্যই আছে। আমি এক কথায় বলেছি। সমন্বিত প্রয়াস। আমি একক সিদ্ধান্তে কোন কাজ করতে যাব না। কারণ একজনের মেধা এবং দশজনের মেধার মধ্যে পার্থক্য আছে। একযোগে যদি পরিকল্পিতভাবে সবাই যখন বলবে আপনাকে এটা বাদ দিতে হবে, তখন আমি অবশ্যই বাদ দিব। বিকল্প কোন পথ তারা যদি দেখিয়ে দেন তাহলে তা বাস্তবায়ন করবো।
দৈনিক পূর্বকোণ: দলীয় বিভক্তি কিভাবে কাটিয়ে উঠবেন।
রেজাউল করিম: বিভক্তি আছে। এই বিভক্তি প্রতিহিংসার বিভক্তি নয়। প্রতিযোগিতার। তাই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে কোন বিভক্তি নেই। এটা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই। আমরা আওয়ামী পরিবার। আমাদের অভিভাবক জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবে আমার কারো সাথে বিরোধ নেই। আমি কখনোই কাউকে কটূ কথা বলিনি। ঝগড়া করিনি। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার মধ্যেও যদি বেশি টানাহ্যাঁচড়া থাকে, তাহলে সেখান থেকে আমি বিরত থাকি। আমি মনে করি, আমি যদি যোগ্য হই তাহলে তৃণমূলের নেতারাই আমাকে পদে বসাবে। আর তারা যদি যোগ্য মনে না করেন তাহলে বলি আলহামদুলিল্লাহ। আমি সুস্পষ্টাবে বলতে চাই গত উপ-নির্বাচনে অনেক কিছু লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ছিল, উত্তর, দক্ষিণ এবং মহানগর আওয়ামী লীগ একযোগে কাজ করে জননেতা মোসলেম উদ্দিন আহমদকে বিজয়ী করে এনেছেন। বঙ্গবন্ধুর সৈনিক কখনোই নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করতে পারেন না। নৌকা প্রতীক দেখলে স্থির থাকতে পারেন না। নৌকার বিজয়ের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। আমার দীর্ঘ জীবনে আমিও রাজপথে ছিলাম। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে আমি ছিলাম। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক এবং জাতীয় সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করেছি। চট্টগ্রামবাসীর সাথে ছিলাম। তাই তারা আমাকে ভালবাসে বলে আমি বিশ^াস করি। তারা আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করে তাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন এই আশা আমি করি।
পূর্বকোণ : আপনাকে ধন্যবাদ
রেজাউল করিম : দৈনিক পূর্বকোণ পরিবারকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট