চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

পাহাড় ধ্বংস কার স্বার্থে ?

মন্তব্য প্রতিবেদন

২১ মে, ২০১৯ | ৩:০৩ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এফসিএমএ হ
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও চেয়ারম্যান
ক্রেডিট রেটিং ইনফরমেশন এন্ড সার্ভিসেস লিমিটেড

চাইলেই কি পাহাড় তৈরি করা যায়? উত্তর যদি ‘না’ হয়, তাহলে প্রশ্ন হলো এই পাহাড় ধ্বংস করা কেন?
সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে, পাহাড়- নদী- নালা প্রাকৃতিক সৃষ্টি। পরিবেশবাদীরা বলেন, এগুলো যেমন আছে তেমনি থাকতে দিতে হবে। টিলা- পাহাড়- নদী- নালা আমাদেরই প্রতিবেশী। এদের স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে / চলতে দেয়া মানুষের কর্তব্য। মানুষের জীবন ধারণের উপকরণ বাড়ানোর জন্য এদের ক্ষতি করা যাবে না।
কিন্তু বাস্তবে ঘটছে কি? চট্টগ্রাম শহরের আশেপাশে ১০-১৫ বছর আগে যতগুলো পাহাড় ছিল, বর্তমানে তার কয়টি পূর্বের আকারে আছে? বলা চলে- একটিও না। কিছু কিছুতো বিলীন হয়ে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ দায় কার?
নানা কৌশলে ব্যক্তি স্বার্থে / কিছু মালিক গোষ্ঠির লাভের জন্য পাহাড় ধ্বংস করা হচ্ছে। এটি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এর দায়িত্ব এককভাবে কাউকে দেয়া যায় না। পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসকের যেমন দায় আছে তেমনি আছে সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনেরও। এসব সংস্থা যদি নজরদারির মধ্যে থাকে অর্থাৎ পাহাড় কাটার বিষয় নজরে এলে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে জানাতে বাধ্য থাকবে- এ মর্মে যদি আইন করা হয়, তাহলে সুফল পাওয়া যাবে। পাহাড় কাটা সম্পর্কে অবহিত হওয়া মাত্রই আলোচ্য সংস্থার কর্মকর্তারা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললে প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ পাহাড় রক্ষা হতে পারে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুন্ন থাকবে যদি পাহাড় কাটা বন্ধ করা যায়।
গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাব ইতিমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। ঝড়, জলোছ¡াস, সুনামি, ভূমিকম্প ইত্যাদি কেন ঘটে- এ নিয়ে নানা মত আছে। সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমরা ভুলে গেছি- এ পৃথিবীর ¯্রষ্টা কে, কেন তিনি টিলা-পাহাড়-পর্বত-ভুমি-নদী – নালা সৃষ্টি করেছেন। মহাগ্রন্থ আল-কুরআন পড়ে জানা যায়, আল্লাহ কোন কিছুই বিনা প্রয়োজনে সৃষ্টি করেননি। আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন খুঁত নেই। পাহাড় পর্বতের ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়েছে- পাহাড় পৃথিবীর পেরেক সমতুল্য। ভুমি যেন নড়তে-চড়তে না পারে সেজন্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাহাড় নোঙর হিসেবে কাজ করছে। বিষয়টি বুঝতে না পারায় আমরা নির্বিচারে পাহাড় ধ্বংস করছি। সার্বিক স্বার্থে এটি বন্ধ হওয়া উচিত। অন্তত নিরাপত্তা ঝুঁকিমুক্ত রাখার জন্য হলেও পাহাড় ঘেরাও করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।
আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ – এ সকল দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে কোন মুসলমান ক্ষুদ্রস্বার্থে পাহাড় কাটার মত জঘন্য ও ব্যাপক ক্ষতিকর কাজ করতে পারেন না। কেবল সৃষ্টিকর্তাই পারেন আমাদেরকে এই বিধ্বংসী কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখতে।
আমাদের দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক অস্থিরতাকালে দেখেছি, আইন- শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানমাল রক্ষায় চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। পাহাড়বিধ্বংসী এমন কাজে তাহলে তারা কীভাবে নীরব থাকতে পারে- সেটি বোধগম্য নয়। পাহাড়ের মতো মূল্যবান সম্পদ রক্ষার দায়ভার কে নেবে, সেটি আরও সুনির্দ্দিষ্ট ও কার্যকর হওয়া দরকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট