চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ

আইসিজে’র রায়ের খবর যেভাবে উঠে এসেছে মিয়ানমারের গণমাধ্যমে

অনলাইন ডেস্ক

২৪ জানুয়ারি, ২০২০ | ৭:৪৩ অপরাহ্ণ

মিয়ানমারের শীর্ষ কয়েকটি গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের রায়ের খবর। রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের রায়ের খবর মিয়ানমারের শীর্ষ কয়েকটি গণমাধ্যম গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে। তবে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অফিসের যে ভেরিফাইড ফেসবুক পাতা আছে, সেখানে এ সংক্রান্ত কোন খবর বা পোস্ট দেখা যায়নি। ২৩ জানুয়ারি নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে ওই রায় ঘোষণার পরপরই এই খবরটিকে প্রধান শিরোনাম করে মিয়ানমার টাইমস। মিয়ানমারের শীর্ষ নেতা অং সান সু চি আইসিজের রায় ঘোষণাকে সামনে রেখে যেসব কথা বলেছেন, মিয়ানমার টাইমসের ওই প্রতিবেদনে সেগুলোই গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া সেনা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের বক্তব্যও উঠে এসেছে তাদের ওই প্রতিবেদনে। সু চি রায় ঘোষণা আগে ফাইনানশিয়াল টাইমসকে বলেছেন যে, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ‘অপ্রমাণিত ব্যাখ্যার’ শিকার। তার মতে, বাংলাদেশের কিছু শরণার্থী ‘ভুল বা অতিরঞ্জিত তথ্য দিতে পারে।’

আদালতের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে নিন্দার ঝড় উঠেছে, সেটা রাখাইনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে মিয়ানমারের প্রচেষ্টার উপর ‘নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে’ বলে মিসেস সু চি উল্লেখ করেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো যথাযথ তদন্ত ছাড়াই অপ্রমাণিত তথ্যের ভিত্তিতে মিয়ানমারের নিন্দা করছে বলেও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মিয়ানমারের টাইমসের ওই খবরে মিয়ানমারের কয়েকজন সামরিক নেতার বক্তব্যও তুলে ধরা হয়। মেজর জেনারেল থায়োং নাইং ওই রায়ের প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমাদেরকে যেভাবে দোষারোপ করা হয়েছে, আমরা তেমন নই। দায়িত্বে থাকা অবস্থায় আমাদের সেটাই করতে হবে যা আমাদের করা প্রয়োজন।’ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বলেছেন, আন্তর্জাতিক আদালতের এই সিদ্ধান্ত নির্বিশেষে সেনাবাহিনী তার সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করবে। এদিকে দ্য ইরাওয়াদি পত্রিকার প্রথম শিরোনামে স্থান পেয়েছে আইসিজের এই রায়ের প্রসঙ্গটি। তবে এই গণমাধ্যমের দ্বিতীয় খবরটি ছিল, রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে মিয়ানমার সরকার যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, সেটিকে স্বাগত জানিয়েছে জাপান সরকার। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর জাপানই প্রথম মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কথা জানায়।

গত ডিসেম্বরে মিজ সু চি’র সঙ্গে সাক্ষাতকালে নেপিদোতে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, তার দেশের সরকার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে মিয়ানমারের রাখাইনে কোনও গণহত্যা হয়নি। সেসময় আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মিয়ানমারের বিচার চলছিল। ওই খবরটিতে পরোক্ষভাবে মিয়ানমারের পক্ষে সাফাই গাওয়া হয়। আইসিজের এই রায়ের খবরটি মিয়ানমারের সরকারি গণমাধ্যম দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারে সেভাবে দেখা যায়নি। তবে আইসিজের এই রায়ের বিষয়ে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে দেয়া সংবাদ বিবৃতিটি তারা প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন রায়টি মিয়ানমার সরকার আমলে নিয়েছে। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে দেয়া সংবাদ বিবৃতিটি প্রকাশ করেছে মিয়ানমারের সরকারি গণমাধ্যম। মিয়ানমারের স্বাধীন তদন্ত কমিশন-আইসিওই তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে রাখাইনে কোন গণহত্যা হয়নি। তবে যুদ্ধাপরাধ হয়েছে বলে কমিশন জানতে পেরেছে। এখন সেই ঘটনাগুলো মিয়ানমার সরকারিভাবে তদন্ত ও বিচার করছে বলে ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। মিয়ানমারে বিচার শেষে আদালতের রায় ঘোষণায় সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন মিজ সু চি। সেখানে কি সিদ্ধান্ত আসে সেটা মিয়ানমারের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে গণমাধ্যমটি।

মিয়ানমার অভ্যন্তরীণভাবে যে তদন্ত পরিচালনা করছে তাতে রাখাইনে নৃশংসতার চিত্র পুরোপুরি তুলে ধরা হয়নি বলে অভিযোগ করেছে সুশীল সমাজের কয়েকটি গ্রুপ। মিয়ানমার টাইমসে এই খবরটি প্রকাশ পায়। খবরটিতে আরও জানা যায় সুশীল সমাজের এমন শতাধিক গ্রুপ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইয়াঙ্গুনের মার্কিন দূতাবাস, আইসিজের এই রায়ের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছে এবং তারা আশা করছে যে এই সিদ্ধান্ত রাখাইনে ন্যায়বিচারের পথ সুগম করবে। মিয়ানমার তাদের ওই স্বাধীন তদন্তে গণহত্যার কোন প্রমাণ পায়নি বলে, যে ঘোষণা দিয়েছে তার নিন্দা জানিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে মিয়ানমার এভাবে আইসিজের রায়কে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, কিছু মানবাধিকার সংস্থা তাদের অসমর্থিত তথ্যের ভিত্তিতে মিয়ানমারের নিন্দা করেছে এবং রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিকৃত চিত্র উপস্থাপন করেছে। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অফিসের যে ভ্যারিফাইড ফেসবুক পাতা আছে, সেখানে আইসিজের রায় সংক্রান্ত কোন খবর বা পোস্ট দেখা যায়নি। এতে মিয়ানমারের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক হুমকির মুখে পড়েছে এবং রাখাইনে টেকসই উন্নয়নে বাধার সৃষ্টি হয়েছে বলে ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া দ্য স্ট্যান্ডার্ড টাইমস ডেইলি, ইলেভেন মিডিয়া গ্রুপসহ আরও কয়েকটি গণমাধ্যমে এই খবরটিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হতে দেখা গেছে। দেশটির সেনাবাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী বা যে কেউ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যেন গণহত্যা না চালায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ধরনের প্রমাণ সংরক্ষণ করতে হবে। নির্দেশগুলো যথাযথভাবে যে পালিত হচ্ছে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করে আইসিজেকে প্রতিবেদন দেবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/এম

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট