চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

যাচাই না করে বেঙ্গালুরুতে বস্তি উচ্ছেদ

অনলাইন ডেস্ক

২২ জানুয়ারি, ২০২০ | ৭:০৪ অপরাহ্ণ

ভারতের দক্ষিণী রাজ্য কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরু শহরে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ দাবি করে দু’শর বেশি বস্তি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। গত রোববার শহরের মারাঠাহাল্লি থানার কাছে কারিয়াম্মানা আগ্রাহরা নামের একটি বস্তিতে বাস করা বাংলা ও হিন্দিভাষী শ্রমিকদের বস্তিঘর ভেঙে দিয়েছে বেঙ্গালুরু পৌরসভা এবং স্থানীয় পুলিশ।

ওই বস্তিতে বাস করা লোকজন এখন খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের অনেকে আতঙ্কে বেঙ্গালুরু ছাড়তে শুরু করেছেন। তাঁরা টিকিটের জন্য রেলস্টেশনে অপেক্ষা করছেন।

বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার ভাস্কর রাও বলেছেন, শুধু এই বস্তিই নয়, বেঙ্গালুরু শহরের ১৩টি এলাকা তাঁরা চিহ্নিত করেছেন, যেখানে ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ বসবাস রয়েছে।

বস্তি থেকে উচ্ছেদ হওয়া এক শ্রমিক জানান, গত রোববার সাদাপোশাকে আসা পুলিশ বস্তির বাংলা এবং হিন্দিভাষীদের বেরিয়ে যেতে বলে। বস্তিবাসীরা বারবার বলতে থাকেন, তাঁরা ভারতীয় নাগরিক। তাঁদের কাছে ভোটার পরিচয়পত্র, আধার কার্ড, রেশন কার্ড ইত্যাদি রয়েছে। কিন্তু পুলিশ সেসব কথা না শুনে তাঁদের ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়।

বেঙ্গালুরু পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, বস্তিবাসীর পরিচয়পত্র যাচাইয়ে পশ্চিমবঙ্গে দল পাঠিয়ে লাখ লাখ রুপি খরচ করার সময় নেই। এ ব্যাপারে অতীতে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ সহযোগিতা করেনি। পৌরসভার রেকর্ড বলছে, বস্তিতে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ রয়েছে।

বস্তি এলাকাটি কর্ণাটক বিধানসভার মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত। স্থানীয় বাসিন্দা চেতন বাবুর জমিতে গড়ে উঠেছিল এই বস্তি। চেতন বাবু এই বস্তি ভাড়া দিয়ে অর্থ আয় করতেন। কয়েক দিন আগে বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক অরবিন্দ লিম্বভালি এই বস্তির ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা পোস্ট করে অভিযোগ তোলেন, এই বস্তিতে বাস করছেন বেআইনিভাবে আসা বাংলাদেশিরা। এতে এই এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এরপরই বিষয়টি নজরে আসে বেঙ্গালুরু পৌর করপোরেশনের। পৌর করপোরেশন নোটিশ পাঠায় ওই জমির মালিক চেতন বাবুকে। তারপর পৌর করপোরেশন স্থানীয় পুলিশ নিয়ে রোববার বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয় ওই বস্তির দুই শতাধিক ঘর।

এ ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন বেঙ্গালুরুর সমাজকর্মী এবং আইনজীবী বিনয় শ্রীনিবাস। তিনি বলেছেন, স্থানীয় পুলিশ নিয়ে দুই শর বেশি বস্তিঘর ভেঙে দিয়েছে বেঙ্গালুরু পৌর করপোরেশন। পুলিশের মধ্যে অধিকাংশ ছিল সাদাপোশাকে। বস্তির মানুষ বাংলাদেশি কি না, তা যাচাই না করে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে বস্তিঘর। তিনি বলেন, কর্ণাটক রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত, আসাম এবং বিহার থেকে কাজের সন্ধানে আসা মানুষেরা সেখানে বসবাস করতেন। তাঁরা এলাকায় নির্মাণশিল্প, দৈনিক শ্রমিক, পরিচারিকা এবং বিভিন্ন আবাসনে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। তাঁদের কাছে ভারতের ভোটার পরিচয়পত্র, রেশন কার্ড, আধার কার্ড রয়েছে।

পূর্বকোণ/-আরপি

শেয়ার করুন