চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আনন্দবাজার পত্রিকার খবর, সিএবি-র জের

প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের সমীকরণ বদলে যাচ্ছে?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা অফিস

১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ

গোলাপি বল নিয়ে শহর জুড়ে উন্মাদনার মধ্যেই ইডেনে পা রেখেছিলেন শেখ হাসিনা। অথচ ‘পরম মিত্র’ বাংলাদেশের সেই প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানোর কোনও তাগিদই দেখাননি বিজেপির শীর্ষ নেতা-মন্ত্রীরা। তাঁদের এমন ‘ব্যবহারে’ সেইসময়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। নাগরিক সংশোধনী বিল (সিএবি) নিয়ে ভারতে টানাপড়েনের মধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন গত বৃহস্পতিবার পূর্ব নির্ধারিত ভারত সফর বাতিল করায়, দুই দেশের সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, নাগরিক সংশোধনী বিলের হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা যে ভাবে পড়শি দেশে অমুসলিমদের উপর নিপীড়নের কথা বলে বেড়াচ্ছেন, তাতে দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে না তো?

গতকাল এমন খবর ছেপে আনন্দবাজার পত্রিকা বলেছে, রাজনৈতিকদের এই আশঙ্কা অবশ্য নতুন নয়। নির্বাচনী প্রচারের সময় বিজেপি নেতারা যখন জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) তৈরি করে দেশ থেকে সমস্ত অনুপ্রবেশকারীদের তাড়ানোর কথা বলছিলেন, সেইসময় বাংলাদেশের তরফেই প্রথম উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী বছর মার্চে মোদিকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানান তিনি। আর সেখানেই আলোচনার ফাঁকে মোদির সামনে এনআরসি প্রসঙ্গ পেড়ে ফেলেন হাসিনা। এত সংখ্যক মানুষকে ফেরত পাঠালে কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবেন, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। সেইসময় তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন মোদি। কিন্তু তার মধ্যেই ১ অক্টোবর বাংলার একটি মঞ্চে দাঁড়িয়ে জ্বালাময়ী ভাষণ দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘সারা দেশেই এনআরসি হবে। তার আগে সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করাবে সরকার। তার আওতায় মতুয়া-সহ ধর্মীয় কারণে পড়শি দেশ থেকে নিপীড়িত হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন এবং ক্রিস্টানদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।’ তার ঠিক পরেই দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা। সেখানে ফের একবার এনআরসি প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন তিনি। সেইসময় তাঁকে আশ্বস্ত করার বদলে মোদি জানান, শীর্ষ আদালতের নির্দেশে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কী ভাবে তা এগিয়ে যায়, তা পরে দেখা যাবে। তারপরেও ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এক বিশেষ উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে বলে মন্তব্য করতে শোনা যায় শেখ হাসিনাকে। কিন্তু গত বুধবার রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার দুপুরেই প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে ভারত সফর বাতিল করেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী।

তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভারত সফর বাতিল করেন সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও। তাতেই দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করলে, তা ভারতের পক্ষে শুভ হবে না বলে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক করেছেন প্রাক্তন পররাষ্ট্রসচিব এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সম্পর্কে অমিত শাহের মন্তব্য টেনে সম্প্রতি একটি বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু সে দেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের উইপোকা বলে উল্লেখ করলে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর তা খুব একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে না। এ ব্যাপারে একমত ঢাকায় ভারতের প্রাক্তন হাইকমিশনার বীণা সিক্রিও। তাঁর মতে, পড়শি দেশে যে অমুসলিমদের উপর নিপীড়ণের ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, তা হয়তো খালেদা জিয়ার আমলে বেশ কিছু রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এখন তা নিয়ে কথা বলে খামোকা দুই দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির তৈরি হচ্ছে। অবিলম্বে তা দূর হওয়া উচিত।

ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব ঢাকায় : ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএবি) জেরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর বাতিল করার পর ভারতের উপর আরও চাপ বাড়াল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনারকে ডেকে দূতাবাস এবং কূটনীতিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বলেছে শেখ হাসিনা সরকার। আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের (সিএবি) প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দিনভর উত্তপ্ত ছিল আসাম। সেই বিক্ষোভে আক্রান্ত হয় বাংলাদেশ দূতাবাসও। গুয়াহাটিতে দূতাবাসের সামনে দু’টি সাইনবোর্ডে কালি লেপে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। এমনকি বিমানবন্দর থেকে বেরনোর পথে বিক্ষোভের মুখে পড়েন বাংলাদেশের এসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনার শাহ মোহাম্মদ তানভির মনসুরও। তাতেই নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ। ওই রাতেই সেখানে ভারতের হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাসকে ডেকে পাঠান সে দেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব কামরুল আহসান। গোটা ঘটনায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

ভারতের তরফে বাংলাদেশ সরকারকে সঙ্গে সঙ্গেই আশ্বস্ত করা হয় বলে জানা গিয়েছে। তবে দুই মন্ত্রী, আসাদুজ্জামান খান এবং একে আবদুল মোমেনের ভারত সফর বাতিলের পরই বাংলাদেশের তরফে এমন বার্তায় ভারতের পক্ষে অস্বস্তি কিছুটা হলেও বাড়ল বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।

শেয়ার করুন