চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আসামে বিক্ষোভ, পুলিশের গুলিতে নিহত ৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ছবি-এএফপি

১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ

ভারতের আসামে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের (সিএবি) প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার আসামের রাজধানী গোহাটিতে কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নামেন হাজারও জনতা। এ সময় উত্তেজিত জনতাকে থামাতে গুলি চালালে এতে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ দু’জন গৌহাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে।

তবে দেশটির সরকারি সূত্র তিন জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুয়াহাটির লাচিতনগরে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে দীপাঞ্জল দাস নামে সেনা ক্যান্টিনের কর্মী এক যুবক নিহত হয়েছেন।

এর আগে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের (সিএবি) প্রতিবাদে আসামে বুধবার থেকে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন হাজার হাজার মানুষ। আসামের বৃহত্তর শহর ও বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল গুয়াহাটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা এবং বিক্ষোভকারীদের দমনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। কারফিউ অমান্য করে বৃহস্পতিবার সকালে গুয়াহাটিতে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের দাবি, ছয় বছর ধরে সহিংস আন্দোলন করার পরে যে আসাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রভাবে সেই চুক্তি বিঘ্নিত হবে। 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসামের ১০টি জেলায় মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য মোবাইল ইন্টারনেট সেবা স্থগিত করা হয়েছিল, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে যা আরও ৪৮ ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে।

গুয়াহাটিরই হাতিগাঁও শঙ্কর পথে পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। তবে তার নাম জানা যায়নি।

বেসরকারি সূত্রের দাবি, শঙ্কর পথে মৃতের সংখ্যা দুই। বশিষ্ঠ নতুন বাজার এলাকাতেও একজন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।

এদিকে ডিব্রুগড়ে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী রামেশ্বর তেলির বাড়িতে হামলার চেষ্টা হলে পুলিশের লাঠি ও গুলিতে বেশ কয়েক জন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

মুখ্যমন্ত্রীর নিজের এলাকা ছাবুয়ার বিধায়ক বিনোদ হাজরিকার বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। আক্রান্ত হয় মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা শান্তনু ভরালি, বিজেপির মন্ত্রী রঞ্জিত দত্ত, বিধায়ক আঙুরলতা ডেকার বাড়িও। সকালে আসাম গণপরিষদের গুয়াহাটির আমবাড়ি সদর দপ্তরে ভাঙচুর হয়।

এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় সিএবি পাস হওয়ার পরপরই আসামের বিভিন্ন অংশে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পুরো রাজ্যকে অস্থির করে তোলে।

বিক্ষোভ থামাতে আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। এরপরও বিক্ষোভ থামানো যায়নি। নিরাপত্তাবাহিনীর উপস্থিতিতেই জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ করছে জনতা। জ্বলন্ত কাঠ ফেলে রাস্তা অবরোধ করা হয়েছে। এমনকি, ডিব্রুগড়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের একটি দফতরে হামলা চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে স্থানীয় বিজেপি নেতারা। দফতরের বাইরে বেশ কয়েকটি গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি তাদের।

এদিকে বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু) এবং কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি (কেএমএসএস)। সাধারণ মানুষকে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছে তারা। আসুর একটি বিবৃতিতে বলা হয়, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।

প্রতিবাদ চলতে থাকায় আসাম ও প্রতিবেশী ত্রিপুরায় সব ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। গোহাটি ও ডিবরুগড়গামী বহু ফ্লাইট বাতিল করা হয়। হাজার হাজার লোক রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে অংশ নিতে থাকায় একপর্যায়ে আসামের চারটি এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।

গোহাটিতে প্রতিটিতে ৭০ জন করে সেনাবাহিনীর দুটি দল মোতায়েন করা হয়। এর পাশাপাশি তিনসুকিয়া, ডিবরুগড় ও জোরহাট জেলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

এই আইনবলে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে আসা মুসলমান বাদে ভারতে বসবাসকারী হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, জৈন ধর্মানুসারী শরণার্থীরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবে। বিজেপির সমালোচকরা এই পদক্ষেপকে বৈষম্যমূলক, মুসলমানবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক বলে বর্ণনা করেছেন। সূত্র: এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকা।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট