চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

অর্থের জন্য স্ত্রী-কন্যাকে বন্ধুদের দিয়ে ধর্ষণ

পূর্বকোণ ডেস্ক

১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

দু বছর ধরে প্রতি সপ্তাহান্তে ধর্ষণ করা হয়েছে মেয়েটিকে। বারো বছর বয়সের মেয়েটি এ তথ্য জানিয়েছে তার কাউন্সেলরদের। এই ধর্ষণকারীদের অনেকেই তার বাবার পরিচিত। অপরিচিতও কেউ কেউ। ঘটনা শুরু হয়েছিল তার বাবা বাসায় বন্ধুদের মদ খেতে ডাকার মাধ্যমে, বলছে মেয়েটি। মাতাল সেই মানুষগুলো তার বাবা-মায়ের সামনেই তাকে নিয়ে মজা করতো এবং স্পর্শ করতো। অনেক সময় কোন কোন পুরুষ তাদের এক কামরার বাসায় মায়ের সঙ্গে ঢুকে যেন হারিয়ে যেতো। এরপর একদিন, মেয়েটি মনে করে বলছে, তারা পিতা তাকে সেই কামরায় একজন পুরুষের সঙ্গে জোর করে ঢুকিয়ে দেয় এবং বাইরে থেকে দরজা আটকে দেয়। পুরুষটি তাকে ধর্ষণ করে। অচিরেই তার শৈশব একটা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। তার বাবা নানা পুরুষকে ফোন করতো, মেয়ের সঙ্গে থাকার জন্য তাদের সময়ের বুকিং দিতো এবং

সেসব পুরুষের কাছ থেকে অর্থ নিতো। কাউন্সেলররা মনে করছেন, এরপর থেকে মেয়েটিকে অন্তত ৩০ জন পুরুষ ধর্ষণ করেছে।
গত ২০শে সেপ্টেম্বর একজন শিক্ষকের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে শিশুকল্যাণ কর্মকর্তারা মেয়েটিকে তার বিদ্যালয় থেকে উদ্ধার করে একটি আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসে। শিশুকল্যাণ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডাক্তারি পরীক্ষায় সে ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। এই ঘটনায় তার পিতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, শিশুকে যৌন উদ্দেশ্যে ব্যবহার এবং যৌন হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের সবার জামিন আবেদন নাকচ করে দেয়া হয়েছে।

অপরাধ পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে প্রতি ১৫ মিনিটে একটি শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। পুলিশ মেয়েটির পিতার পরিচিত আরও পাঁচজন ব্যক্তিকে খুঁজছে যাদের বিরুদ্ধে মেয়েটিকে ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে।
পরিবারটির পরিচিত ২৫ জন ব্যক্তির একটি নাম ও ছবি দিয়ে একটি তালিকা তৈরি করে মেয়েটিকে দেখাচ্ছেন তদন্তকারীরা।
‘আমার কারো চেহারা মনে পড়ে না। সবার চেহারাই ঝাপসা,’ তদন্তকারীদের সে বলেছে। দক্ষিণ ভারতের একটি বর্ধিষ্ণু শহরে বসবাস করতো পরিবারটি । এই শহরটি, উঁচু পাহাড়, পরিষ্কার ঘরবাড়ি আর স্বচ্ছ নদীর জন্য পরিচিত।

সেপ্টেম্বরের একদিন, মেয়েটি যে এলাকায় থাকতো, তার কাছাকাছি কয়েকজন শিক্ষকের কাছ থেকে কিছু তথ্য পায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। ‘পরিবারটির মধ্যে কিছু যেন ঝামেলা আছে এবং তার বাড়িতে কিছু একটা চলছে। মেয়েটির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা উচিত,’’ তারা বললো।
এরপর স্কুল কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে নারীদের একটি সহায়তা গ্রুপ থেকে একজন কাউন্সেলরকে ডেকে পাঠালেন।পরদিন সকালে এলেন ওই কাউন্সেলর। শিক্ষকদের কক্ষে মুখোমুখি বসলেন তারা।

ওপর তলায় বসে ছিলেন শিশুটির মা, তিনি তখনও জানেন না কি ঘটতে চলেছে। তিনি জানেন, এটি ছিল ¯্রফে একটি রুটিন অভিভাবক-শিক্ষক বৈঠক। কাউন্সেলর মেয়েটিকে বললেন, ‘তোমার পরিবার আর জীবন সম্পর্কে আমাকে সব খুলে বলো।’ তারা চার ঘণ্টা ধরে কথা বললেন।
মেয়েটি বললো যে, বাড়িতে তার কঠিন সময় যাচ্ছে কারণ তার পিতার কোন চাকরি নেই। বাড়ি ভাড়া না দিতে পারার কারণে যেকোনো সময় তাদের বের করে দেয়া হতে পারে, জানিয়ে সে কাঁদতে শুরু করলো। এরপরে সে নিরব হয়ে গেল। কাউন্সেলর তাকে তার স্কুলের জেন্ডার ক্লাসের কথা বোঝালেন এবং বললেন যে কীভাবে অহরহ শিশুদের নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে।
কথার মাঝেই মেয়েটি বলে উঠলো, ‘আমার বাড়িতেও এরকম কিছু ঘটছে। আমার বাবা আমার মাকে নিপীড়ন করছে। কাউন্সেলর জানতে চাইলেন, সে আরও বিস্তারিত বলতে পারে কিনা।

মেয়েটি বললো, সে একবার একজন ব্যক্তির দ্বারা হামলার শিকার হয়েছে, যে আসলে তার মায়ের জন্য এসেছিল। তার মা ওই ব্যক্তিকে সাবধান করে

দেন। কিন্তু এরপর সে যখন স্কুলে থাকে, তখন অনেক ব্যক্তি তাকে তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসে। আরো বেশি বেশি পুরুষ আসতে শুরু করে তাদের বাড়িতে। রাতে মদ খাওয়ার পর তারা তাকেও যৌন নিপীড়ন করতে শুরু করে।

এই প্রথমবারর মতো সে স্বীকার করে, পুরো আলাপ আলোচনার প্রায় অর্ধেক সময়ে এসে, সে জানায় যে, তার সঙ্গে যৌনমিলন করা হচ্ছে। এরপরে শৈশব হারিয়ে যাওয়ার ভয়াবহ এক কাহিনী বর্ণনা করতে শুরু করে মেয়েটি।

‘পুরুষরা এসে আমার মাকে বেডরুমে নিয়ে যেতো। আমি মনে করতাম এটাই স্বাভাবিক। এরপরে আমার বাবা আমাকেও একজন অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে একটি কক্ষে ঠেলে দেয়,’ সে বলে। অনেক সময় তার পিতা তাকে নগ্ন ছবি তুলতে বাধ্য করতো এবং সেগুলো নানা ব্যক্তির কাছে পাঠানো হতো, যারা তার কাছে আসতো। এ বছরের শুরুর দিকে তার বাবা-মা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে কারণ প্রায় তিনমাস ধরে তার মাসিক হচ্ছিল না।
সমাজকর্মীরা বলছেন ভারতে বিরাট সংখ্যক পুত্র-শিশু বা কিশোরও নিয়মিত যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।
এই সময়ে এসে কাউন্সেলর নিশ্চিত হন যে, মেয়েটি ধারাবাহিক ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তিনি শিশু কল্যাণ কর্মকর্তাদের ডেকে পাঠান এবং মেয়েটিকে জানান যে, তাকে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাকে সে সময় শান্ত দেখাচ্ছিল।
শিক্ষকদের সঙ্গে মিটিং শেষ করে বেরিয়ে এসে তার মা দেখতে পান, তার মেয়েকে একটি গাড়িতে তোলা হচ্ছে এবং তিনি চিৎকার শুরু করেন।
‘কীভাবে তোমরা আমার মেয়েকে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছ?’

কাউন্সেলর তাকে জানান যে, তারা মেয়েটিকে নিয়ে যাচ্ছেন কারণ তার কিছু ‘আবেগজনিত সমস্যা রয়েছে’ এবং এজন্য তাকে কাউন্সেলিং করতে হবে। ‘আমার অনুমতি ছাড়া আমার মেয়েকে কাউন্সেলিং করার আপনি কে?’
শিশুদের যৌন নিপীড়নের লজ্জাজনক রেকর্ড রয়েছে ভারতের। সর্বশেষ যে বছরের তথ্য পাওয়া যায়, সেই ২০১৭ সালে ভারতে ১০,২২১টি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।
-বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন