চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শৈশব বাঁচাতে প্রাক-প্রাথমিক স্কুল বন্ধের ঘোষণা

অনলাইন ডেস্ক

১২ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৩:১৩ অপরাহ্ণ

প্রি-প্রাইমারি, নার্সারি, মন্তেসরি, কিন্ডারগার্টেন বা নানা নামের প্রাথমিক স্কুলের আগের এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাতেখড়ির প্রচলন রয়েছে ভারতে। যেখানে ভারতের একটা বড় অংশে প্রথম শ্রেণির আগে থেকেই বাচ্চাদের ‘পড়াশোনা’র সূচনা হয়ে যাচ্ছে।  প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার ফলে শিশুদের শৈশব চুরি হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে সম্প্রতি এ শিক্ষাব্যবস্থা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারের মতে, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় আদলে শিশুদের শৈশব চুরি হয়ে যাচ্ছে। শিশুদের ভীষণ ক্ষতি হচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা বন্ধের পর শিশুরা সরাসরি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হবে। তবে খেলাধুলার মাধ্যমে কিছু শেখার জন্য অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বা প্লে স্কুল রাখা যেতে পারে।

এদিকে রাজ্য সরকারের এমন সিদ্ধান্তে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে তুমুল সমালোচনাও। হরিয়ানা রাজ্যের শিক্ষাবিদ-রাজনীতিকরা মোটামুটি দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদদের মতামত তুলে ধরা হয়েছে। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার হরিয়ানা সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানালেও বেশ কিছু শর্ত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ছোটদের সাধারণভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেয়া উচিত। ছোট থেকেই লেখাপড়ার চাপ না দিয়ে স্বাধীনভাবে বিকশিত হওয়ার সময় দরকার হয়। যে সময়টা তারা লেখাপড়ার কথা ভাববেই না। তবে সেক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। এমন বন্দোবস্ত করতে হবে যাতে প্রাথমিক স্কুলগুলোতেই খেলাধুলা এবং লেখাপড়ার মধ্যে সমন্বয় সাধন হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের সময়ে তো পাঁচ বছর বয়স হওয়ার আগে হাতেখড়িই দেয়া হতো না। কিন্তু এখনকার অভিভাবকরা মনে করেন, মায়ের পেট থেকেই শিশুরা শিক্ষাগ্রহণ শুরু করুক। আমি মনে করি, আগের সময়ের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে কোনো ভুল ছিল না। তবে হরিয়ানার এমন সিদ্ধান্তকে কার্যত কান্ডজ্ঞানহীন বলে উল্লেখ করছেন রাজ্যের স্কুল সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান তথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অভীক মজুমদার। তিনি বলেছেন, ‘আমি আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি, রাইট টু এডুকেশন অ্যাক্ট-২০০৯ না মেনে হরিয়ানা সরকার কীভাবে এটা করল! জানি না, কোন শিক্ষাবিদের মাথায় এটা এসেছে! পৃথিবীর সব শিক্ষাবিদ প্রি-প্রাইমারি এবং নার্সারি শিক্ষার কথা বলছেন। অথচ এরা!’

অভীক মজুমদারের মতে, এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। প্রি-প্রাইমারি, নার্সারি বা মন্তেসরি শিক্ষা পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্যই হলো একটা বিশেষ পথে শিশুদের মানসিক বিকাশ ঘটানো। পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুরা স্কুলে এসে খেলাধুলা, গান, ছবি আঁকা এসবের মধ্যে দিয়ে একটিভিটি বেসড লার্নিং সিস্টেমে শিখছে। এটা একেবারে শিশুদের আনন্দময় শিক্ষা। যারা শিক্ষাবিজ্ঞান মানেন না, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থাকে মানতে চান না; তারাই হরিয়ানা সরকারের এ ব্যবস্থার পক্ষে মত দিতে পারেন। হরিয়ানা রাজ্যের সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বলছেন, আমাদের দেশে (ভারত) ক্লাস ওয়ানের নিচে কোনো সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা নেই। অভিভাবকরা প্রাইভেট শিক্ষাব্যবস্থায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ ক্লাস ওয়ান থেকে যে শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে, তাতে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। নিজেদের সন্তানকে সেই প্রতিযোগিতার উপযুক্ত করে তোলার জন্য সেটা স্বাভাবিক। সেই কারণেই তারা এ ব্যয়বহুল শিক্ষাব্যবস্থার পথে হাঁটছেন।

 

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/এম

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট