চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

তুমুল হট্টগোলের মধ্যে ভারতের লোকসভায় নাগরিকত্ব বিল পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক হ ঢাকা অফিস

১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ

ভারতে বিরোধী দলীয় সাংসদদের তুমুল হট্টগোলের মধ্যেই ভারতের পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষ লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয়েছে। এর আগে গতকাল সোমবার সকালে সংসদের বিলটি পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পরে, ৯০ মিনিট উত্তপ্ত বিতর্কের পর ২৯৩-৮২ ভোটের ব্যবধানে এটি পাস হয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য মতে, এখন এটি আইনে পরিণত হতে হলে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার অনুমোদন পেতে হবে। তবে সেখানে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় তা পাস হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।

বিলটির প্রতিবাদে উত্তর-পূর্বের রাজ্য আসামের প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠনের জোট আজ মঙ্গলবার ১১ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। তারা মনে করছে, এই বিলটি আসলে ১৯৮৫ সালের আমাম চুক্তি বাতিল করার প্রয়াস। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের চুক্তি অনুযায়ী ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব অবৈধ অভিবাসী এ দেশে শরণার্থী হিসেবে বিবেচিত হবে। আসামের শীর্ষ ছাত্র সংগঠনগুলো হুমকি দিয়েছে, বিলটি পাস হলে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করবে তারা।
১৯৫৫ সালের মূল নাগরিকত্ব আইনটিতে বলা হয়েছে, অন্য দেশ থেকে ভারতে আসা কোনো ব্যক্তি যদি ভারতের নাগরিকত্ব প্রার্থী হন, তা হলে তাকে গত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর এ দেশে বসবাস করছেন এই প্রমাণ দেখাতে হবে। কিন্তু সেই বিধান বদলাতেই আনা এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে বলা হয়েছে, ভারতে টানা ৫ বছর ধরে বসবাস করা অমুসলিমরাই নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

দিল্লির সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকালে বিল উত্থাপনের সময় লোকসভায় দাঁড়িয়ে কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘ধর্মের ভিত্তিতে কংগ্রেস দেশভাগ না করলে আজ এই বিলের প্রয়োজনীয়তা হতো না।’ তার এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী বেঞ্চ থেকে সোচ্চার হয়ে ওঠেন সবাই। বিলের বিরোধিতা করে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেসসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলো। তখন অমিত শাহ বলেন, ‘এই বিল সংবিধান বিরোধী নয়। এমনকী সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করছে না। এই বিল সংখ্যালঘু বিরোধীও নয়।’ পরে বিলের ওপর ভোটাভুটি হয়। সেখানে বিলটির পক্ষে ভোট পড়ে ২৯৩টি। আর বিপক্ষে পড়ে ৮২টি ভোট। ফলে সহজেই পাশ হয়ে যায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল।

এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর ভারতের মন্ত্রিসভায় এই বিতর্কিত বিলটি পাশ হয়। ওই বিলে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সে দেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু মুসলিম শরণার্থীদের বিষয়ে বিলে কিছু বলা হয়নি। এর অর্থ হচ্ছে, পার্শ্ববর্তী ওই তিন দেশ থেকে আসা মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনকে ভারতের নাগরিকত্ব দেয়া হবে না।
নতুন বিলে ওই তিন দেশ থেকে আসা অমুসলিম শরণার্থীরা ভারতে পাঁচ বছর থাকলেই নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। আগের আইনে ভারতের নাগরিকত্ব পেতে হলে শরণার্থীদের সেখানে ১১ বছর বসবাস করতে হতো।

এদিকে, সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল (সিএবি) পাস হওয়ার দিনই ফের বিভাজনের অভিযোগ তুলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, যা আজ সংসদে পেশ হল, তা আসলে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-রই অন্য পিঠ। গতকাল খড়গপুরে সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে বসে তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, বাংলায় এনআরসি হতে দেবেন না তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আসুন জোট বাঁধি। একটা লোককেও দেশ থেকে তাড়ানো চলবে না। নো এনআরসি। কোনও বিভাজন হবে না, নো ডিভাইড অ্যান্ড রুল।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘যার যতই রাজনৈতিক স্লোগান থাক, মনে রাখবেন দেশের থেকে বড় কিছু নয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট