চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘দেশে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতেই’ হেগের পথে সু চি

৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর সেনাবাহিনীর গণহত্যার অভিযোগের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে লড়তে অং সান সু চির নেদারল্যান্ডস যাত্রার পেছনে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ফায়দা লোটাই আসল উদ্দেশ্য বলে ধারণা পশ্চিমা বিশ্লেষকদের। মঙ্গলবার হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের গণহত্যা নিয়ে অভিযোগের প্রথম শুনানি হবে; সু চি এতে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।
এ ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী এ রাজনীতিকের ভাবমূর্তি আরও ক্ষুণœ করবে বলে মনে করা হলেও দেশে তার সমর্থন আরও সুসংহত করছে। সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে সু চির পক্ষে একের পর এক সমাবেশ হচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ২০১৬ সালে শেষবার মিয়ানমারের এ ডি ফ্যাক্টো নেত্রীর পশ্চিম ইউরোপ সফরে তাকে বরণ করা হয়েছিল গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসেবে, যিনি তার দেশে অর্ধশতকের সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে বেসামরিকদের হাতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব তুলে দেয়ার মূল দায়িত্ব পালন করেছেন। তিন বছর পর আগামী সপ্তাহে সু চি একই মহাদেশে ফিরবেন তার একসময়কার ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ সেনাবাহিনীর ‘গণহত্যার’ পক্ষে সাফাই গাইতে।-বিডিনিউজ
২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় ‘বিদ্রোহীদের’ কথিত হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেই সঙ্গে শুরু হয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল।
গত দুই বছরে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। তাদের কথায় উঠে আসে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ, যাকে জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে জাতিসংঘ।
রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নালিশ গেছে। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর জোট ওআইসির সমর্থনে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া নভেম্বরে জাতিসংঘের আদালত আইসিজিতে মামলা করেছে।
গাম্বিয়া তাদের অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ এবং তাদের আবাসন ধ্বংসের কথা বলেছে।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে। তারা বলছে, গণহত্যা বা জাতিগত নিধনযজ্ঞ নয়, তাদের অভিযান নিরাপত্তা বাহিনীর টহল চৌকিতে হামলা চালানো বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে।
চলতি মাসের ১০ তারিখ থেকে আইসিজির ওই মামলার প্রথম শুনানি শুরু হতে যাচ্ছে; ‘মিয়ানমারের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায়’ ওই মামলায় লড়তে কয়েকদিনের মধ্যেই সু চি নেদারল্যান্ডসের হেগের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন বলে তার কার্যালয় নিশ্চিত করেছে।
আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের হয়ে সু চির লড়ার ঘোষণা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার বন্ধু বলে পরিচিত প্রভাবশালী অনেককে বিস্মিত করেছে। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের এ পদক্ষেপ পশ্চিমে তার ভাবমূর্তিতে আরও কালিমা লেপে দেবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই ব্যক্তি রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন।
দেশে অবশ্য সু চি নায়কের মর্যাদাই পাচ্ছেন। তার পক্ষে রাজপথে, অনলাইনে ব্যাপক প্রচারণা চলছে। আগামী বছরের নির্বাচনের আগে তার এ অবস্থান দলের জনসমর্থনকে আরও পোক্ত করছে বলেও ধারণা পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর।

শেয়ার করুন