চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

ইউরোপে লাখ লাখ শরণার্থী ঠেলে দেওয়ার হুমকি

সিরিয়া অভিযানে ১০৯ জন সন্ত্রাসী নিহত : এরদোয়ান

পূর্বকোণ ডেস্ক

১১ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:১৪ পূর্বাহ্ণ

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেছেন, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে শুরু হওয়া সামরিক অভিযানে ১০৯ জন সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার অভিযান শুরু হওয়ার পর বৃহস্পতিবার তিনি এ তথ্য জানান। রুশ সংবাদমাধ্যম স্পুটনিক নিউজ এখবর জানিয়েছে। বুধবার সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্ক ‘পিস স্প্রিং অপারেশন’ শুরু করে। অভিযানের অংশ হিসেবে তুরস্ক সমর্থিত সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি ইউফ্রেতাসের পূর্ব দিকে প্রবেশ করে। তুর্কি অভিযানে সহযোগিতার জন্য তারা অগ্রসর হচ্ছে। কুর্দি নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে অভিযানের দ্বিতীয় দিনে বিমান হামলা ও স্থল অভিযান জোরালো করেছে তুরস্ক।

দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা বেশ কিছু লক্ষ্যবস্তু দখল করেছে। এছাড়া সীমান্তের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে তুমুল লড়াই চলছে।

আঙ্কারায় দেওয়া এক ভাষণে তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা বুধবার, ৯ অক্টোবর অভিযান শুরু করেছি। প্রথমে কামান দাগা হয়, পরে আকাশপথে এবং সন্ধ্যায় পদাতিক বাহিনী অভিযান শুরু করে। এখন পর্যন্ত ১০৯ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে, অনেকে আহত হয়েছে অথবা আত্মসমর্পণ করেছে। এরদোয়ান আরও বলেন, তুরস্কের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, তুর্কিরা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বোমা হামলা চালাচ্ছে। এই অভিযোগ যারা করছে তারাই বেসামরিকদের হামলা করে, আপনাদের কোনও লজ্জা নাই। আমরা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

নিচ্ছি। মানুষকে প্রতিটি পদক্ষেপের বিষয়ে অবহিত করছি। তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, আইএস জঙ্গিদের নিয়ে আমরা কী করব। এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে করে করে আইএস যেনও আর সক্রিয় না থাকতে পারে। এরপর যা আমাদের করা দরকার তা করব। যাদের কারাগারে পাঠানো দরকার তাদের কারাগারে পাঠানো হবে, বিদেশি জঙ্গিদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাবো। ফলে আইএস আর সক্রিয় থাকতে পারবে না। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি। এর আগে বৃহস্পতিবার তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দেন, সিরিয়ায় সামরিক অভিযান পরিকল্পনা মতোই এগুচ্ছে। তারা নির্দিষ্ট লক্ষ্যস্থল দখল করা গেছে।

ইউরোপে লাখ লাখ শরণার্থী ঠেলে দেওয়ার হুমকি এরদোয়ানের

সিরিয়ার সীমান্ত এলাকায় তুরস্কের সামরিক অভিযানকে ইউরোপীয় দেশগুলো আগ্রাসন আখ্যা দিলে তাদের দিকে লাখ লাখ শরণার্থী ঠেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোয়ান। নিজ দল একে পার্টির আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এই হুমকি দিয়েছেন তিনি।

গত সোমবার (৭ অক্টোবর) সিরিয়ায় আইএসবিরোধী অভিযান চালানোর ঘোষণা দেয় তুরস্ক। সে সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট রিস্যেপ তাইয়্যেব এরদোয়ানের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন বলেন, সন্ত্রাসী আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতেই তুর্কি সীমান্তবর্তী সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সামরিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আঙ্কারা। মধ্যপ্রাচ্যে আইএসবিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র কুর্দিদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় তুরস্কের অভিযান শুরুর আগে সেখান থেকে নিজেদের সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সিদ্ধান্তের জেরে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে অভিযানের বিষয়ে তুরস্ককে সতর্ক করে দেন তিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পাশাপাশি তুরস্কের এই অভিযানের সমালোচনা করেছে ইউরোপের কয়েকটি দেশও।

কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের বিরুদ্ধে তুরস্কের এই সামরিক অভিযানের সমালোচনা করে বুধবার বিবৃতি দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, তথাকথিত সেফ জোন প্রতিষ্ঠার কথা বলে তুরস্ক ওই এলাকার দখল নিতে চাইছে। বিবৃতিতে বলা হয়, সিরীয় শরণার্থীদের জোর করে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ইউএনএইচসিআর-এর ঘোষিত শরণার্থী বিষয়ক আন্তর্জাতিক মানদ-কে অনুসরণ করবে না। বিবৃতিতে বলা হয়, জনসংখ্যাতাত্ত্বিক পরিবর্তনের যেকোনও চেষ্টা গ্রহণযোগ্য হবে না।

ইইউ-এর বিবৃতির পর সিরিয়া যুদ্ধের কারণে তুরস্কে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৩৬ লাখ শরণার্থীর প্রসঙ্গ সামনে আনেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। বৃহস্পতিবার দলীয় আইনপ্রণেতাদের সামনে ইউরোপের উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, আমরা দরোজা খুলে দেবো আর তোমাদের দিকে ৩৬ লাখ শরণার্থী পাঠিয়ে দেবো।

তুরস্ককে হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর, কুর্দিদের সহযোগিতার অঙ্গীকার
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক অভিযানে কুর্দিরা জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার হতে পারে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি তুর্কি দখল অভিযানের নিন্দা জানিয়ে সাহসী কুর্দিদের সহযোগিতার অঙ্গীকার করেছেন। ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম হারেৎজ এখবর জানিয়েছে।

বুধবার সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্ক ‘পিস স্প্রিং অপারেশন’ শুরু করে। অভিযানের অংশ হিসেবে তুরস্ক সমর্থিত সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি ইউফ্রেতাসের পূর্ব দিকে প্রবেশ করে। তুর্কি অভিযানে সহযোগিতার জন্য তারা অগ্রসর হচ্ছে। কুর্দি নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে অভিযানের দ্বিতীয় দিনে বিমান হামলা ও স্থল অভিযান জোরালো করেছে তুরস্ক। দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা বেশ কিছু লক্ষ্যবস্তু দখল করেছে। এছাড়া সীমান্তের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে তুমুল লড়াই চলছে।

টুইটারে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু লিখেছেন, সিরিয়া কুর্দি এলাকায় অভিযানের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে ইসরায়েল। কুর্দিরা তুরস্ক ও তাদের মিত্রদের দ্বারা জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার হতে পারে। সাহসী কুর্দি জনগণকে মানবিক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত ইসরায়েল।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বৃহস্পতিবার হুমকি দিয়ে বলেছেন, সিরিয়া তুর্কি অভিযানকে দখল বললে ৩৬ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে ইউরোপে ঠেলে দেবেন। এর আগে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিরিয়ায় সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য তুরস্কের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট