চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সিরিয়ায় সামরিক অভিযান শুরু তুরস্কের

পূর্বকোণ ডেস্ক

১০ অক্টোবর, ২০১৯ | ২:৩৬ পূর্বাহ্ণ

সিরিয়ায় পশ্চিমা সমর্থিত কুর্দি মিলিশিয়াদের শক্তি খর্ব করতে এবং তাদেরকে সীমান্ত এলাকা থেকে তাড়াতে গতকাল সামরিক অভিযান শুরু করেছে তুরস্ক। প্রথম ঘন্টাতেই উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় কুর্দি মিলিশিয়া গোষ্ঠী এসডিএফের অবস্থানে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। প্রাণহানির এখনো পাওয়া যায়নি।

রাতভর সীমান্তে বিপুল সংখ্যায় সৈন্য সমাবেশ এবং সাঁজোয়া যান জড়ো করে তুরস্ক। তুরস্কের সৈন্যদের সাথে জড়ো হয় তাদের সমর্থিত সিরিয়ান আরবদের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জোট সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মির কয়েক হাজার মিলিশিয়া। বুধবার দুপুরের পরপরই প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ‘অপারেশন পিস স্প্রিং’ নামে সেনা অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন।
টুইটারে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, আমাদের দক্ষিণ সীমান্তে সন্ত্রাসের একটি করিডোর যাতে তৈরি না হয় তা নিশ্চিত করা এবং সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠাই তুরস্কের এই অভিযানের উদ্দেশ্য। উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি মিলিশিয়া গোষ্ঠী এসডিএফকে তুরস্ক একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসাবে বিবেচনা করে। তুরস্কের ভয়, এসডিএফ তুরস্কের অভ্যন্তরে তৎপর কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উস্কানি দিচ্ছে।

বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন তুরস্ক ৪৮০ কিলোমিটার সীমান্ত জুড়ে সিরিয়ার অভ্যন্তরে ৩২ কিলোমিটার পর্যন্ত একটি ‘সেফ জোন’ বা নিরাপদ এলাকা তৈরির পরিকল্পনা করেছে। কুর্দি মিলিশিয়াদের তাড়িয়ে এই ‘সেফ জোনে’ তুরস্কে আশ্রয় নেওয়া ৩৫ লাখের মত সিরিয় শরণার্থীকে পুনর্বাসন করতে চান প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।
সিরিয়ায় সেনা অভিযানে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ঘোষণার পরপরই কুর্র্দি মিলিশিয়া গোষ্ঠী এসডিএফ উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় নো-ফ্লাই জোন তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছে।
তুর্কি সৈন্যদের প্রতিরোধে সীমান্তের দিকে এগুতে সাধারন কুর্দিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এসডিএফ। তুর্কি সৈন্যরা সিরিয়ায় যে সব এলাকায় ঢুকতে পারে, সেখান থেকে দুদিন আগে মার্কিন সৈন্যরা সরে যাওয়ায় প্রচ- ক্ষুব্ধ হয়েছে এসডিএফ। তারা বলেছে আইএসকে পরাজিত করতে এতদিন কুর্দিদের ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদের ‘পিঠে ছুরি মেরেছে’।
এসডিএফ সাবধান করেছে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তুর্কি সামরিক অভিযানে ‘চরম মানবিক বিপর্যয়’ ঘটবে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, এই অভিযানে হাজার হাজার নিরপরাধ বেসামরিক লোকজনের রক্ত বইবে।
এসডিএফ বলছে, তারা তিনদিন ধরে তুর্কি অভিযান প্রতিরোধে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় মানুষজনকে একত্রিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

আমেরিকার মিশ্র সিগনাল : তুরস্কের পরিকল্পিত তথাকথিত ‘সেফ জোনের’ বেশ কিছু অবস্থান থেকে রবিবার হঠাৎ করে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশের ভেতর এবং নেটো মিত্রদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
সমালোচকদের বক্তব্য -এতদিনের মিত্র এসডিএফকে এভাবে বিপদের মুখে ফেলায় মিত্র হিসাবে আমেরিকার বিশ্বাসযোগ্যতা দারুণভাবে ক্ষুণœ হবে।

সমালোচনার মুখে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একের পর এক টুইটারে মিশ্র সিগনাল দিচ্ছেন। তিনি বলেছেন, এসডিএফ আমেরিকার ‘বিশেষ’ বন্ধু, তাদের পিঠে ছুরি মারার প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, সিরিয়ায় ১,০০০ মার্কিন সৈন্যের মধ্যে মাত্র ৫০ জনকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

আরেক টুইটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তুরস্ক আমেরিকার বাণিজ্যিক এবং নেটো জোটের মিত্র।
তার কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনি টুইট করেন, তুরস্ক যদি তাদের অভিযানে বেশি বাড়াবাড়ি করে, তাহলে তুরস্কের অর্থনীতি ধ্বংস করে দেওয়া হবে।

আইএস বন্দীদের কি হবে? : তুরস্কের এই অভিযানের পর উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় কয়েকটি বন্দী শিবিরে আটক আইএস যোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কি হবে – এটাই এখন বড় চিন্তার কারণে হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসডিএফ নিয়ন্ত্রিত সাতটি কারাগারে ১২,০০০ সন্দেহভাজন আইএস যোদ্ধা আটক রয়েছে। এসব বন্দীদের মদ্যে চার হাজারের মত বিদেশি নাগরিক। এসব বন্দী শিবিরের অনেকগুলোই তুরস্কের সীমান্তের খুব কাছে। এছাড়া, দুটো বন্দী শিবির – রোজ এবং আইন ইসা – যেখানে সন্দেহভাজন আইএস সদস্যদের স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যরা রয়েছে সেগুলো তুরস্কের ‘সেফ জোনের’ মধ্যে অবস্থিত।

এসডিএফকে এসব জায়গা ছেড়ে পিছু হটতে হলে – এসব বন্দী শিবিরের কি হবে – তা নিয়ে পশ্চিমাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে বলে দিয়েছেন, সামরিক অভিযান চালালে তুরস্ককে এসব বন্দী শিবিরের দায় নিতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট