পরিবারে তিনিই প্রথম স্নাতক হয়েছেন, তা-ও আবার প্রথম হয়ে। গর্বিত মুখে বসে ছিলেন তার বাবা-মাও। কিন্তু নাম ঘোষণার পরে তিনি সেরা ছাত্রীর পুরস্কার নিতে মঞ্চে উঠতে গেলেই জানানো হল, এই পুরস্কার পাবেন না ভারতের রাঁচির মারওয়াড়ি কলেজের নিশাত ফাতিমা। অভিযোগ, তিনি ‘ড্রেস কোড’ মেনে পোশাক পরেননি।

ধর্মীয় ও পারিবারিক রীতি অনুযায়ী, পোশাকের উপরে বোরকা পরে ছিলেন নিশাত। যেমন সব সময়ে পরেন, তেমনই সমাবর্তনের মঞ্চেও পরে এসেছিলেন। কিন্তু ভাবতেও পারেননি, এর জেরে সেরা রেজাল্ট করেও ডিগ্রি পাবেন না সমাবর্তনে! কর্তৃপক্ষের দাবি, কলেজের সমাবর্তনে আসতে হলে নির্দিষ্ট ড্রেস কোড মেনেই আসতে হয়। ঐ ছাত্রী সেই ড্রেস কোড না মেনে আসায়, তাকে ডিগ্রির প্রশংসাপত্র দেয়া হয়নি।

কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সমাবর্তনে প্রত্যেককে ‘ড্রেস কোড’ মেনে পোশাক পরে আসতে হবে, এ কথা আগেই জানানো হয়েছিল। সব কলেজে এটাই নিয়ম। মারওয়াড়ি কলেজেও নিয়ম হিসেবে ছেলেদের জন্য কুর্তা-পাঞ্জাবি এবং মেয়েদের জন্য সালোয়ার স্যুট বা শাড়ি পরা বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা করা হয়েছিল আগে থেকে। নিশাত সেই নিয়ম না মানায় তাকে মঞ্চে তুলে ডিগ্রি দেয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন কর্তৃপক্ষ। তাই নাম ঘোষণা হওয়ার পরেও নিশাত যখন মঞ্চে ওঠেন, তাকে নামিয়ে দেয়া হয়।

নিশাতের দাবি, তিনি সারা বছরই ইসলামের রীতি অনুযায়ী বোরকা পরে কলেজ আসেন। এ দিনও ড্রেস কোড মেনে সালোয়ার স্যুট পরলেও, তার উপরে বোরকা পরেছিলেন। নিশাতের বাবা মহম্মদ একরামুল বলছেন, আমাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী যে কোনও জনবহুল এলাকায় যেতে হলে মেয়েদের বোরকা পরতে হয়। এটা নিয়ম। এর সঙ্গে ড্রেস কোড না মানার কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু এ সব যুক্তিতেও কাজ হয়নি শেষমেশ। মঞ্চে উঠে স্বর্ণপদক ও প্রশংসাপত্র হাতে নেয়ার স্বপ্ন ভেঙে যায় নিশাতের।

উল্লেখ্য, কয়েক দিন আগেই ভারতের উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদের এসআরকে কলেজে মেয়েদের বোরকা পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিলেন, বোরকার আড়ালে দেশবিরোধী লোকজন ঢুকে পড়ছে কলেজে। সেই ঘটনার প্রতিবাদ জানায় মুসলিম বুদ্ধিজীবীমহল। এ ক্ষেত্রেও প্রতিবাদে সরব হয়েছে তারা। প্রশ্ন উঠছে, কোনও ছাত্রী কী পরবে তা কীভাবে ঠিক করতে পারে কলেজ? কেউ কেউ আবার প্রশ্ন তুলছেন, যতই পোশাকবিধি না মানুক, কলেজের সেরা ছাত্রীকে পুরস্কার না দেওয়াটা সমর্থনযোগ্য নয়।

সূত্র : দ্য ওয়াল।

পূর্বকোণ/তাসফিয়া