চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

গোপন মার্কিন নথি থেকে

৬৫ সালেই ইসলামাবাদ দখল করত ভারত!

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:৩৪ পূর্বাহ্ণ

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক : ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬৫ সালে যুদ্ধ সংগঠিত হয়। সে সময় ভারতেরই পাশে দাঁড়িয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। তখন কাশ্মীরে গণভোটের প্রশ্নও খারিজ করে দেয়া হয়েছিল। সেই যুদ্ধেই ভারতের সেনাবাহিনী ইসলামাবাদ দখল করে নিতো। সম্প্রতি এক গোপন মার্কিন নথি থেকে এ তথ্য মিলেছে। ওই গোপন মার্কিন নথি বলছে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ যখন তুঙ্গে তখন ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনকে একটি চিঠি লিখেন। তাতে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী জানান, নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে ভারতের কোনও আপত্তি নেই।

তবে কাশ্মীরে গণভোটের দাবি কোনও মতেই মানা সম্ভব নয়। ১৯৬৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর লেখা এই চিঠিতে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী একথাও জানিয়ে দেন যে, যা পরিস্থিতি তাতে ১৯৪৮ সালের এই সংক্রান্ত জাতিসংঘের প্রস্তাব আর খাটে না। লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর এই চিঠি পাঠানোর একটা কারণ ছিল। তার আগেই পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো যুক্তরাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের বলেছিলেন, পাকিস্তান দেশ হিসেবে যে কোনও লাঞ্ছনা সইতে রাজি আছে। কিন্তু কোনোভাবেই তারা কাশ্মীরের দাবি ছাড়বে না।

মার্কিন নথি থেকে জানা গেছে, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে ভারতের সেনাবাহিনী যেদিন পাক ভূখ-ে পা রেখেছিল সেদিনই পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট আয়ুব খান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভুট্টোর সঙ্গে দেখা করেছিলেন ইসলামাবাদের মার্কিন রাষ্ট্রদূত ওয়াল্টার প্যাট্রিক ম্যাককোনাটি। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা তাঁর কাছে কাশ্মীরের গণভোটের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ চেয়ে বারংবার আকুতি জানাচ্ছিলেন। যদিও ম্যাককোনাটি এ ব্যাপারে এতটুকু নরম মনোভাব দেখাননি। কথা প্রসঙ্গে তিনি সরাসরি জানিয়ে দেন, এই যুদ্ধের জন্য পাকিস্তানই দায়ী। তারাই কাশ্মীরে সেনা ঢুকিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্রশস্ত্র ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। অথচ এসব অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে দিয়েছিল কমিউনিস্ট চীনকে মোকাবিলা করার জন্য। একইদিনে জনসন প্রশাসন ম্যাককোনাটিকে একটি টেলিগ্রাম পাঠায়। তাতে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, পাকিস্তানকে যেন কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া না হয়। ইসলামাবাদ যেন নিজেকে আক্রান্ত হিসাবে দেখানোর চেষ্টা না করে। কারণ এই যুদ্ধের জন্য তারাই দায়ী।

ওই বার্তায় ম্যাককোনাটিকে জনসন প্রশাসন বলেছিল, ‘বিগত কয়েক সপ্তাহের ঘটনাবলী থেকে আমরা পাকিস্তান সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের আক্রমণকে বিচার করেছি। জাতিসংঘের মহাসচিবের রিপোর্ট থেকে পরিষ্কার, পাকিস্তানের দিক থেকে সশস্ত্র মানুষের ক্রমাগত অনুপ্রবেশ সাম্প্রতিক সংকট সৃষ্টি করেছে।’

ওই নথিতে এ কথাও বলা হয়, ‘আমরা জানি, ভারত ঘোষিত সীমান্ত বরাবর সেনা মোতায়েন করেছিল বটে, কিন্তু পাকিস্তান চাম্ব এলাকায় যে পরিস্থিতি তৈরি করেছিল ভারতের দিক থেকে তা নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছিল। ভারত বারবারই বলেছিল, প্রথমত তারা পাকিস্তানের দিক থেকে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া আক্রমণাত্মক গতিবিধি সহ্য করবে না।
দ্বিতীয়ত, পাকিস্তান যদি ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানগুলিতে আঘাত হানে, তাহলে ভারতও তার নিজের সুবিধামতো অবস্থানগুলিতে পাল্টা আক্রমণ হানতে বাধ্য হবে। সুতরাং পাকিস্তান সরকার যেন জম্মু-কাশ্মীরে তার হামলা চালানোর বিপদ সম্পর্কে হুঁশিয়ার থাকে।’

মার্কিন নথি বলছে, লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর কড়া চিঠি এবং মার্কিন প্রশাসনের কঠোর মনোভাবও পাকিস্তানকে সহজে দমাতে পারেনি। তারপরেও জনসন ও তাঁর সহযোগীদের আঙুল অনেকটাই বাঁকাতে হয়েছিল। আর তাতেই জব্দ হয়েছিলেন জেনারেল আয়ুব খান ও তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো। নইলে হয়তো সেই যুদ্ধেই ভারতের সেনাবাহিনী ইসলামাবাদ দখল করে নিত।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট