চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগের তাৎপর্যটা কী

২ এপ্রিল, ২০২৩ | ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ

[গত ৩০ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটা নতুন ইতিহাস তৈরি হয়েছে। এদিন প্রথমবারের মতো একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে ফৌজদারি অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। এখন প্রকাশ্যে চলবে একটি জটিল আইনি প্রক্রিয়া। ]

আমরা এমন একটা অনিরূপিত আইনি এবং রাজনৈতিক আবহে আছি যেখানে সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলি কখনও কখনও অনুসরণ করা কঠিন। তাই আসুন আমরা সাম্প্রতিক মামলাটি কী সম্পর্কে, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অন্যান্য কী আইনি মামলা বিচারাধীন রয়েছে এবং এর বিস্তৃত তাৎপর্য কী হতে পারে তা স্পষ্ট করার চেষ্টা করি।
নিউইয়র্কের মামলাটি ২০১৬ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মাসখানেক আগে ‘একটি কথিত সম্পর্কের বিষয়ে নীরব থাকার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে অর্থপ্রদানের বিষয়ে’। এই মামলার মনে রাখার মতো কিছু পয়েন্ট আছে-
১. মার্কিন আইনী ব্যবস্থায় স্পষ্টভাবে ‘রাষ্ট্রীয় আইন’ এবং ‘ফেডারেল আইন’র মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির করা এই মামলাটি নিউইয়র্ক স্টেট আইনের অধীনে করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলেও ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রয়োগ করা যাবে না’। এমনকি কংগ্রেসও একটি রাজ্যের আইনি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এগুলো মার্কিন সংবিধানের কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য এবং এর অর্থ হল এখন মামলাটি কোনোওরূপ ফেডারেল বাধা ছাড়াই এগিয়ে যাবে।
২. একটি অভিযোগপত্র হলো মূলত একটি চার্জশিট যা আনুষ্ঠানিকভাবে একজন বিবাদীর (এক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প) বিরুদ্ধে আনা হয়ে থাকে। মার্কিন বিচার ব্যবস্থার একটি বৈশিষ্ট্য হল একটি ‘গ্র্যান্ড জুরি’ প্রথা- যা সাধারণ নাগরিকদের মধ্য থেকে বাছাইকৃতদের নিয়ে গঠিত হয়। এরা অভিযোগ আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। এই ক্ষেত্রে, এর মানে হল যে, একদল নাগরিক প্রমাণের দিকে তাকিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, একটি অপরাধ সম্ভবত সংঘটিত হয়েছে এবং অভিযোগগুলি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়ের করা উচিত।
একটি বিচার এখন চলবে যেখানে আসামিকে অভিযোগের জবাব দিতে হবে। সাক্ষীদের ‘ক্রস চেক’ করা হবে এবং অবশেষে জুরি ‘দোষ’ বা ‘নির্দোষতার’ সিদ্ধান্ত দেবেন।
এই আইনি প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপটি হল- আগামী ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার, ডোনাল্ড ট্রাম্প ম্যানহাটন কোর্টহাউসে হাজির হবেন (তেমনই কথা রয়েছে)। সেখানে একজন বিচারক তাকে ওয়ারেন্ট ইস্যু করবেন, তার আঙ্গুলের ছাপ নেয়া হবে এবং একটি ছবি তোলা হবে (মগ শট)।
তাকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনানো হবে। একটা আবেদন করার সুযোগ দেয়া হবে যেখানে তিনি তার ‘দোষী’ বা ‘নির্দোষিতা’র কথা জানাবেন। পরে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তার ব্যাপারে কী করা হবে।
এবার একটু পিছিয়ে গিয়ে দেখি, প্রাক্তন এ রাষ্ট্রপতির ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বর্তমানে বিচারাধীন অন্যান্য মামলাগুলির অবস্থা কী :
১. জর্জিয়া রাজ্যের নির্বাচন টেম্পারিং মামলা। এখানে একটি গ্র্যান্ড জুরি (নিউ ইয়র্কের মামলার মতো) ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার সহযোগীদের দ্বারা ২০২০ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জর্জিয়া রাজ্যের ফলাফল গণনায় হস্তক্ষেপ করার ষড়যন্ত্র’ বিষয়ে প্রমাণাদি একাট্টা করছেন। এই ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এবং ফেডারেল- উভয় আইনই ভঙ্গ হয়েছে বরা হয়েছে। অভিযোগ দায়ের করা হবে কিনা এবং মামলাটি আদালতে আনা হবে কিনা সে বিষয়ে আসছে ক’সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
২. মার-এ-লাগো ‘ক্লাসিফায়েড ডকুমেন্টস’ মামলা। এখানে ফেডারেল বিচার বিভাগ (অ্যাটর্নি জেনারেল) দ্বারা একজন স্বাধীন বিশেষ কাউন্সেল (প্রসিকিউটর) নিয়োগ করা হয়েছে। এই মামলায় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প পদ ছাড়ার পরে তার মার এ লাগো বাড়িতে সিক্রেট এবং টপ সিক্রেট ডকুমেন্টগুলো রেখেছিলেন। অভিযোগ- তিনি ডকুমেন্টের সংখ্যা সম্পর্কে মিথ্যাচার করেছিলেন এবং ডকুমেন্টগুলো ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়াতে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। যদি এটি প্রমাণিত হয় যে এই কাজগুলি ইচ্ছাকৃত ছিল, তাহলে এটি ফেডারেল আইন ভঙ্গ করবে। তাই এই মামলার ফলে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক ফৌজদারি অভিযোগও আসতে পারে।
৩. জানুয়ারি সিক্স ইনভেস্টিগেশন। এই ক্ষেত্রে ফেডারেল বিচার বিভাগ ‘মার্কিন কংগ্রেসের অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফলের সার্টিফিকেশনকে বাধাদানের ষড়যন্ত্র এবং ৬ই জানুয়ারি ২০২১ ক্যপিটল হিলে হামলায়’ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ খুঁজছেন।
অনেক দাঙ্গাবাজকে ইতিমধ্যে ক্যপিটল হিলে হামলার জন্য বিচার করা হয়েছে এবং দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং এখন নির্বাচনের ফলাফল নির্দেশ বা উল্টে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে আরও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতা পরীক্ষা করা দেখা হচ্ছে। বিদ্রোহের পরিকল্পনা বা বাস্তবায়নের সাথে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পকে সরাসরি যুক্ত করার প্রমাণ থাকলে, আবারও আনুষ্ঠানিক ফৌজদারি অভিযোগের ফল আসতে পারে।
এখন বৃহত্তর রাজনৈতিক চিত্রটি দেখার জন্য আবারো একটু পিছিয়ে আসা যাক। এই মামলাগুলির প্রকৃত বিচারের সময়সীমা ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে। তার মানে আমরা সম্ভবত অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মুখোমুখি হব, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি যিনি একজন ফৌজদারি অভিযোগের বিচারে বিবাদী বা ইতিমধ্যে একটি অপরাধের জন্য দ-িত হয়েছেন এবং তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থী। মার্কিন আইন কাউকে অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত বা এমনকি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নিষেধ করে না। তাই ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে বাধা নেই।
তবে এটি সম্ভবত রিপাবলিকান পার্টির জন্য ব্যাপক রাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি করবে। যদিও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তার ‘ডাই হার্ড’ সমর্থকদের কাছ থেকে সম্ভবত ভালোই সমর্থন পাবেন। সুইং বা স্বাধীন ভোটারদের উপরও একধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে যারা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির প্রতি উষ্ণ সমর্থন দিয়ে গিয়েছেন।
লেখক : সিইও, ডব্লিউএন্ডএ কনসাল্টিং : প্রাক্তন প্রধান কৌশলী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা হারশে (Hershey),ফার্মার ব্রাদার্স’র পরিচালনা পরিষদের সদস্য। এছাড়াও ‘ফরচুন ফাইভ হানড্রেড’ কোম্পানির বেশ ক’টি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে উদ্যোক্তাদের পরামর্শ আর সিনিয়র এক্সিকিউটিভদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট