চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অভিযুক্ত ট্রাম্প, বিশ্বব্যাপী তোলপাড়

পূর্বকোণ ডেস্ক

১ এপ্রিল, ২০২৩ | ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ

পর্ন তারকার মুখ বন্ধ রাখতে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবার তিনিই প্রথম কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত হলেন। এতে সর্বোচ্চ চার বছরের সাজা হতে পারে তাঁর।

 

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ কিসের : স্টর্মি ড্যানিয়েলস বলছেন, ২০০৬ সালে ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তার। কিন্তু ট্রাম্প বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছেন। ২০১৬ সালে এসে ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী। ড্যানিয়েলস তখন তাদের সম্পর্কের গল্পটি মিডিয়ার কাছে বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন ড্যানিয়েলসের মুখ বন্ধ রাখতে তাকে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন। এ ধরনের লেনদেনের অর্থকে ‘হাস মানি’ বলা হয়।

 

এই কায়দার লেনদেন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ নয়। কিন্তু বিপত্তিটা হয়েছে, ট্রাম্পের একাউন্টে তা কীভাবে দেখানো হয়েছে, সেখানটায়। অভিযোগ উঠেছে, ট্রাম্প ব্যবসায়িক নথিপত্রে এই অর্থকে আইনি ফি হিসেবে দেখিয়ে দিয়েছেন। আর যেহেতু এই ঘটনা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগমুহূর্তের, নির্বাচনী প্রচারণার কাজে লাগা অর্থের লেনদেনের বিধি ভঙ্গের অভিযোগও ওঠতে পারে।

 

এখন এসব অভিযোগের বিচার হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পও আইনিভাবে তা লড়বেন। ট্রাম্প অবশ্য কোনো বেআইনি কিছু করেননি দাবি করে আসছেন, আর বলছেন, অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

 

অপরাধ প্রমাণ হলে কি জেলে যাবেন ট্রাম্প : সাদা চোখে মনে হচ্ছে তেমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে না। কিন্তু ট্রাম্পের কারাবরণের সম্ভাবনাও যে একেবারে নেই, তা নয়। অভিযোগের প্রায় ৩০ দফা রয়েছে বলে জানা গেছে। এরমধ্যে কোনটি প্রমাণিত হলে, ট্রাম্পকে সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে। কিন্তু বাঘা বাঘা আইনজীবীরা অবশ্য ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, শেষমেষ ট্রাম্পের কারাবরণ দেখার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। আর ট্রাম্পকে অন্য আসামিদের মতো হাতকড়া পরানো হবে কিনা তা নিশ্চিত জানা যায়নি।

 

ট্রাম্প কবে ও কীভাবে আত্মসমর্পণ করবেন : স্টরমিকে ঘুষ  দেওয়ার ঘটনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্বটি ছিল নিউইয়র্ক সিটির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্র্যাগের ওপর। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য তিনি গ্র্যান্ড জুরি গঠন করেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এ জুরি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সিদ্ধান্ত জানায়। তবে তাঁর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে, তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। আদালতে বিচারপতি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগগুলো না পড়ে শোনানো পর্যন্ত অভিযোগগুলো প্রাশ করা হবে না।

 

ট্রাম্পকে গ্রেপ্তারের পর কি তাঁর আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে : অন্য আসামিদের মতো ট্রাম্পকে হয়তো সংবাদকর্মীদের সামনে দিয়ে হেঁটে হেঁটে আদালতে প্রবেশ নাও করতে হতে পারে। বরং কৌঁসুলিদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আদালত হয়তো তাঁকে গোপনে প্রবেশের সুযোগ দিতে পারেন।

 

ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত অন্য আসামিদের মতো করেই ট্রাম্পের আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে এবং মুখের ছবি তোলা হবে। ট্রাম্প তাঁর ‘মিরান্ডা রাইটস’ পড়বেন। এর মধ্য দিয়ে তাঁকে মনে করিয়ে দেওয়া হবে যে সাংবিধানিকভাবে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার অধিকার তাঁর আছে। তিনি পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন।

 

ফৌজদারি অপরাধে ট্রাম্প যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তাঁর সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদ- হতে পারে। যদিও আইন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, ট্রাম্পের জরিমানা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাঁকে কারাবন্দী রাখার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন তাঁরা।

 

গ্রেপ্তারের পরও ট্রাম্প কি প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে পারবেন : আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির হয়ে আবারও প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে অভিযুক্ত হওয়া কিংবা ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেও ট্রাম্প চাইলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য তাঁর প্রচারণা চালিয়ে যেতে পারবেন। ইতিমধ্যে ট্রাম্পও ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা কিছুই হোক না কেন, তিনি তাঁর কাজ চালিয়ে যাবেন।

 

অপরাধে দোষী সাব্যস্ত কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ করে দেওয়া কিংবা তাঁকে প্রেসিডেন্ট হতে না দেওয়ার মতো কোনো আইন যুক্তরাষ্ট্রে নেই। এমনকি ওই ব্যক্তি জেলে থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। তবে ট্রাম্প গ্রেপ্তার হলে নিশ্চিতভাবেই তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার ওপর প্রভাব পড়বে। কারণ, তিনি ঠিকঠাক মতো প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। বিতর্কেও অংশ নিতে পারবেন না।

 

প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতায় সমস্যা হবে কি : যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে এমন কিছু নেই যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযুক্ত বিধায় নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যেতে পারবেন না। কিন্তু মামলার ঝক্কির কারণে দৈনন্দিন নির্বাচনী প্রচারণায় যে র‌্যালি, সভা-সমাবেশ থাকবে তাতে কিছুটা ছেদ তো পড়বেই। ট্রাম্প যদি কারাগারেও যান, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী তো থাকবেনই, এমনকি ভোট বেশি পেলে জিতেও যেতে পারেন।

 

আগে কি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্ত হয়নি : হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে মার্কিন কংগ্রেসে দুইবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত হয়। দুইবারই অভিসংশনের আহ্বান জানানো হয়, এবং উচ্চকক্ষ সিনেট দুইবারই তা ঠেকিয়ে দেয়। এখন তিনি প্রেসিডেন্ট অফিস ছেড়েছেন, এখন অভিসংশনের কিছু নেই। এখন যা হওয়ার সুযোগ রয়েছে, ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত হওয়া। আখেরে সেটিই হতে চলেছে। আগামী কয়েকমাস ডোনাল্ড ট্রাম্পের মামলার শুনানি নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যাবে সংবাদকর্মীদের।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট