চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

অনুপ্রবেশের দুই বছর পূর্তি আজ

মহাসমাবেশের ডাক রোহিঙ্গাদের

নিজস্ব সংবাদদাতা , টেকনাফ ও উখিয়া

২৫ আগস্ট, ২০১৯ | ২:৩২ পূর্বাহ্ণ

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণের দুই বছর পূর্তি আজ। দিনটিকে ব্যাপক আকারে ৩০টি ক্যাম্পে পালন করতে রোহিঙ্গারা নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গত বছরও রোহিঙ্গারা ক্যাম্পগুলোতে তাদের পলায়নের প্রথম বার্ষিকী উদ্যাপন করেছিল।

এদিকে আজ রোহিঙ্গারা মহা-সমাবেশের ডাক দিয়েছে। উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পের একটি মাঠে মঞ্চ প্রস্তত করা হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে চলছে জোর প্রস্ততি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ ১০ কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে সমাবেশের জন্য। আজ রবিবার ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের দুই বছর পূর্তিতে এসে বড় ধরনের শোডাউনের জন্য প্রস্ততি নিয়েছে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত এই শরণার্থীরা। কুতুপালংয়ের ৪ নম্বর ক্যাম্পের বর্ধিত অংশের মাঠে এই সমাবেশ আহ্বান করেছেন রোহিঙ্গারা।

২৫ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ সমাবেশে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার সমাবেশ ঘটানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন আয়োজকরা। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস নামক সংগঠনের চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহ বলেন, ‘বিশ্ববাসীর সামনে রোহিঙ্গাদের দাবি তুলে ধরতে চাই আমরা। জানিয়ে দিতে চাই মিয়ানমারে আমাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে এবং ভিটেমাটি ফিরিয়ে আমাদের প্রত্যাবাসন করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিজস্ব রীতির সাদা পোশাকে সমাবেশে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। সমাবেশ ঘিরে প্রায় এক হাজার আইন-শৃংখলা বাহিনী মোতায়েনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। সবার হাতে থাকবে পতাকা, ব্যানার-পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড। দোয়া মাহফিল হবে নিহত রোহিঙ্গাদের জন্য’।
এদিকে জাতিসংঘের কিছু সংস্থা ও দেশি-বিদেশি এনজিওগুলোর সহযোগিতায় এবারের বর্ষপূর্তি উদ্যাপনে ভিন্ন মাত্রা যোগ হবে বলে জানা গেছে। কারণ তারা সমন্বিতভাবে ২২ আগস্টের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা বানচাল করতে সক্ষম হয়েছিল। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে গত ১৫ দিন ধরে রোহিঙ্গা নেতারা ডোর টু ডোর কাজ করেছেন। রোহিঙ্গা নেতারা সব ক্যাম্পে ২৫ আগস্ট ব্যাপকভাবে পালন করতে সাধারণ রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ত করতে এ উদ্বুদ্ধকরণ সভা-সমাবেশ করেছে বলে জানা গেছে। রোহিঙ্গাদের দেশি-বিদেশি কিছু সংগঠনের নির্দেশনা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গা নেতা ও মাঝিরা দিবসটি পালনে অধিক তৎপরতা চালাচ্ছে। এবার সব ধরনের নারী, শিশু ও পুরুষদের সম্মিলিতভাবে প্রতিটি ক্যাম্প নিজ নিজ নেতা ও মাঝিদের নেতৃত্বে মিছিল, মিটিং ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে রোহিঙ্গারা জানায়। বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের নানা সংগঠনের নেতারা ক্যাম্পগুলোতে তাদের অনুসারী নেতারা ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি নিলেও কেউ কেউ কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাচ্ছে না বলে জানা যায়। গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের নির্ধারিত দিনে নানা উস্কানি ও প্ররোচনায় তা বানচাল হওয়ায় এবার রোহিঙ্গারা অধিক উৎসাহে ২৫ আগস্ট পালন করছে বলে জানা যায়। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটস বা এআরএসপিএইচ, ভয়েস অব রোহিঙ্গা যৌথভাবে তাদের গৃহীত কর্মসূচি পালনের অনুমতি পেয়েছে বলে জানা গেছে। এ দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে ক্যাম্পগুলোর বিভিন্ন ব্লক মাঝিকে প্রয়োজনীয় ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড সরবরাহ করা হয়েছে। উখিয়ার ২০টি ক্যাম্প থেকে একই সময়ে ২৫ আগস্ট বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কুতুপালং এক্সটেনশন-৪ ক্যাম্পের মাঠে সমবেত হওয়ার কথা। এ দুটি রোহিঙ্গা সংগঠন তাদের দেশি-বিদেশি নেতাদের সমন্বয়ে কর্মসূচির যাবতীয় সরঞ্জামাদির খরচ মেটাচ্ছে বলে জানা যায়। প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে সাদা কাপড় পরে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের নির্দেশ রয়েছে। বিশাল আয়োজন, ব্যানার, মালামাল, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ইত্যাদির জোগানদাতা ও খরচ বহনকারীরা বরাবরই আড়ালে থেকে যাচ্ছে বলে অনেকের অভিমত।

উখিয়া থানার ওসি মো. আবুল মনসুর বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ২৫ আগস্ট পালন উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পের ইনচার্জরা দেখভাল করবেন। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এখনো এ ব্যাপারে সরকারের কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

শেয়ার করুন