চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

পিতা হত্যাকারী তিন মেয়ের মুক্তি নিয়ে উত্তপ্ত রাশিয়া

অনলাইন ডেস্ক

২৫ আগস্ট, ২০১৯ | ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ

ঘুমন্ত অবস্থায় বাবাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যাকারী তিন বোনের মুক্তির দাবিতে উত্তাল রাশিয়া। এর মধ্যেই ৩ লাখ মানুষ একটি পিটিশন সই করে তাদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এই বোনদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ থাকলেও তাদের ভবিষ্যত কী হবে, তা নিয়ে রাশিয়ায় বিতর্ক শুরু হয়।

এদিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো দাবি করে যে, এই বোনরা কোনো অপরাধী নয়, বরং ভুক্তভোগী। কারণ নির্যাতনকারী বাবার কবল থেকে বাইরে গিয়ে সাহায্য চাওয়ার কোনো জায়গা বা সুরক্ষার কোনো উপায় তাদের ছিল না। তদন্তকারীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, মেয়েদের বাবা বছরের পর বছর ধরে তাদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে পীড়ন করে আসছিলেন।
২০১৮ সালের জুলাই মাসে রাশিয়ার মস্কোয় বাবাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে কিশোরী তিন বোন। হত্যাকাণ্ডের সময় কিশোরী বোনদের মা তাদের সঙ্গে বসবাস করতেন না এবং মেয়েদের সঙ্গে মায়ের যোগাযোগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন বাবা।

৫৭ বছরের মিখাইল খাচাতুরিয়ান তার তিন মেয়ে ক্রিস্টিনা, অ্যাঞ্জেলিনা এবং মারিয়াকে একে একে ডেকে পাঠান। তিনজনই সে সময় ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক। ফ্ল্যাট পরিষ্কার-পরিছন্ন করে না রাখার জন্য তিনি তাদের বকাঝকা করেন এবং মুখে পেপার গ্যাস স্প্রে করেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি ঘুমিয়ে পড়লে মেয়েরা ছুরি, হাতুড়ি আর পেপার স্প্রে নিয়ে তার ওপর হামলা করে। তারা মাথায়, গলায় এবং বুকে মারাত্মক আঘাত করে। পরবর্তীতে তার শরীরে ৩০টির বেশি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। এরপর মেয়েরা পুলিশে খবর দেয় এবং ঘটনাস্থলেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তদন্ত করতে গিয়ে ওই পরিবারের মধ্যে চরম নির্যাতন ও সহিংসতার ইতিহাস বেরিয়ে আসে। খাচাতুরিয়ান গত তিন বছর ধরে তার মেয়েদের নিয়মিত মারধর করতেন, নির্যাতন করতেন, দাসী করে রেখেছিলেন এবং যৌন নিপীড়নও করতেন। তিন বোনই তাদের বাবার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেছে। এই মামলাটি দ্রুতই রাশিয়ায় আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে।

খাচাতুরিয়ান বোনদের মামলাটি খুবই আস্তে আস্তে এগোচ্ছে। তারা আটক অবস্থায় নেই, তবে তাদের চলাফেরার ওপর কিছু বিধিনিষেধ আছে। তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন না, এমনকি নিজেদের মধ্যেও না। কৌঁসুলিরা দাবি করছেন যে, খাচাতুরিয়ানকে হত্যার বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, যেহেতু তিনি ঘুমিয়েছিলেন আর বোনরা সুসংগঠিতভাবে হামলা করেছে, আগেই ছুরি সংগ্রহ করে রেখেছে।

তবে বোনদের আইনজীবীরা বলছেন, নিজেদের রক্ষা করতেই তারা এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। রাশিয়ার ফৌজদারি আইনে ‘আত্মরক্ষার’ বিষয়টি শুধু তাৎক্ষণিক হামলা থেকে নিজেকে বাঁচাতেই নয়, বরং নিয়মিত অপরাধ থেকে বাঁচার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেমন, কেউ জিম্মি হয়ে থাকলে, সে অবস্থায় নির্যাতনের শিকার হলে নিজের আত্মরক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিতে পারেন।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে প্রথম আইনে কিছু পরিবর্তন আনা হয়, যার ফলে পরিবারের কোনো সদস্য অপর সদস্যকে যদি এমনভাবে মারধর করে যাতে তার আঘাত হাসপাতালে ভর্তি করার মতো গুরুতর না হয় তাহলে তাকে শুধু জরিমানা করা যাবে অথবা দুই সপ্তাহ পর্যন্ত আটক রাখা যাবে।

 

 

পূর্বকোণ/ এস

শেয়ার করুন