চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

কাশ্মীরে চলছে দমনপীড়ন : মোদি শোনালেন প্রকৃতি প্রেমের কথা

অনলাইন ডেস্ক

১৩ আগস্ট, ২০১৯ | ৭:৩৭ অপরাহ্ণ

ঈদের মধ্যেও কাশ্মীরে বিক্ষোভ থামাতে দমনপীড়নের খবর যখন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব পাচ্ছে, ঠিক সেসময়ই টেলিভিশন চ্যানেল ডিসকভারিতে দেখানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জঙ্গল অভিযানের গল্প। আনন্দবাজার লিখেছে, বেয়ার গ্রিলসের ‘ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড’ এর এ বিশেষ পর্বটির শুটিং হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারিতে, যখন পুলওয়ামায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর গাড়িবহরে জঙ্গি হামলা হয়।আর সোমবার কাশ্মীর নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই এ পর্বটি টেলিভিশনে দেখানো হল।

‘ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড’ এ জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বন ও বন্যপ্রাণীদের চরিত্র, বাস্তুসংস্থানের গল্প বলেন বেয়ার গ্রিলস। এবারের পর্বে তার সঙ্গে উত্তরখণ্ডের জিম করবেট জাতীয় উদ্যানে হেঁটে হেঁটে মোদী বলেন নিজের জীবনের নানা গল্প আর দর্শনের কথা, প্রকৃতি সংরক্ষণ ও পর্যটনে জোর দেয়ার কথা। আনন্দবাজার ‘ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড’ এর এ পর্বের নাম দিয়েছে মোদীর ‘বন কি বাত’। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের আগে থেকেই সব ধরনের টেলিভশন সম্প্রচার বন্ধ রাখায় ওই উপত্যকার বাসিন্দাদের অনুষ্ঠানটি দেখার সুযোগ হয়নি।

বিশেষ এ পর্বের শুরুতেই মোদীকে হেলিকপ্টারে করে জিম করবেট উদ্যানে নামতে দেখা যায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ‘অ্যাডভেঞ্চারের’ শুরুতেই ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য গ্রিলসকে দেখা যায় হাতির মল শুঁকে নিতে। এরপর হাঁটতে হাঁটতে, গল্প করতে করতে দু’জন এগিয়ে যান জঙ্গলের পথ ধরে; নদী পার হন বাঁশ, কাঠ আর প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি ভেলায় চেপে। এর মধ্যেই মোদী জানান তার শৈশবের কথা, হিমালয়ে কাটানো অনেকগুলো বছরের কথা। বলেন, মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি হলেই তার বাবা আত্মীয়-স্বজনদের চিঠি লিখতেন। “প্রকৃতির সঙ্গে এমনই সম্পর্ক আমাদের। গাছ কাটতে দেওয়া হত না। কারণ গাছের প্রাণ আছে।”

গ্রিলস জিম করবেট উদ্যানের বাঘের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেও অকুতোভয় বিজেপিপ্রধান। ভেলায় নদী পার হওয়ার সময়ও তার একই জবাব- ‘ভয় পাই না’। প্রকৃতি সংরক্ষণের প্রসঙ্গ উঠতেই দ্বিতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মোদী বলেন, “এটা প্রত্যেক মানুষের দায়িত্ব। ভারতে তো প্রতিটি গাছকে ভগবান মানা হয়। প্রকৃতিকে ভালবেসে চলতে হবে।”

পাহাড়, প্রকৃতি, নদী, হ্রদ উপভোগের পাশাপাশি উদ্ভিদ-বৃক্ষ নিয়ে যাদের আগ্রহ তাদের জন্যও উত্তরাখন্ডের এ উদ্যান ‘শানদার’ জায়গা, বলেন মোদী। গ্রিলসের সঙ্গে কথোপকথনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শুনিয়েছেন ছোটবেলায় বাড়ির কাছের হ্রদ থেকে কুমিরছানা ধরে আনার গল্প। বলেছেন, ‘‘জীবনের সব কিছুর মধ্যেই ভাল কিছু আছে বলে মনে করি। তাই যা-ই ঘটুক, নার্ভাসনেস কখনও প্রকাশ পায় না।’’এর মধ্যেই ‘বাঘ এলে কাজ লাগবে’ বলে গ্রিলস হাতে বল্লম ধরিয়ে দিলে মোদী বলেন, “যে সংস্কৃতিতে বড় হয়েছি, কাউকে মারতে পারব না।”

গ্রিলস তৎক্ষণাৎ বল্লমটি ফেরত চাইলে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর চটপট জবাব, ‘‘আমি আপনার হয়ে এটা নিজের হাতেই রাখছি।’’ আনন্দবাজার লিখেছে, গল্পগুজব ও নিমপাতা নিয়ে চর্চার পরে গ্রিলস প্রধানমন্ত্রীকে তুলে দেন ‘সিক্রেট সার্ভিস’-এর লোকজনের হাতে। বোঝা যায়, রোমাঞ্চকর পরিবেশ তৈরিতে গ্রিলস একটু পরপর বাঘের কথা তুললেও গোটা সফরে তাদের সঙ্গে কলাকুশলীরা ছাড়াও সিক্রেট সার্ভিসের প্রশিক্ষিত লোকজনই ছিলেন; তবে অবশ্যই ক্যামেরার ফ্রেমের বাইরে।

অনুষ্ঠানটির প্রচার শেষ হওয়ার পরপরই ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ টুইট করে প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপক প্রশংসা করেন। “সমৃদ্ধ বন্যপ্রাণের সঙ্গে সহাবস্থান, তাদের সুরক্ষা এবং প্রকৃতির সংরক্ষণে ভারতীয় ঐতিহ্যের কথা বিশ্বের সামনে তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী। গর্বের মুহুর্ত,” বলেন তিনি। তবে মোদীর এ কাণ্ডে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা মোটেও খুশি নন। “প্রধানমন্ত্রীর এই অনুষ্ঠান নিছকই পর্যটনের প্রচার। এর সঙ্গে বন, বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না,’’ বলেছেন বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে পদ্মশ্রী পুরস্কার জয়ী প্রশান্তকুমার সেন।

 

পূর্বকোণ/ এস

শেয়ার করুন