ন্যাটো থেকে ইউক্রেনকে বাইরে রাখার রাশিয়ান দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পক্ষান্তরে রাশিয়াকে গুরুত্ব দিয়ে কূটনৈতিক পন্থা বেছে নেয়ার আহবান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার মধ্যেই এই সিদ্ধান্তের কথা জানালো ওয়াশিংটন।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ইউক্রেন সঙ্কট সমাধানের জন্য রাশিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেছেন ব্লিনকেন। এ সময় তিনি রাশিয়াকে কোনো ছাড় দেননি। পক্ষান্তরে কূটনীতির ওপর জোর দিয়েছেন। রাশিয়ার একজন মন্ত্রী বলেছেন, তারা ব্লিনকেনের এসব প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখবেন। উল্লেখ্য, ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ে বেশ কিছু দাবি তুলেছে রাশিয়া। তার মধ্যে অন্যতম ন্যাটো সামরিক জোট থেকে ইউক্রেনকে বাইরে রাখতে হবে।
তবে রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে পূর্ব ইউরোপে নিরাপত্তার গ্যারান্টি চায়। ইতোপূর্বে রাশিয়া পরিষ্কার করেই বলেছে যে, ইউক্রেনকে কখনোই সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দিতে না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মস্কো লিখিতভাবে চায়। এমনকি সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবেক এই প্রদেশে ন্যাটোর সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করা হবে না; এমন প্রতিশ্রুতিও চায় রাশিয়া।
গত বছরের শেষের দিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ফোনালাপের আগে-পরে বিভিন্ন সময় মস্কো এই দাবি সামনে আনে। অবশ্য বাইডেন প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, রাশিয়ার এই দাবিগুলো কার্যকর হতে পারে না।
অবশেষে রাশিয়ার এই দাবির বিষয়ে বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে জবাব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। একইসঙ্গে ইউক্রেন সংকট নিরসনে রাশিয়ার জন্য কূটনৈতিক পথও খোলা রাখার কথা জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, ‘আমরা ইউক্রেনে বলপ্রয়োগের ধরণ সম্পর্কে পারস্পরিক স্বচ্ছতার ব্যবস্থার সম্ভাবনার কথা বলেছি, সেইসাথে ইউরোপে সামরিক মহড়া এবং কৌশলের বিষয়ে আস্থা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথাও বলেছি। আমরা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করতে এবং সম্ভাব্য রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি দ্রুত ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া প্রস্তুত করতে কাজ করছি।’
রাশিয়ায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জন সালিভান বুধবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্যক্তিগতভাবে নথিটি হস্তান্তর করেন। ওই নথিতে রাশিয়ার কাছে ইউরোপীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত নিজস্ব প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ন্যাটো। কর্মকর্তারা বলেছেন, পৃথকভাবে ওই নথির দৈর্ঘ্য কয়েক পৃষ্ঠা হবে।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সুনির্দিষ্ট ভাবে বিস্তারিত তথ্য সামনে আনতে অস্বীকার করেছেন। তবে তারা আশা প্রকাশ করেছেন, ওয়াশিংটন এবং মস্কো এখনও ঐক্যমত খুঁজে পেতে পারে এবং এমনকি ইউরোপে ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কিত অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলোতে অগ্রগতি আসতে পারে।
মস্কোর নিরাপত্তা বিষয়ক দাবির মধ্যে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণমুখী নীতির অবসান অন্যতম। বিশেষ করে ইউক্রেন ও জর্জিয়াসহ পূর্ব ইউরোপ থেকে ন্যাটো সেনাদের সরিয়ে নেওয়া। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সেই দাবিগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে রাশিয়াকে ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার করার দাবি করেছে।
একইসঙ্গে এর পরিবর্তে সামরিক মহড়া ও ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনসহ বিভিন্ন বিষয়ে মস্কোর সাথে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে।
অন্যদিকে ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ ইউক্রেন, জর্জিয়া ও মলদোভা থেকে রুশ বাহিনী প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে সংবাদদাতাদের বলেন, এই দেশগুলোর সম্মতি ছাড়াই মস্কো সেখানে তাদের বাহিনী মোতায়েন করেছে।
পূর্বকোণ/এসি