চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রাখাইনের মতো আরেক ‘দমনাভিযানের প্রস্তুতি’ জান্তার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৩ অক্টোবর, ২০২১ | ৮:৪১ অপরাহ্ণ

চার বছর আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর যে দমন অভিযান চালিয়েছিল, দেশটিতে সে রকম আরেকটি ঘটনার আশঙ্কা জানিয়েছে জাতিসংঘ। দেশটির জান্তা সরকার বিদ্রোহীদের দমনে এরই মধ্যে উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন রাজ্য ও সেগাইন এলাকায় ভারী অস্ত্রসহ সেনা মোতায়েন করেছে বলে খবর বেরিয়েছে। এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের সংবাদ সংস্থা এএফপি।

এই পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার দেশটিতে আবারও বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মিয়ানমারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার টম অ্যান্ড্রুজ। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। মিয়ানমারে আরও ব্যাপক নৃশংস অপরাধ ঘটতে পারে। তবে আমি আশা করব, আমার এ কথা যেন ভুল হয়।’

মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয় অং সান সু চিসহ তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শীর্ষ নেতাদের। এর পর থেকে দেশটিতে তুমুল বিক্ষোভ চলছে।

স্থানীয় পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান দ্য অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) সম্প্রতি জানিয়েছে, সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া দেশটিতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৮ হাজারের বেশি মানুষ।

চলতি মাসেই মিয়ানমারের সেগাইন, মাগে অঞ্চল এবং কায়াহ প্রদেশে সেনাসদস্যদের সঙ্গে কয়েকটি বিদ্রোহী গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। তাতে অন্তত ৮৮ জন জান্তা সেনা নিহত হন। এই ঘটনার পরে জান্তা সরকার বিদ্রোহী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে হাজার হাজার সেনা ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেছে বলে জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার টম অ্যান্ড্রুজ জানিয়েছেন।

অ্যান্ড্রুজ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মিয়ানমারের ওপর বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, তাঁর কাছে তথ্য এসেছে যে মিয়ানমারের অশান্ত উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে হাজারো সৈন্য এবং ভারী অস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে।

অ্যান্ড্রুজ আরও বলেন, অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জান্তা সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধে জড়িত ছিল।

জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার বলেন, জান্তার এই কৌশল ২০১৬ ও ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার আগে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম স্মরণ করিয়ে দেয়।

২০১৭ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর নির্মূল অভিযানের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘ বলছে, ওই সময় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে বলে তাদের ধারণা।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা যে অর্থ, অস্ত্র এবং বৈধতা চায়, তা অস্বীকার করার জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান অ্যান্ড্রুজ। চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার যে নতি স্বীকার করছে, তা গত সপ্তাহে বিক্ষোভকারীদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

গত সোমবার মিয়ানমারের জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং পাঁচ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে মুক্তির ঘোষণা দেন।

ক্ষমতায় আসার প্রায় ৯ মাস পর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। গত সপ্তাহে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের জরুরি বৈঠকে আসন্ন আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলনে মিয়ানমারের সেনাশাসক সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে বাদ দেওয়ার ঘোষণা এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র আসিয়ানের বিরল এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।
অ্যান্ড্রুজ বলেন, আসিয়ানের ঘোষণা জায়গামতো আঘাত করেছে।

অ্যান্ড্রুজ আরও বলেন, জান্তানিয়ন্ত্রিত বাহিনী আড়াই লাখের বেশি মানুষকে ঘরবাড়িছাড়া করেছে। অনেকের ওপর অত্যাচার করেছে। এর ফলে কয়েক ডজন মানুষ মারা গেছে। শিশুদের নির্যাতনের তথ্যও তিনি পেয়েছেন বলে দাবি করেন অ্যান্ড্রুজ। খবর প্রথম আলো।

পূর্বকোণ/মামুন/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট