চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে জাতিসংঘে প্রস্তাবনা গৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২২ জুলাই, ২০২১ | ৪:১৭ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সদস্যদের দেশটিতে ফেরত পাঠাতে প্রথমবারের মতো একটি প্রস্তাবনা গৃহীত হয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএইচআরসিতে (ইউনাইটেড নেশনস হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল)।

এর পাশাপাশি, গত প্রায় ৬ মাস ধরে মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন জান্তার বিরুদ্ধে দেশটির গণতন্ত্রপন্থি জনগণ যে টানা সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, তাকেও ‘দ্ব্যর্থহীনভাবে’ সমর্থন জানানো হয়েছে প্রস্তাবনায়।

গত ১২ জুলাই সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় এক অধিবেশনে ইউএনএইচআরসি ‘হিউম্যান রাইটস সিচুয়েশন অব রোহিঙ্গা মুসলিমস এন্ড আদার মাইনরিটিজ ইন মিয়ানমার’ বা ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ নামে একটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করে এবং এ ব্যাপারে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মতামত জানতে চায়।

১২ জুলাইয়ের অধিবেশনে এই প্রস্তাবনা উত্থাপনের পর এ বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মতামত চায় ইউএনএইচআরসি, তবে এ বিষয়ে ভোট আহ্বান করেনি সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদ।

প্রস্তাবনাটি উত্থাপনের পর একমাত্র চীন ব্যতীত বাকি ৪৬ টি সদস্যরাষ্ট্র নাগরিক হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের শর্তে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর পক্ষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।

মিয়ানমারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র চীন যদিও এই প্রস্তাবনার পক্ষে অবস্থান নেয়নি, তবে এ বিষয়টিকে ভোটের আওতায় আনার দাবি জানায়নি দেশটি।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধান এবং মিয়ানমারে সাম্প্রতিক ক্ষমতার পট পরিবর্তনের জেরে দেশটিতে গণতন্ত্রপন্থিদের চলমান বিক্ষোভের পক্ষে এর আগেও অবস্থান নিয়েছে জাতিসংঘ, কিন্তু সেই অবস্থান বক্তৃতা-বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই প্রথমবার এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা গৃহীত হলো জাতিসংঘে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা ইউএনএইচআরসির এই প্রস্তাবনাকে ‘মাইলফলক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তার বিরুদ্ধে এই প্রথম বড় কোনো পদক্ষেপ নিল জাতিসংঘ।

আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউএনএইচআরসির প্রস্তাবনায় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তাসহ ফিরিয়ে নিতে এই দেশসমূহের সরকারদের সঙ্গে গঠনমূলক ও শান্তিপূর্ণ সংলাপ শুরু করার আহ্বান জানানো হয়েছে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারকে।

এর পাশাপশি, গত ফেব্রয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতাসীন হওয়া সামরিক সরকারকে অবিলম্বে দেশটির জনগণের ওপর দমন-পীড়ণ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রস্তাবনায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে, গত প্রায় ৬ মাস ধরে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন সরকার দেশের অভ্যন্তরে যে ব্যাপক গণগ্রেফতার, হত্যা, নির্যাতন, জনগণকে শ্রমদানে বাধ্য করার মতো কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তাতে ইউএনএইচআরসি ও জাতিসংঘ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের বিষয়ে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে হত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক নির্যাতনের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত সেনা সদস্যসহ অন্যান্য যেসব ব্যক্তির যুক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদেরকে জাতীয়-আঞ্চলিক অথবা আন্তর্জাতিক- যে কোনো বিচার ব্যবস্থার আওতায় এনে বিচার শুরু করতে হবে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা সংস্থার সহযোগিতা চেয়েছে ইউএনএইচআরসি।

পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং এ সম্পর্কে মিয়ানামারের ক্ষমতাসীন সরকারের মনোভাব নিয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দূতকে আহ্বান জানিয়েছে ইউএনএইচআরসি।

উল্লেখ্য, ইউএনএইচআরসি ২০১৬ সালে গঠিত একটি আন্তরাষ্ট্রীয় সংস্থা। এর সদর দপ্তর জেনেভায় এবং বর্তমানে বিশ্বের ৪৭ টি দেশ এই সংস্থার সদস্য।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট