চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

পেগাসাস ব্যবহার করে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আড়িপাতার ঘটনা ফাঁস

অনলাইন ডেস্ক

১৯ জুলাই, ২০২১ | ৩:২৪ অপরাহ্ণ

সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, আইনজীবী ও রাজনীতিবিদদের ফোনে আইনবহির্ভূতভাবে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি সফটওয়্যার (স্পাইওয়্যার) ব্যবহার করে নজরদারি চালানোর ঘটনা ফাঁস হয়েছে। ইসরায়েলভিত্তিক গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা প্রযুক্তি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপের উদ্ভাবিত সফটওয়্যার পেগাসাস ব্যবহার করে বিশ্বের কর্তৃত্ববাদী সরকারসমূহ এই নজরদারি চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।

ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ফরবিডেন স্টোরিজ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হাতে সম্প্রতিএ সংক্রান্ত একটি ডাটাবেস পৌঁছেছে, যেখানে ৫০ হাজারেরও বেশি ফোন নম্বরের একটি তালিকা রয়েছে।

এই তালিকা হাতে পাওয়ার পর গার্ডিয়ান, দ্য অ্যায়ারসহ ১৬ টি পত্রিকাকে এই তথ্য জানায় ফরবিডেন স্টোরিজ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ।

তারপর সবাই বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে এবং এই অনুসন্ধানের নাম দেওয়া হয় পেগাসাস প্রজেক্ট।

এ সম্পর্কে এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সম্পর্শকাতর বিষয়ে সরকার নজরদারি করতেই পারে, কিন্তু এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে।’

‘আমাদের হাতে যেসব তথ্য আছে, তাতে দেখা যাচ্ছে- এখানে কোনো আইন মানা হয়নি।’

পেগাসাস কী

২০১৬ সালে ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ পেগাসাস নামে এই স্পাইওয়্যার সফটওয়্যার তৈরি করে, তবে তখন তার নাম ছিল কিউ সুইট, পরে তা পরিবর্তন করে নাম দেওয়া হয় ট্রাইডেন্ট এবং তারও পরে নামকরণ হয় পেগাসাস।

পেগাসাস হচ্ছে আইফোন কিংবা অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ঢুকে ব্যবহারকারীর মেসেজ, ছবি, ইমেইল পাচারসহ কল রেকর্ড এবং গোপনে মাইক্রোফোন চালুও রাখতে পারার যন্ত্র।

এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাইবার সিকিউরিটি ল্যাব পরিচালনাকারী ক্লডিও গুয়ারনিয়েরি গার্ডিয়ানকে বলেন, “যদি কোনো ফোনে (স্মার্টফোন) পেগাসাস সফটঅয়্যারটি ঢোকানো যায়, তবে এনএসওর গ্রাহক পুরো ফোনটির দখলই পেয়ে যাবে।

‘‘ফোনের মালিকের মেসেজ, কল, ছবি, ইমেইল সবই দেখতে পাবে, এমনকি হোয়াটসএপ, টেলিগ্রাম, সিগন্যালের বার্তাগুলোও পড়তে পারবে। গোপনে ক্যামেরা কিংবা মাইক্রোফোন চালুও করতে পারবে।”

২০১৯ সাল থেকে সীমিত পরিসরে এই সফটওয়্যার বিক্রি শুরু করে এনএসও গ্রুপ। প্রাথমিক অবস্থায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোই ছিল এর প্রধান ক্রেতা। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার বৈধ লাইসেন্সের মাধ্যমে ‘পেগাসাস’ ব্যবহার করছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, বর্তমান বিশ্বে অত্যাধুনিক স্পাইওয়্যার সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে পেগাসাসকে সবচেয়ে কার্যকর বলে মনে করা হয়।

গার্ডিয়ান তার প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ফাঁস হওয়া ডেটাবেইসে ৫০ হাজারের বেশি ফোন নম্বর পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৬ সাল থেকে এনএসওর গ্রাহকরা এদের বিষয়ে তৎপর ছিল এবং ‘পেগাসাস প্রজেক্ট’ দৃঢ়ভাবে মনে করে যে এনএসওর গ্রাহক সরকারগুলোর লক্ষ্যবস্তু ছিল ওই নম্বরগুলো।

এই নম্বরগুলোর কিছু ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষায় অর্ধেকের বেশিগুলোতে পেগাসাস সফটওয়্যারের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে গার্ডিয়ান জানিয়েছে।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে নজরদারির মুখে থাকা এই ব্যক্তিদের মধ্যে কারা কারা রয়েছে, তাদের নাম অচিরেই প্রকাশ করবে ‘পেগাসাস প্রজেক্ট’।

এই ব্যক্তিদের মধ্যে সাংবাদিক, অধিকারকর্মী, বিরোধী রাজনীতিক ছাড়াও ব্যবসায়ী, ধর্মীয় নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, এমনকি মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীর ফোন নম্বরও রয়েছে।

কোনো কোনো রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনের ফোন নম্বরও থাকার কথা জানিয়ে গার্ডিয়ান লিখেছে, ক্ষমতাবানরা তাদের স্বজনদের উপরও গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

রবিবার এই তালিকা প্রকাশ শুরুর পর ১৮০ জন সাংবাদিকের ফোন নম্বর পাওয়া গেছে, তার মধ্যে সিএনএন, রয়টার্স, নিউ ইয়রক টাইমস, এপি, ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সাংবাদিক রয়েছে।

পেগাসাসের ক্রেতা কারা?

কোন কোন দেশের সরকার পেগাসাস কিনেছে, গোপনীয়তার শর্তের অজুহাতে সে তথ্য এনএসও প্রকাশ না করলেও সিটিজেন ল্যাবের গবেষণায় অন্তত ৪৫টি দেশে পেগাসাসাস ছড়ানোর প্রমাণ মিলেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

দেশগুলো হল: আলজেরিয়া, বাহরাইন, বাংলাদেশ, ব্রাজিল, কানাডা, মিশর, ফ্রান্স, গ্রিস, ভারত, ইরাক, ইসরায়েল, আইভরি কোস্ট, জর্ডান, কাজাখস্তান, কেনিয়া, কুয়েত, কিরগিজস্তান, লাটভিয়া, লেবানন, লিবিয়া, মেক্সিকো, মরক্কো, নেদারল্যান্ডস, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন অঞ্চল, পোল্যান্ড, কাতার, রুয়ান্ডা, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইজারল্যান্ড, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, টোগো, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উগান্ডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, উজবেকিস্তান, ইয়েমেন ও জাম্বিয়া।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন