চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের একপেশে হামলা

৪৭ শিশুসহ ১৮১ ফিলিস্তিনি নিহত

পূর্বকোণ ডেস্ক

১৭ মে, ২০২১ | ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ

  • যুক্তরাষ্ট্র ন্যায়বিচারের বিপক্ষে গিয়েছে: চীন
  • ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করছে: এমনেস্টি

ফিলিস্তিনিদের উপর বর্বর ও পাশবিক আগ্রাসন চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। হামলায় এ পর্যন্ত ৪৭ শিশুসহ ১৮১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন হাজারের বেশি। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গতকাল রবিবার সকালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছেন। গেল এক সপ্তাহ ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় একদিনে এটাই সর্বোচ্চ হতাহতের সংখ্যা। হামলায় অন্তত তিনটি আবাসিক ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই হামলায় হামাস প্রধান ইয়াহিয়া আল-সিনওয়ারের বাসভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সংঘাত বন্ধে উদ্যোগ নিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং য়ি এ আহ্বান জানিয়েছেন। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের অধিকার ‘সুস্পষ্টভাবে লংঘন করার’ অভিযোগ তুলে তেল আবিবের কর্মকা-ের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজায় সামরিক আগ্রাসন বন্ধে জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতেও আহ্বান জানিয়েছেন। এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, এতদিন গাজার জনগণের সঙ্গে ইসরায়েল যা করছে তা তারা আড়াল করার চেষ্টা করেছে। বর্তমানের ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল যেভাবে বিমান ও রকেট হামলা চালাচ্ছে তাতে তারা যুদ্ধাপরাধ করছে।
ইসরায়েলে পাল্টা রকেট হামলা চালাচ্ছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাপন্থী সংগঠন হামাসও। এ সংঘাতে ইসরায়েলের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছে নিরাপত্তা পরিষদের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ ৫টি। এগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়া। এ ৫টির একটি সদস্য ভেটো দিলেই যেকোনো প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন দেওয়ায় এককভাবে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত ইস্যুতে জাতিসংঘে এরইমধ্যে মধ্যে বৈঠক হয়েছে। তবে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাকালে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং য়ি বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদ এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। কারণ যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
ফিলিস্তিনে সপ্তম দিনের মতো বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হুশিয়ার করে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, আগুন নিয়ে খেলবেন না। কাতার সফরে গিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা বার বার শত্রুদের বলেছি যাতে আল আকসা স্পর্শ না করে। আল আকসা আমাদের কিবলা, আমাদের পরিচয়, আমাদের বিশ্বাস, আমাদের বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু।
প্রসঙ্গত পবিত্র আল আকসা মসজিদ অবরোধ করে রেখেছিল ইসরায়েলি বাহিনী। মসজিদ প্রাঙ্গন ছেড়ে যেতে তাদের সময় বেঁধে দিয়েছিল হামাস। তা মেনে না নেওয়ায় ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায় রকেট হামলা করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী দল হামাস।
এদিকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের বর্বরোচিত বোমা-হামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্লিপ্ততার প্রতিবাদে ‘দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স’ (কেয়ার) হোয়াইট হাউজের ঈদের অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দেয়। ১৬ মে ঈদ-উৎসবের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হোয়াইট হাউস। ইতিমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে কর্মরত আরো দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকেও বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
এমনি অবস্থায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন শনিবার কথা বলেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে। উভয়কেই শান্ত হবার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে হামাসের হামলা থেকে নিজেদের রক্ষায় ইসরাইলের আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রতি সায় দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আল জালা টাওয়ার নামে একটি বহুতল ভবন। সেখানে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের (আল জাজিরা, এপিসহ আরো অনেক) অফিস ছিল। ইসরায়েলের দাবি, জঙ্গি সংগঠন হামাসের দফতর ছিল আল জালা টাওয়ারে।
এদিকে গাজায় আগ্রাসনের প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিবসহ বিভিন্ন এলাকায় ২ হাজারের বেশি রকেট ছুঁড়েছে ফিলিস্তিনিরা। জানা গেছে, দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলের দিকে কমপক্ষে তিনটি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। তবে এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের বর্বর ও পাশবিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে। ‘গণহত্যা’ বন্ধের দাবিতে অভিবাসী ফিলিস্তিনি, অন্যান্য আরব অভিবাসী এবং যুদ্ধবিরোধী হাজার মার্কিনি ওই বিক্ষোভে অংশ নেন।
ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ অংশগ্রহণকারীরা ফিলিস্তিনিদের পক্ষে, যুদ্ধবিরোধী বিভিন্ন ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন প্রদর্শন করেন। এরমধ্যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ছবি সংম্বলিত ‘ওয়ান্ডেট ফর জেনোসাইড’ (গণহত্যার জন্য ধরিয়ে দিন) প্ল্যাকার্ডটি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এছাড়া বিক্ষোভকারীরা ‘ওয়ার্ল্ড স্ট্যান্ড উইথ প্যালেস্টাইন’ (পৃথিবী ফিলিস্তিনের সঙ্গে আছে), ইসরায়েলি বর্বরতার ছবি সম্বলিত ‘হাউ ডু ইউ ফিল’ (আপনার কেমন লাগছে) ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড বহন করেন।
ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান লড়াই যেরকম তীব্র হয়ে উঠেছে তাতে খুব শিগগিরই এই সংঘাত একটি ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে’ রূপ নিতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট