চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব যে কারণে

তাহমিদুল ইসলাম

১৭ মে, ২০২১ | ৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ

ইসরায়েলে যারা শাসন করে তারা মূলত ইউরোপীয় ইহুদী। এদেরকে বলা হয় ‘আশকেনাজি জুইশ’। এরা ইউরোপ থেকে এসে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে গেঁড়ে বসা ইহুদী।

কিছু আরব ইহুদী আছে, যারা আগে থেকেই ফিলিস্তিনে ছিল। আর কিছু অন্যান্য আরব দেশ থেকে এসেছে। এদেরকে বলা হয় ‘মিজরাহি জুইশ’। হিস্পানিক কিছু জুইশ (ইহুদী) আছে। তবে এলিট শ্রেণি হচ্ছে-আশকেনাজি জুইশ। এরাই মূলত জার্মান আর ফ্রান্স থেকে বিতাড়িত হয়ে ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করেছে। এরা অসম্ভব উগ্র, জেনোফোবিক এবং ধনী। ইসরায়েলের এলিট শ্রেণি হচ্ছে এরা। এদের কালচারের সাথে আরব ইহুদীদের কালচার কোনোভাবেই মিলে না। ইহুদী ধর্ম অনুযায়ী মেসিয়াহ (মুসলমানদের কাছে দাজ্জাল) না আসা পর্যন্ত ইহুদীদের জন্য আলাদা দেশ গঠন করা পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ। এই কারণেই অন্যান্য দেশের অর্থোডক্স ইহুদী এবং ইহুদী ধর্মগুরুগণ ইসরায়েলের বিরোধী। কারণ এই রাষ্ট্র ইহুদী ধর্মমতেও নিষিদ্ধ।

ধর্মীয় নয়, ইহুদী জাতীয়তাবাদের দেশ ইসরায়েল : ধর্মীয় দেশ দাবি করলেও ইসরায়েল মূলত কোনো ইহুদী দেশ নয়, এটা একটা জায়োনিস্ট দেশ। সহজ ভাষায় বললে- জায়োনিজম হচ্ছে ইহুদী জাতীয়তাবাদের একটি পলিটিক্যাল টার্ম। জায়োনিস্ট হওয়ার জন্য ইহুদী হওয়া শর্ত নয়। অর্থাৎ ইহুদী নন এমন ব্যক্তিরাও জায়োনিস্ট হতে পারেন। আবার ইহুদী মানেও জায়োনিস্ট নয়। জায়োনিজমকে বাংলায় সম্ভবত ইহুদীবাদ বলা হয়। হিন্দু আর হিন্দুত্ববাদ যেমন এক নয়, অনেকটা সেরকম। ইহুদী ধর্মকে বলা হয় জুদাইজম।ইহুদীদের কালচার কোনোভাবেই মিলে না। ইহুদী ধর্ম অনুযায়ী মেসিয়াহ (মুসলমানদের কাছে দাজ্জাল) না আসা পর্যন্ত ইহুদীদের জন্য আলাদা দেশ গঠন করা পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ। এই কারণেই অন্যান্য দেশের অর্থোডক্স ইহুদী এবং ইহুদী ধর্মগুরুগণ ইসরায়েলের বিরোধী। কারণ এই রাষ্ট্র ইহুদী ধর্মমতেও নিষিদ্ধ।

ফিলিস্তিনীদের রক্তে প্রতিষ্ঠিত ইসরায়েল রাষ্ট্র : তো জায়নবাদের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে স্টেট অব ইসরায়েল জাতির পিতা থিওডর হার্তজেল। যার স্বপ্ন ছিল তার মুভমেন্টের সমর্থক ইহুদীদের জন্য আলাদা একটা দেশ হবে এবং সেটা হবে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে। তিনি আবার অবশ্য তার জীবদ্দশায় ইসরায়েল দেখে যেতে পারেনি। তবে তিনি নানাভাবে চেষ্টা করেছিলেন। ওসমানী খলিফা আব্দুল হামীদকে সে চিঠি লিখে প্রস্তাব দিয়েছিল যেন ইহুদীদের জন্য বাইতুল মোকাদ্দাসের কাছে কিছু জমি বরাদ্ধ দেয়া হয়। বিনিময়ে তুরস্কের সব ঋণ পরিশোধ করে দেয়া হবে। খলিফা এই প্রস্তাব নাকচ করে দিলে ১৯০১ সালের মে মাসে থিওডর তার ক্লোজফ্রেন্ড পোলিশ ফিলিপ নিউলিন্সকিকে দিয়ে আবার প্রস্তাব পাঠায়। এবারে খলিফার জন্য বিপুল পরিমাণ স্বর্ণসহ নানা উপহারের প্রস্তাব দেয়া হয়। উল্লেখ্য, অন্যান্য ব্যবসা এবং সুদের ব্যবসা করে ইহুদীরা অনেক আগে থেকেই প্রচুর সম্পদের মালিক। ব্যাংকিং কনসেপ্ট জিনিসটাই ইহুদীদের থেকে তাদের সুদের ব্যবসা থেকে এসেছে। এই কারণে তাদের সম্পত্তি ছিল অঢেল।
খলিফা আব্দুল হামিদ বলেছিলেন- ফিলিস্তিনের ভূমি আমার একার সম্পদ নয় যে আমি লিখে দেব। প্রতিটা মুসলমানের রক্তের ফোঁটাতে এর মালিকানা। আমি বেঁচে থাকতে সেটা হতে দিতে পারি না।
খলিফা আব্দুল হামীদ মারা গেছেন, ওসমানী খেলাফত ধ্বংস হয়েছে। খেলাফত বিলুপ্ত হয়েছে। বৃটিশরা যুদ্ধে জিতেছে। থিওডর হার্তজেল মারা গেছেন। কিন্তু তার আইডিওলজি দিনে দিনে শক্তিশালী হয়েছে। তার স্বপ্নের দেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বৃটিশরা ইউরোপ থেকে মার খাওয়া ইহুদীদের জন্য জায়গা বরাদ্ধ করে দিল ফিলিস্তিনে। থিওডরের স্বপ্নের সেই দেশ প্রতিষ্ঠিত হলো ফিলিস্তিনীদের রক্তের উপর। লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হলো। ঘরবাড়ি এবং জীবন হারালো। জায়োনিস্টদের তখন সশস্ত্র মিলিশিয়া ছিল। তারা ফিলিস্তিনীদের হত্যা করতো, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে সেই ভূমি দখল করতো এবং তারা বিশেষভাবে বৃটিশদের সহায়তা পেত।

বৈষম্যের শিকার হচ্ছে আরব ইহুদীরাও : ইহুদীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত এই ইসরায়েলেও ইহুদীরাই বৈষম্যের শিকার হয়। যারা কালো ইহুদী তারাও বৈষম্যের শিকার হয়। এ নিয়ে তারা অনেকবার রাস্তায় নেমেছে। সবচেয়ে বেশী শিকার হয় আরব ইহুদীরা। কারণ তাদের ভাষা আরবী, তাদের বেশভূষা আরব মুসলমানদের মত। আরবী বলার কারণে তাদের চাকরি হয় না, আরবদের মত পোষাক পরায় চাকরি হয় না।
ধর্মে ইহুদী হওয়ার পরও জাতিতে একই না হওয়ায় তারা নানা বৈষম্য, বুলিং এবং হেনস্থার শিকার হয়। তাদের বলা হয় আরবদের ঘৃণা করতে। যারা পূর্বে আরব দেশে ছিল, তারা অর্থাৎ বৃদ্ধরা বিষয়টা মেনে নিতে পারে না। তারা প্রতিবাদ করে। কোনো লাভ হয় না।
যারা নিজ ধর্ম ইহুদীদের সাথেই এমন করে, তারা আরব মুসলমানদের সাথে কেমন আচরণ করবে সেটা সহজেই অনুমেয়। আবার আমরা তো দেখতেও পাই।
ইসরায়েল শুরু থেকেই বৃটিশ এবং আমেরিকানদের প্রত্যক্ষ সাপোর্ট পেয়ে আসছে। আরব ইসরায়েল যুদ্ধে আমেরিকান সৈন্যরা ইসরায়েলের পক্ষে যুদ্ধ করেছে বলেও বলা হয়। এখনো যখন ইজসয়েল ফিলিস্তিনীদেরকে হত্যা করে, নারী-শিশুদেরও হত্যা করে, ধরে নিয়ে যায় এ নিয়ে জাতিসংঘ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো প্রস্তাব আনলে আমেরিকা ভেটো দেয়। সরাসরি ইসরায়েলকে রক্ষা করে। জাতিসংঘের আইন, আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার, যুদ্ধাপরাধ আইন সব কিছুই তারা নিয়মিত লংঘন করে। কিন্তু তাতে তাদের কোনো কিছুই হয় না। কারণ আমেরিকা আছে। তারা প্রকাশ্যেই ইসরায়েলকে রক্ষা করে নেয়, একদম নগ্নভাবে। ইসরায়েলের কোনো সীমানা নেই। কারণ, তারা প্রতিদিনই দখল করে চলেছে।
যেকোনো দিন ইহুদী সেটেলার এসে আপনাকে বলবে এই ঘর আমার। এরপর ইসরায়েলী পুলিশ এসে আপনাকে বের করে দেবে, পুরুষদের জেলে নিয়ে যাবে। তারপর বুলডোজার এসে আপনার ঘর গুঁড়িয়ে দেবে। এরপর সরকারী টাকায় সেখানে ইহুদীদের জন্য ঘর বানানো হবে।

অব্যাহত আগ্রাসনে উদ্বাস্তু বহু ফিলিস্তিনী : নিজেদের শত শত বছরের ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়া ফিলিস্তিনীরা এক দিনেই উদ্বাস্তু হয়ে গেল। রিফিউজি হিসেবে কোথাও আশ্রয় নিতে হবে। এভাবে তারা প্রতিদিন ঘরবাড়ি দখল করে নেয় আর ফিলিস্তিনীরা উদ্বাস্তু হয়।

ইহুদিদের জন্য নানা সুবিধা মোড়লদের : ইহুদীদের জন্য ঘরবাড়ি বানানোর জন্য যে টাকা খরচ হয়, তার জন্যও আমেরিকা থেকে সরকারী এবং বেসরকারিভাবে টাকা আসে। প্রতিবছর ইসরায়েলের জন্য প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা আসে। পশ্চিমের দেশগুলোতে ইসরায়েলিদের জন্য প্রায় ভিসা ফ্রি। নামি- দামি ইউনিভার্সিটিগুলোতে তারা স্কলারশিপ পায়। এর বাইরে আবার প্রায় সব বড় বড় কোম্পানির বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট আছে ইসরায়েলে। তারা শিক্ষাখাতে ইনভেস্ট করে, গবেষণা খাতে ইনভেস্ট করে, ট্যুরিজম খাতে ইনভেস্ট করে।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনীরা আগামীকাল পর্যন্ত তাদের বাড়িটা থাকবে কিনা জানে না। প্রাণ থাকবে কিনা সেটাও জানে না। স্কুলটা থাকবে কিনা তাও জানে না। রাত- বিরাতে এসে তল্লাশী চালিয়ে ইসরায়েলী পুলিশ যাকে- তাকে ধরে নিয়ে যায়। অল্পবয়সী শিশু হলেও কোনো রক্ষা নাই।
ফিলিস্তিনীদের সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশ ফোর্স রাখারও পারমিশন নাই। ফিলিস্তিনী সিকিউরিটি ফোর্স নামে একটা বাহিনী আছে, তাদের ভারি কোনো অস্ত্র রাখার অনুমতি নাই। ইসরায়েলের সাথে এক চুক্তিতে এটা মেনে নেয় ইয়াসির আরফাতের পিএলও। ফলে মাহমুদ আব্বাস নামের প্রেসিডেন্ট হলেও কাজে কোনো ক্ষমতা তার নাই।
ইসরায়েল দখল করতে করতে ফিলিস্তিনকে এমনভাবে দখল করেছে- একপাশে গাজা উপত্যকা, অন্যপাশে পশ্চিম তীর। মাঝখানে ইসরায়েল।

কার্যত অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনীরা : ইসরায়েলিরা পৃথিবীর ১৬০টি দেশে প্রায় ভিসা ফ্রি ঘুরতে পারলেও ফিলিস্তিনীরা এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় যেতে ইসরায়েলের অনুমতি নিতে হয়। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে যদি কেউ ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে যেতে চায়, তাহলে অনেকদিন আগে এপ্লাই করতে হয়। তাও ৯০% ক্ষেত্রে অনুমতি পাওয়া যায় না। জিজ্ঞাসাবাদে ইসরায়েল সন্তুষ্ট হলেই কেবল অনুমতি দেয়।

গাজায় হামাস পশ্চিমতীরে পিএলও : বেশীরভাগ গাজাবাসী কখনো আল আকসা মসজিদ চোখে দেখেনি। কারণ আল আকসা পশ্চিমতীরে। পিএলও (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন) আর হামাস হচ্ছে ফিলিস্তিনের দুটি রাজনৈতিক দল। হামাস সংখ্যাগরিষ্ঠ গাজাতে আর পিএলও পশ্চিম তীরে।
তবে ২০০৬ সালে পুরো ফিলিস্তিনের নির্বাচনে হামাস পিএলওর উপরে জয়লাভ করে ফিলিস্তিনের ক্ষমতায় আসে। ইসমাইল হানিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়। মাহমুদ আব্বাস প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা দখল করে নেয়।
এরপর থেকে ইসমাইল হানিয়া তার এলাকা গাজাতেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকেন।
বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়ে যাওয়ার মত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ফিলিস্তিন নিজেই তো স্বাধীন নয়।
মাহমুদ আব্বাসের পিএলও ইসরায়েলী সকল শর্ত মেনে ফিলিস্তিন তথা পশ্চিমতীরকে ডিমিলিটাইরাইজড করলেও গাজার হামাস সেটা মেনে নেয়নি।

ঢাল তলোয়ারবিহীন সিকিউরিটি ফোর্স : পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি শর্ত অনুযায়ী কোনো সেনাবাহিনী নেই। সিকিউরিটি ফোর্স আছে, যাদের নামে মাত্র একটা পুলিশ ফোর্স আছে। যেটা আছে তাদেরও শর্ত হচ্ছে ইসরায়েলী পুলিশকে সাহায্য করতে হবে। তাদের কোনো ভারী অস্ত্র নেই। হাল্কা অস্ত্র যা আছে, সেটাও ইসরায়েলের দেয়া। ওদের গাড়িও ইসরায়েলের দেয়া। যা ইসরাইল সবসময় ট্র্যাক করে।
কোনো ফিলিস্তিনীকে জোর করে বেআইনিভাবে ধরে নিয়ে গেলেও ফিলিস্তিনী সিকিউরিটি ফোর্স কিছু করতে পারে না।
এজন্য পশ্চিম তীরের যেকোনো বাড়িতে ইসরায়েলি পুলিশ চাইলে যেকোনো সময় তল্লাশি চালাতে পারে। আমরা যে পাথর ছোড়ার দৃশ্য দেখি, এগুলা বেশীরভাগই পশ্চিম তীরের। কারণ তাদের অস্ত্র রাখার অনুমতি নেই।
ইচ্ছে হলেই যে ঘরবাড়ি থেকে বের করে দিয়ে দখল করে নেয়, সেটাও পশ্চিমতীরে। কারণ পশ্চিমতীর ইসরায়েলি অকিউপ্যাশনে। এখানকার বাসিন্দারা মোটামুটি চলাচলের স্বাধীনতা পেলেও ঘরবাড়ি কখন বেদখল হয়ে যাবে বলতে পারে না। এতে ফাতাহ বা পিএলও কিছু করতে পারে না।
অন্যদিকে, হামাস শাসিত গাজা উপত্যকা ইজরায়েলের কোনো শর্ত মানে না। তাদের মিলিটারি আছে। তাদের অঞ্চলে ইসরায়েলি পুলিশ ঢুকতে পারে না। তারা নিজেরাই সেখানকার নিরাপত্তা দেয়। তাদের আর্টিলারি ইউনিট আছে। তাদের কাছে ভারি অস্ত্র আছে। যার বেশীরভাগ তারা নিজেরাই তৈরি করে। এখানে ইসরায়েলি সেটেলাররা তো দূরের কথা, ইসরায়েলি পুলিশ, ইসরায়েলী আর্মিও ঢুকতে পারে না।
ইসরায়েলের শর্ত মেনে না নেয়ায় গাজা উপত্যকাকে ইসরায়েল চারিদিক থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। গাজার দুইদিকে ইসরায়েল, একদিকে মিশর আরেকদিকে সমুদ্র।
তাদের উপর ইসরায়েল ল্যান্ড, এয়ার এন্ড সি ব্লক দিয়ে রেখেছে। গাজা উপত্যকাকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জেলখানা।
মিশর সীমান্তে আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি দেয়াল তুলে দিয়েছে। ফিলিস্তিনীদের চলাচলের জন্য মাটির নীচে সুড়ঙ্গ ছিল, সেগুলো সে বন্ধ করে দিয়েছে।
মুহাম্মদ মুরসী ক্ষমতায় আসার পর যখন মিশর সীমান্ত ফিলিস্তিনীদের জন্য খুলে দেয়, তখন ইসরায়েল মুরসীকে সবচেয়ে বড় থ্রেট হিসেবে নেয়।
ইসরায়েল, সৌদি ও আমিরাত জোট মুরসীকে হটিয়ে সিসিকে ক্ষমতায় আনে। সে সময়ে সিসিকে সবার আগে অভিনন্দন জানায় সৌদি আরব।
যদিও ইসরায়েলের উদ্দেশ্য আর তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন, লক্ষ্য ছিল একই। কপাল পুড়ে ফিলিস্তিনীদের।
এরপর থেকেই ফিলিস্তীনের জন্য সেই সীমান্ত বন্ধ হয়ে যায়। সুড়ঙ্গ পথ ব্যবহারের জন্য মিশর সীমান্তে যে ঘরবাড়ি গুলো ছিল, বুলডোজার দিয়ে সেসব বাড়িও ভেঙে দেয় মিশর।
হামাস শাসিত গাজায় শিক্ষার হার ৯৯%। ইসরায়েলি হামলায় ঘরবাড়ি ভেঙে গেলে সবার আগে তারা স্কুলগুলোকে ঠিক করে। তাদের একটা আন্তর্জাতিক মানের ইউনিভার্সিটি আছে।
গাজায় একটা বিমানবন্দর ছিল, গাজা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট নামে, যা ইসরায়েল ধ্বংস করে দেয়। পুরো ফিলিস্তিনে আর কোনো এয়ারপোর্ট নেই।
ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সাথে ইসরায়েলের ফুল স্কেলে দুইবার যুদ্ধ হয়। এতে ইসরায়েলি আর্মির ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে।
২০১৪ সালের যুদ্ধে ইসরায়েলি সেনাদের ব্যাপক প্রাণহানি ঘটলে ইসরায়েল পিছু হটে। জুলাইয়ের ৮ তারিখ থেকে আগস্টের ২৬ তারিখ পর্যন্ত স্থায়ী এই যুদ্ধে প্রায় ১শ ইসরায়েলী সেনা নিহত হয়, অপরদিকে দুই হাজার ফিলিস্তিনী শহীদ হয়। কিন্তু ইসরায়েলের জন্য এটাও ছিল বিশাল ধাক্কা।
ইরান দেয় অস্ত্র টাকা দেয় কাতার : গাজা উপত্যকায় খাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধসহ চোরাই পথে আনতে হয়। ইরান চোরাইপথে অস্ত্র আর কাতার টাকা দেয়। এর বাইরে তুরস্ক সমুদ্রসীমা আর ইসরায়েলি সীমা ব্যবহার করে জাহাজভর্তি খাবার, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য গাজায় পৌঁছে দেয়। একবার তুরস্কের একটা জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছিল ইসরায়েল।
সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরবদেশগুলো তাদের দানের একটা বড় অংশ ফিলিস্তিনে পাঠায়। তবে সেটা গাজায় নয় বরং পশ্চিমতীরে যায়।
ইসরায়েল হামাসকে বার বার বলছে- তোমরা যদি আমাদের শর্ত মেনে নাও, সেনাবাহিনী বিলুপ্ত করো, অস্ত্র সমর্পণ করো, নিরস্ত্র হও তাহলে তোমাদের অবরোধ আমরা তুলে নেব। তোমরা যেখানে চাও যেতে পারবে। আমাদের এখানে চাকরি করতে পারবে। যা কিনতে চাও, তা কিনতে পারবে।
মাহমুদ আব্বাসের পিএলও পশ্চিমতীরে এই শর্ত মেনে নিলেও ইসমাইল হানিয়া আর খালিদ মিশালের গাজা উপত্যকার হামাস সেটা মেনে নেয়নি। যার কারণে তারা অবরুদ্ধ। এই কারণে পশ্চিমতীরের ফিলিস্তিনীরা ইজরায়েলের দিকে ঢিল আর পাথর ছুঁড়লেও গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনীরা অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে, ইসরায়েলের দিকে মিসাইল ছোড়ে। যদিও ইসরায়েলী অত্যাধুনিক ডিফেন্স সিস্টেম আইরন ডোম ফিলিস্তিনীদের এই মিসাইল আকাশে থাকতেই ধ্বংস করে। তবে এবার ইসরায়েলের আইরন ডোম হামাসের মিসাইলগুলো সব আটকে দিতে সক্ষম হয়নি।
অনেকগুলো মিসাইল ইসরায়েলের নানা শহরের রাস্তা এবং ভবনে আঘাত হেনেছে। এতে ইসরায়েলসহ তার মিত্ররা বেশ অবাক হয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে ইসমাইল হানিয়ে গত বছর বলেছিলেন। আইরন ডোম কতটা আঘাত ঠেকাতে সক্ষম সেটা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। কারণ হামাসের মিসাইলগুলো কোনো অত্যাধুনিক মিসাইল নয়। এগুলো তারা পাইপ এবং অন্যান্য পরিত্যক্ত জিনিসপত্র থেকে বানায়।
এই হ্যান্ডমেইড রকেটগুলো আঘাত হানার পর আইরন ডোম কতটা সেফ সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
প্রায় চার বিলিয়ন ডলার বার্ষিক সামরিক সহায়তা, বিলিয়ন ডলারের শিক্ষা এবং রিসার্চের ইনভেস্টমেন্ট, প্রায় ভিসা ফ্রি ট্রাভেল, নামী ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ, আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের একনিষ্ঠ সাপোর্ট এত কিছু পাওয়া ইসরায়েলের সাথে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের তুলনা করার সময় আপনারা যারা ‘ইসরায়েল জ্ঞান বিজ্ঞানে কত এগিয়েছে অথচ ফিলিস্তিন জ্ঞান বিজ্ঞানে আগায় নাই কেন?’ বলেন, আপনাদের লজ্জা করে না?

(ইন্টারনেট থেকে)

শেয়ার করুন