চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাইডেনে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে বিশ্ব

ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী

২১ জানুয়ারি, ২০২১ | ৮:০২ পূর্বাহ্ণ

বিভক্তি গড়ে দিয়ে ট্রাম্প ঘরে যে বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন, বাইরেও তেমনি। অর্থাৎ, বিশ্বের প্রেক্ষাপটেও তা একই। অনেক অনিচ্ছা নিয়ে জো বাইডেনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পাশাপাশি ট্রাম্প তার হাতে তুলে দিচ্ছেন চার বছর আগের তুলনায় আরও বেশি বিপজ্জনক এক বিশ্ব।

খামখেয়ালি ট্রাম্পের কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই আর বিশ্বমোড়লের জায়গায় নেই যুক্তরাষ্ট্র। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া এই ভাঙাচোরা পররাষ্ট্রনীতিকে রাতারাতি আগের রূপে ফিরিয়ে নেওয়া বাইডেনের জন্য কঠিন হবে। সেই সঙ্গে আছে ফিলিস্তিন-ইসরাইল, ইরান, উত্তর কোরিয়া, ন্যাটো, প্যারিস চুক্তি প্রভৃতি ইস্যুতে ট্রাম্পের কারণে তৈরি হওয়া অচলাবস্থা। এসব ক্ষেত্রে চাইলেও আগ্রাসী হয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না বাইডেন। ফলে সুফল আনতে হবে আলোচনার টেবিলেই। আবার একনায়কতান্ত্রিক ও জনতুষ্টিমূলক শাসনের প্রতি ট্রাম্পের বিপুল আগ্রহ বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ফেরিওয়ালার ভূমিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ভাবমূর্তির এসব ক্ষত নিরাময় করে দেশকে স্বরূপে নিয়ে আসা তাই বাইডেনের জন্য হবে পাহাড়সম কাজ। কিন্তু তার ‘সবাইকে নিয়ে চলা’র (ট্রাম্পের একলা চলো নীতির সম্পূর্ণ বিপরীত) নীতি বিশ্বব্যাপী বেশ আগ্রহের সৃষ্টি করেছে।

গত চার বছর ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিতে আমেরিকা ও বহির্বিশ্ব অনেক কিছু নতুন করে দেখেছে। মুসলমান অভিবাসীদের প্রতি বৈরীপনা, বন্ধু রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপ্রধানদের খোলাখুলি অপমান করা, জলবায়ু পরিবর্তন নীতিতে পিছপা হয়ে যাওয়া, ট্রেড ডিল করতে গিয়ে চীনের সঙ্গে অচলাবস্থা সৃষ্টি, মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে সম্পূর্ণ বিতর্কিত অবস্থান থেকে ইউএস এম্বেসি তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করাসহ আরও অনেক কিছু ট্রাম্পের নেতৃত্বে সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছিল।
করোনা মহামারীর সময় আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর নেতৃত্ব অনেক গুরুত্ব বহন করছে এবং করবে। এই ক্রান্তিকালে যেখানে ট্রাম্পের নেতৃত্ব আমেরিকার জন্যই যথেষ্ট বিবেচিত হয়নি, সেখানে সেই নেতৃত্ব বহির্বিশ্বের জন্যও মূর্তিমান আতংকের হয়েছে অবশ্যম্ভাবীরূপে। মিত্ররাও অনেক ক্ষেত্রেই আমেরিকাকে দেখতে শুরু করেছিল ‘সন্দেহে’র দৃষ্টিতে। তবে বাইডেনে সেই সন্দেহ দূর হবে এমন আশা মিত্ররা করছে।
দু’-একটি উদাহরণ দেয়া যায় এই ‘আস্থা’র। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বরাবর ট্রাম্পের সাথে তাল মিলিয়ে চলেছেন বটে, তবে বাইডেনের বিজয়ের প্রথম সম্ভাষনটি তিনিই জানিয়েছেন। এ তালিকা অনেক লম্বা- জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল, আয়ারল্যান্ড, সুইডেন ও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীরা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাটো, জাতিসংঘসহ আরো অনেক দেশ ও বিশ্বসংস্থা বাইডেনের সাথে তাদের পারস্পরিক কাজের সমন্বয়সাধন সহজ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, জো বাইডেনকে সফল রাষ্ট্রনায়ক হতে হলে ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির নেতিবাচক দিকগুলো ঝেড়ে ফেলতে হবে। বৈশি^ক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে আরও কৌশলী ভূমিকা নিতে হবে। ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের সাবলীল ভাবমূর্তিই এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভীষণ দরকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট